জওয়ান, জঙ্গি আতঙ্কে পলামুর গ্রাম

মোটরসাইকেলে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরছিলেন বছর তিরিশের যুবক। সূর্য তখন মাথার ঠিক উপরে। পাহাড়ি রাস্তা ধরে গ্রামে পৌঁছতেই রাস্তা আটকালেন দুই সিআরপি জওয়ান। পরিচয় জেনে সরলেন তাঁরা। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কৌতূহলী সাংবাদিককে যুবক বললেন, ‘‘ভাগ্যিস দিনের আলো রয়েছে। সন্ধে হয়ে গেলে মাওবাদী ভেবে গুলিও চালিয়ে দিতে পারত ওঁরা!’’

Advertisement

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৫ ০৩:৩৬
Share:

মোটরসাইকেলে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরছিলেন বছর তিরিশের যুবক। সূর্য তখন মাথার ঠিক উপরে। পাহাড়ি রাস্তা ধরে গ্রামে পৌঁছতেই রাস্তা আটকালেন দুই সিআরপি জওয়ান। পরিচয় জেনে সরলেন তাঁরা। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কৌতূহলী সাংবাদিককে যুবক বললেন, ‘‘ভাগ্যিস দিনের আলো রয়েছে। সন্ধে হয়ে গেলে মাওবাদী ভেবে গুলিও চালিয়ে দিতে পারত ওঁরা!’’

Advertisement

এক দিকে জঙ্গি, অন্য দিকে যৌথ বাহিনী— দু’য়ের আতঙ্কে এ ভাবেই দিন কাটাচ্ছে লাতেহার, পলামু, গুমলার প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারা। সম্প্রতি পলামুর জঙ্গলে সিআরপি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ১২ জনের মৃত্যুর পর আতঙ্ক কয়েক গুণ বেড়েছে। সাতবেরিয়া ব্লকের যে জঙ্গলঘেঁষা জমিতে জওয়ানদের সঙ্গে জঙ্গিদের সংঘর্ষ হয়, তার একেবারে লাগোয়া ভালওয়াহি গ্রাম। মোটরসাইকেল আরোহী ওই যুবকের শ্বশুরবাড়ি সেখানেই। শুধু ভালওয়াহি নয়, আশপাশে ছোট ছোট টিলা, জঙ্গলে ঘেরা চারওয়াহি, তেওরাহি গ্রামের ছবিও একই রকম। গ্রামে ঢুকেই কানাঘুষো শোনা গেল— সিপিআই (মাওবাদী) জঙ্গিরাই শুধু নয়, ঝাড়খণ্ড জনমুক্তি পরিষদের মতো মাওবাদী-বিরোধী গোষ্ঠীর সদস্যদের আতঙ্কও সেখানে রয়েছে। আতঙ্ক রয়েছে যৌথ বাহিনীকে ঘিরেও।

ভালওয়াহি গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে কথা হল কয়েক জন বাসিন্দার সঙ্গে। চাষবাসই মূল জীবিকা তাঁদের। জীর্ণ কুঁড়েঘরের সামনে দাঁড়ানো এক যুবককে প্রশ্ন করতেই তিনি বললেন, ‘‘দয়া করে চলে যান। আপনারা অচেনা লোক। আপনাদের সঙ্গে কী কথা হচ্ছিল তার জবাবদিহি করতে না পারলে মার খেতে হবে। মাওবাদীদের কাছে ঠিক খবর যাবে যে গ্রামে অচেনা লোক ঢুকেছিল। এক দিকে মাওবাদী, অন্য দিকে সিআরপি জওয়ান— প্রশ্ন করবে দু’পক্ষই।’’

Advertisement

একটু নজর ঘোরাতেই দেখা গেল, গ্রামের লাগোয়া টিলার গাছের আড়াল থেকে অতিথিদের উপর নজর রাখছেন এক জওয়ান। ওই যুবক বললেন, ‘‘আপনারা চলে গেলেই ওঁরা আসবে। আপনারা নিজেদের পরিচয়পত্র দিয়ে যাবেন। ওঁরা এলে দেখাতে পারব।’’ রঘু ওঁরাও নামে এক গ্রামবাসী বললেন, ‘‘জামাই এসেছিল। ওঁকে দুপুরের খাবারও দিতে পারলাম না। অন্ধকার নামলে মাঝরাস্তায় মাওবাদী আর নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের মধ্যে পড়লে কী যে হবে!’’

পলামুতে জঙ্গি-জওয়ান সংঘর্ষে ১২ জনের মৃত্যুর পর পরই লাতেহারের চৈনপুরে দু’পক্ষের গুলির লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে ক্রিস্টোফার গিদ নামে এক গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়। দুপুরে বাড়ির কুয়োর জলে স্নান করছিলেন ক্রিস্টোফার। শুরু হয় সংঘর্ষ। গুলি লাগে ক্রিস্টোফারের বুকে। ঘটনাস্থলেই বছর চল্লিশের ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।

পাহাড়, জঙ্গলে ঘেরা মাওবাদী-অধ্যুষিত গ্রামগুলির বুকে এ সবে আতঙ্ক যেন চেপে বসেছে। বাড়ির বাইরে বেরতেও ভয় পাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। পরিস্থিতি কবে বদলাবে এখন তারই উত্তর খুঁজছেন সকলে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement