বেঙ্গালুরুর স্কুলে ধর্ষিত ছ’বছরের ছাত্রী, রিপোর্ট তলব করল কেন্দ্র

ক্লাস ওয়ানের মেয়েটিকে স্কুলের মধ্যেই ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। দিন দুয়েক আগে জানাজানি হওয়া সেই ঘটনার জেরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিলই। অভিভাবকদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল আজ। একাধিক সূত্রের খবর, বেঙ্গালুরুর বেশ কয়েকটি স্কুল ইতিমধ্যে অভিভাবকদের কাছে একটি ফর্ম সই করতে পাঠায়। যার মোদ্দা কথা ‘পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিয়ে স্কুলের কোনও দায় নেই।’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩১
Share:

ক্লাস ওয়ানের মেয়েটিকে স্কুলের মধ্যেই ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। দিন দুয়েক আগে জানাজানি হওয়া সেই ঘটনার জেরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিলই। অভিভাবকদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল আজ। একাধিক সূত্রের খবর, বেঙ্গালুরুর বেশ কয়েকটি স্কুল ইতিমধ্যে অভিভাবকদের কাছে একটি ফর্ম সই করতে পাঠায়। যার মোদ্দা কথা ‘পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিয়ে স্কুলের কোনও দায় নেই।’

Advertisement

আজ কয়েকশো অভিভাবকের ভিড় আছড়ে পড়ে ওই ছাত্রীর স্কুলটির গেটে। তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন তাঁরা। হাজির হয় বিশাল পুলিশবাহিনী। দিনভর তোলপাড়ের পর কর্নাটক সরকারের কাছে ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক।

অভিভাবকদের দাবি, অভিযুক্তরা স্কুলেরই কর্মী। অথচ স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেননি। তবে পুলিশ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত জড়িত সন্দেহে তিন জনকে আটক করা হয়েছে। একটি সূত্রের দাবি, আটক তিন জনের মধ্যে স্কুলের ক্রীড়াশিক্ষক এবং জিমের প্রশিক্ষক রয়েছেন। আবার অন্য একটি সূত্রের বক্তব্য, ধৃতেরা দু’জনেই জিমের প্রশিক্ষক। প্রাথমিক খবরে জানা যাচ্ছে, ঘটনাটি ঘটে ২ জুলাই। পুলিশ জানিয়েছে, ছ’ বছরের ছাত্রীটি সে দিন শৌচাগারে যাবে বলে ক্লাস থেকে বেরিয়েছিল। সে সময়ই তাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালানো হয় মা-বাবা অবশ্য জানতে পারেন বেশ কয়েক দিন পর। গত সোমবার দুপুর একটা নাগাদ মেয়ে স্কুল থেকে ফিরলে মা দেখেন, সে খুব ভয় পেয়ে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত মেয়েটি জানায়, স্কুলের এক ‘কাকু’ তার ওপর অত্যাচার করেছে। এর পরেই পুলিশের দ্বারস্থ হন বাবা-মা।

Advertisement

ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে আসে ওই বিতর্কিত ফর্মের কথা। ওই মেয়েটির স্কুলেও সেই ফর্ম দেওয়া হয়েছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে কিছু দিন আগেই পারিবারিক বিবাদের জেরে অন্য একটি স্কুল থেকে একটি বাচ্চাকে নিয়ে গিয়ে খুন করেছিল এক মহিলা। অনেকের মতে, এই ফর্মের কথা জানাজানি হতেই আগুনে ঘি পড়ে। ফর্মটির বয়ান ছিল অনেকটা এ রকম ‘শিক্ষামূলক ভ্রমণ কিংবা ক্যাম্পে গিয়ে পড়ুয়ারা আহত হলে, কিংবা তাদের কোনও সম্পত্তিহানি এমনকী প্রাণহানি ঘটলেও স্কুলের কর্মী বা শিক্ষকদের দায়ী করা যাবে না।’

যদিও মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক আজ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘তথ্যের অধিকার আইন এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের নির্দেশাবলিতেই রয়েছে, স্কুলের মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব স্কুলেরই। এই স্কুলটি কেন তা করতে ব্যর্থ হল, কর্নাটক সরকারের কাছে সেটাই জানতে চাওয়া হয়েছে।’ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। বিষয়টি নিয়ে তিনি আজ স্কুলশিক্ষা সচিব রাজর্ষি ভট্টাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। যৌন নিগ্রহ থেকে শিশুদের রক্ষা সংক্রান্ত আইনে (পসকো) স্কুলটির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে কর্নাটকের নারী ও শিশুকল্যাণ বিভাগ।

বস্তুত, ধর্ষণের মতো অভিযোগের পরেও এই ছাত্রীটির স্কুল চূড়ান্ত গা ছাড়া মনোভাব দেখাচ্ছে বলে অভিভাবকদের দাবি। এমনকী ঘটনা ধাপাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগও তুলেছেন কেউ কেউ। আজ কয়েক ঘণ্টা বিক্ষোভের পর বেরিয়ে আসেন স্কুলের চেয়ারম্যান রুস্তম কেরাওয়ালা। পড়ুয়াদের নিরাপত্তা আরও বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, “এর পর থেকে ভাল করে খোঁজ খবর নিয়ে তবেই কাজে নিয়োগ করা হবে। যে-ই দোষী হোক, তার ফাঁসি হওয়া উচিত। পুলিশকে সিসিটিভি ফুটেজ দেওয়া হয়েছে।” কিন্তু তিনি কেন এখনও মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে দেখা করেননি? চেয়ারম্যান বলেন, “নিশ্চয়ই দেখা করব। আগে তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি।” শুক্রবার থেকে স্কুল খুলে দেওয়ার ঘোষণাও করেন তিনি। যদিও অভিভাবকরা তাতে সন্তুষ্ট হননি। এক মহিলা বলেন, “আমার বাচ্চাটা ক্লাস ওয়ানে পড়ে। বুঝতে পারছি না, কাল থেকে ওকে স্কুলে পাঠানো নিরাপদ হবে কি না!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement