Refugees In Mizoram

শরণার্থী শিশুদের বন্ধু শিব গোপাল

মণিপুরে সংঘর্ষের জেরে প্রায় ১৩ হাজার কুকি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন মিজ়োরামে। তাঁদের মধ্যে ৪৩০০ জন আছেন কলাশিব জেলায়।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৩ ০৬:৪৮
Share:

মণিপুরের দশ হাজারেরও বেশি শিশু-কিশোরের দিন কাটছে আশ্রয় ও ত্রাণশিবিরে। সঙ্গে শিব গোপাল। —নিজস্ব চিত্র।

অন্তরের টান খাঁটি হলে ভাষার সাধ্য কি দেওয়াল গড়ে! অন্ধ্রের যুবকের সঙ্গে কুকি বাচ্চাদের খুনসুটি দেখলেই মালুম হয়।

Advertisement

দায় তাঁর নয়, কিন্তু দায়িত্ব এড়াতে পারছেন না মিজ়োরামে নিযুক্ত যুবক আমলা। বিশেষত যখন দেখছেন চোখের সামনে বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। তাই শিব গোপাল স্যার কখনও ছুটছেন সরকারি স্কুলে বাচ্চা ভর্তির ব্যবস্থা করতে, কখনও তিনি ব্যস্ত ত্রাণ শিবিরের শিশুদের মন থেকে আতঙ্ক দূর করে হাসি ফোটাতে।

মণিপুরে সংঘর্ষের জেরে প্রায় ১৩ হাজার কুকি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন মিজ়োরামে। তাঁদের মধ্যে ৪৩০০ জন আছেন কলাশিব জেলায়। সেখানকার কাংপুই মহকুমায় ৮টি শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ৮০৮ জন। ২০২০ সালের আইএএস শিব গোপাল রেড্ডি চিমালা এখন কাংপুইয়ের এসডিও (সিভিল)। তাঁর কাজে যোগদানের পর থেকেই মিজ়োরামে মায়ানমার থেকে শরণার্থীর ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে। মায়ানমারের ৩৫ হাজার, মিজ়োরামে ১৩ হাজার ও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে আসা শরণার্থী মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার শরণার্থীর ভরণপোষণের ভার এখন ছোট্ট রাজ্যের কাঁধে।

Advertisement

অন্ধ্রের যুবকের সঙ্গে কুকি বাচ্চাদের খুনসুটি। —নিজস্ব চিত্র।

কাংপুইতে আশ্রয় শিবিরে গিয়ে বাচ্চাদের অবস্থা থেকে চমকে ওঠেন শিব গোপাল। ভাবেন, বড়দের মারামারি, রাজনীতির শিকার হয়ে কেন ছোটরা তাদের শৈশব হারাবে! তিনি জানান, শিবিরের বাচ্চারা স্থানীয় ভাষায় সড়গড় ছিল না। চোখের সামনে রক্তপাত, সংঘর্ষ, নিজেদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ দেখে এসেছে তারা। অনেকে তাদের সর্বস্ব খুইয়েছে। স্বচ্ছল পরিবারে খেলনা নিয়ে খেলতে খেলতে হঠাৎ করেই নিঃস্ব, অনাহারে জর্জরিত, অসহায় হয়ে পড়া শিশুদের শরীরের পাশাপাশি মন ভাল করাটাও ছিল দরকারি কাজ। তাদের মনে বাসা বাঁধা ত্রাস, সন্দেহ, ভয় কাটাতে দরকার ছিল কাউন্সেলিংয়ের। কিন্তু জেলায় শিশুমন বিশেষজ্ঞের অভাব। তাই আইআইটি প্রাক্তনী, অন্ধ্রের কাডাপা জেলার বাসিন্দা তরুণ শিব সব শরণার্থী শিবিরে নিয়ম করে ঘুরে বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা ও কথা বলা শুরু করেন।

তাঁর কথায়, “প্রথমেই চেষ্টা করি হালকা কথায় ওদের মন থেকে আতঙ্ক কাটাতে। বুঝতে পারি স্বাভাবিক হতে হলে ওদের দরকার স্বাভাবিক পরিবেশ। তার জন্য দরকার স্কুলে ফেরা। তাই আশপাশের সব স্কুলে গিয়ে আর্জি জানাই যদি কোনওরকম নথিপত্র ছাড়াই তাদের ভর্তি করতে রাজি হন প্রধান শিক্ষক। সবাই রাজি হন। আরও অনুরোধ করি, যদি ওরা পড়ায় মন না দিতে পারে, যেন জোর দেওয়া না হয়। ওরা যা খুশি করুক, কিন্তু সময়টা স্কুলেই কাটাক।” শিবের উদ্যোগে শিবিরবাসী শিশুদের বই-খাতা-রং পেনসিলও কিনে দেওয়া হয়। ধীরে ফল ফলছে। হাসি ফুটেছে গোমড়া মুখগুলোয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন