দফতরে গিয়ে বামেদের ফুল ‘মুখোশ’ অটলকে

একই ভাবে মতাদর্শের বিভেদ ভুলে শুক্রবার বাজপেয়ীকে শ্রদ্ধা জানাতে দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে হাজির হলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সঙ্গে পলিটবুরোর দুই সদস্য নীলোৎপল বসু ও তপন সেন। বিজেপি দফতরে আগে কখনও যায়নি সিপিএম। বাজপেয়ীর মৃত্যু সেই ছোঁয়াছুঁয়ির বাধা ভেঙে দিল।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৫৪
Share:

সীতারাম ইয়েচুরি।ফাইল চিত্র।

সবে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেছেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। ১৯৯৮-এর মার্চ। উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে লালকৃষ্ণ আডবাণীর উপর দায়িত্ব পড়ল, তাঁকে তিরুঅনন্তপুরম যেতে হবে। ইএমএস নাম্বুদিরিপাদের শেষকৃত্যে যোগ দিতে।

Advertisement

আডবাণীকে বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতার অন্ত্যেষ্টিতে পাঠিয়ে, প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী রওনা হলেন দিল্লির গোল মার্কেটে এ কে গোপালন ভবনের দিকে। সিপিএমের সদর দফতরে গিয়ে শ্রদ্ধা জানালেন কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, ১৪ বছর মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা ইএমএস-কে। শিকেয় তোলা রইল মতাদর্শের ব্যবধান।

এর পর বিশ বছর পার। একই ভাবে মতাদর্শের বিভেদ ভুলে শুক্রবার বাজপেয়ীকে শ্রদ্ধা জানাতে দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে হাজির হলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সঙ্গে পলিটবুরোর দুই সদস্য নীলোৎপল বসু ও তপন সেন। বিজেপি দফতরে আগে কখনও যায়নি সিপিএম। বাজপেয়ীর মৃত্যু সেই ছোঁয়াছুঁয়ির বাধা ভেঙে দিল।

Advertisement

সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘বাজপেয়ীর স্বভাব, ভদ্রতা এবং সবাইকে নিয়ে চলার ইচ্ছে তাঁকে সকলের থেকে আলাদা করে রেখেছে।’’

রাজ্যসভায় বাজপেয়ীর সঙ্গে বাগ্‌যুদ্ধের স্মৃতি হাতড়ে নীলোৎপল বসু বলেন, ‘‘ওঁকে প্রশ্ন করেছিলাম— গুজরাতে আগুন জ্বলছে, আপনি নিজে গেলেন না কেন? উনি জবাব দিলেন— ‘ম্যায় জানা চাহতা থা, লেকিন’! বলে থেমে গেলেন। ওই নীরবতাটাই পরের দিন হেডলাইন হয়ে গেল।’’

প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বাম নেতারা বাজপেয়ীকে আরএসএস-এর মুখোশ বলে নিশানা করতেন। বলতেন, বাজপেয়ী মুখোশেই নিজেদের কট্টর মৌলবাদী মুখটা আড়াল করার চেষ্টা করে সঙ্ঘ পরিবার ও বিজেপি। সিপিএমের নেতারা বিজেপির ছোঁয়া বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করলেও, বাজপেয়ী নিজে তা করেননি। বরং কৌশলে বাম নেতাদের সাহায্যও নিয়েছেন। আজ বাজপেয়ীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বিজেপি দফতরে গিয়েছিলেন সিপিআই নেতা ডি রাজা ও অতুল অঞ্জন। রাজা মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘আমেরিকা যখন ইরাক আক্রমণ করে, ওয়াশিংটন চেয়েছিল, ভারতও সেনা পাঠাক। বাজপেয়ী সিপিএমের হরকিষেণ সিংহ সুরজিত এব‌ং সিপিআই-এর এ বি বর্ধনকে আলোচনায় ডাকেন। বামেরা আগে থেকেই ইরাকে সেনা পাঠানোর বিরোধিতা করছিল। বাজপেয়ী ওঁদের বলেন— ‘যাও, বাহার যা কে জোরসে বোলো’। বামেরা রাস্তায় নামেন, সংসদে শোরগোল করেন। এর পরেই সংসদে প্রস্তাব পাশ হয়— ভারত ইরাকে সেনা পাঠাবে না।’’

ইয়েচুরির কথায়, এখানেই বাজপেয়ীর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী জমানার ফারাক। তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ফারাকের আঁচ ব্যক্তিগত সম্পর্কে পড়তে না-দেওয়াটাই বৈশিষ্ট্য ছিল অটলজির। এই সরকারের মাথাদের সঙ্গে এখানেই তাঁর ফারাক। বিরোধী নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক রক্ষা করাটা আজ হয় না। এ কারণেই বাজপেয়ী বহু মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন