চেন্নাইয়ের পাশে চেন্নাই।
ভারী বর্ষণে বন্যাবিধ্বস্ত শহরে এখন বিপন্নদের কাছে ত্রাণ পৌঁছনোটাই দাঁড়িয়ে প্রশ্নচিহ্নের মুখে। রাস্তাঘাট জলের তলায়, বিপর্যস্ত জনজীবন, যাবতীয় পরিষেবাও। এই পরিস্থিতিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন চেন্নাইয়ের বাসিন্দারাই। তুলনায় নিরাপদ অবস্থায় থাকা শহরবাসী এসে দাঁড়াচ্ছেন আটকে পড়া সহ-নাগরিকদের পাশে। সৌজন্যে বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট।
কেউ আশ্রয় দিতে চান বন্যা দুর্গতদের। কেউ বা খাবারের ব্যবস্থা করতে চান তাঁদের জন্য। কেউ বা জানাতে চান, তাঁর বাড়িতে খাবার, জল, আশ্রয়ের পাশাপাশি বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেটের সুযোগসুবিধাও মিলবে। বিপদগ্রস্তদের কাছে সেই আশ্বাসবাণী পৌঁছে দিতেই টুইটার, ফেসবুক ছেয়ে যাওয়া একের পর এক পোস্টে চেন্নাইয়ের নিরাপদ বাসিন্দারা লিখে রাখছেন, তাঁদের বাড়িতে ক’জনকে রাখা সম্ভব, কতটা খাবারের ব্যবস্থা করতে পারছেন তাঁরা কিংবা কী কী আপৎকালীন ব্যবস্থা রয়েছে তাঁদের আয়ত্তে। জানিয়ে দিচ্ছেন, পোষ্যদের জন্য নির্দিষ্ট ব্যবস্থার কথাও। প্রতিটি পোস্টে দেওয়া থাকছে ঠিকানা-ফোন নম্বর, যাতে দুর্গতরা সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন তাঁদের সঙ্গে।
গোটা প্রক্রিয়াটাকে আরও সহজ করে তোলার চেষ্টায় তৈরি হয়ে গিয়েছে #চেন্নাইফ্লাডস, #চেন্নাইমাইক্রো-র মতো হ্যাশট্যাগ। সকলকে সেই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করতেও অনুরোধ করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতেই। যাতে শুধু হ্যাশট্যাগ খুললেই যাবতীয় সাহায্যের বার্তা একসঙ্গেই দেখতে পান দুর্গতরা। তৈরি হয়েছে গুগ্ল স্প্রেডশিটও। মঙ্গলবার রাত থেকেই টুইটার, ফেসবুকে দেদার রিটুইট এবং শেয়ার হচ্ছে সেই সব পোস্ট।
আশ্রয় এবং খাবারের ব্যবস্থা করতে তৈরি করা হয়েছে www.chennairains.org নামে একটি আপৎকালীন ওয়েবসাইটও। যাতে যাবতীয় তথ্যের পাশাপাশি সাহায্যের হাত বাড়াতে চাওয়া মানুষদের এই সংক্রান্ত গুগ্ল স্প্রেডশিটে নাম লেখানোর অনুরোধও করা হয়েছে।
নিজের বাড়িতে দু’জনকে রাখার ব্যবস্থা করতে চেয়ে টুইটারে পোস্ট করেছেন তিরুবনমিয়ুর আরটিও-র বাসিন্দা পুষ্পরাজ বৃত্ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ধরনের পোস্ট দেখেই তাঁর এই উদ্যোগ জানিয়ে পুষ্পরাজ বলেন, ‘‘এমন বিপদের সময়ে পাশে না দাঁড়ালে কীসের মানুষ আমরা? রাস্তাঘাটের যা অবস্থা, তাতে নিজে সশরীরে পৌঁছতে পারছি না। অন্তত নিজের বাড়ির দরজাটুকু খুলে দিই দুর্গতদের জন্য।’’ মুম্বইয়ের বন্যা এবং জঙ্গিহানার সাক্ষী থাকা, অধুনা চেন্নাইয়ের বাসিন্দা অম্বা সালেলকরের পোস্টে লেখা— তাঁর বেসন্তনগরের বাড়িতে তিন জনের জন্য আশ্রয়, খাবার, জল, বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট পরিষেবার ব্যবস্থা মিলবে। ব্যবস্থা রয়েছে পোষ্য বিড়ালের জন্যও। এ ছাড়া, দুর্গতদের জন্য যাঁরা খাবারের প্যাকেট সংগ্রহ করছেন, তাঁরাও যেমন আবেদন জানাচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়াতেই, তেমনই তাঁদের যোগাযোগ করতে চেয়েও পোস্ট রয়েছে অসংখ্য।
সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরেই চেন্নাইয়ের পাশে অন্য শহরের বাসিন্দারাও। দুর্গতরা তাঁদের মোবাইল নম্বর এবং পরিষেবা সংস্থার নাম জানালে রিচার্জ করে দেওয়ার আশ্বাসও মিলেছে অনেকের টুইট বা পোস্টে।
বন্ধুর পাশে বন্ধু।