Sohan D Shira

গুলিতে হত গারো পাহাড়ের ত্রাস সোহন ডি শিরা

দীর্ঘ দিন থেকেই তার সন্ধানে অভিযান চালাচ্ছিল পুলিশ, সেনা ও আধা সেনা। কিন্তু কম্যান্ডোদের হাত ফসকে প্রতি বারই পালিয়েছে সোহন। গারো পাহাড়ের গ্রামগুলিতে তার গুপ্তচর নেটওয়ার্ক ছিল খুবই ছড়ানো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ২০:০৩
Share:

সোহন ডি শিরা। ফাইল চিত্র।

নির্বাচনের তিন দিন বাকি থাকতে গারো পাহাড় তথা মেঘালয়ের মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি নেতা, জিএনএলএর প্রধান সোহন ডি শিরাকে হত্যা করল পুলিশ। শনিবার বেলা ১২টা নাগাদ মেঘালয়ের এসএফ-১০ কম্যান্ডো বাহিনী ও গারো হিল পুলিশের যৌথ বাহিনী ডোবু আচেনবক এলাকায় সোহনকে হত্যা করে বলে জানানো হয়।

Advertisement

দীর্ঘ দিন থেকেই তার সন্ধানে অভিযান চালাচ্ছিল পুলিশ, সেনা ও আধা সেনা। কিন্তু কম্যান্ডোদের হাত ফসকে প্রতি বারই পালিয়েছে সোহন। গারো পাহাড়ের গ্রামগুলিতে তার গুপ্তচর নেটওয়ার্ক ছিল খুবই ছড়ানো। তাই পুলিশ আসার আগেই সোহন জানতে পারত। দিন কয়েক আগেই শোনা গিয়েছিল সোহনের ডেরায় হানা দিয়ে পুলিশ তাকে ধরেছে। কিন্তু সেই খবর স্বীকার করেনি পুলিশ। সম্প্রতি উইলিয়ামনগরের সামান্দায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এনসিপি প্রার্থী জোনাথন সাংমা ও সোহনের এক সময়ের ডান হাত, আত্মসমর্পণকারী জঙ্গি বাইচুং মোমিনকে হত্যা করা হয়। পুলিশের দাবি ছিল সোহনই তা করিয়েছে। তার পরেই সোহনকে ধরতে ব্যাপক অভিযান শুরু হয়।

পুলিশ জানায়, গত রাতে খবর আসে, আলফা কম্যান্ডার দৃষ্টি রাজখোয়া ও সোহন বিলওয়াটগ্রে গ্রামের কাছে ঘাঁটি গেড়েছে। রাতভর ট্রেক করার পরে আজ সকালে জওয়ানরা ডোবু আচেনবক এলাকায় পৌঁছলে জঙ্গিরা গুলি চালাতে থাকে। জওয়ানরাও পাল্টা গুলি চালান। গুলির লড়াই থামলে জঙ্গি ঘাঁটিতে তল্লাশি করে সোহনের দেহ, তার এইচকে-৩৩ রাইফেল, ল্যাপটপ মেলে। কিন্তু দৃষ্টি রাজখোয়া ও অন্য জঙ্গিরা পালায়। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: বাবা মারধর করে! থানায় অভিযোগ ১১ বছরের ছেলের

২০০৯ সালে বিদ্রোহী ডিএসপি পাকচারা আর সাংমা ওরফে চ্যাম্পিয়ন জিএনএলএ তৈরি করে। উদ্দেশ্য ছিল স্বশাসিত গারোল্যান্ড গঠন। তাঁদের মূল ঘাঁটি ছিল বাংলাদেশ। ২০১২ সালে বাংলাদেশ থেকে ধরা পড়ে চ্যাম্পিয়ন। তার পর থেকে সে শিলংয়ে কারাবন্দি। সেনাধ্যক্ষ সোহন একাই দল চালাচ্ছিল। গত ৯ বছরে মেঘালয়ে সবচেয়ে বেশি হত্যা, অপহরণের ঘটনায় অভিযুক্ত ছিল জিএনএলএ। তাদের আক্রমণে অনেক নিরাপত্তাকর্মীরও মৃত্যু হয়েছে। পছন্দের জার্মান হেকলার অ্যান্ড কোচ এইচকে-৩৩ অ্যাসল্ট রাইফেল ছিল ওই দোর্দণ্ডপ্রতাপ জঙ্গিনেতার সর্বক্ষণের সঙ্গী। পুলিশের ব্যর্থতার কাটা ঘায়ে নুন ছিটিয়ে প্রায়ই জঙ্গলের গোপন ঘাঁটি থেকে নিজের ও সহযোদ্ধাদের সশস্ত্র ছবি ও ভিডিও সাংবাদিকদের পাঠাত সোহন। তার প্রচার সচিব ফেসবুকেও ঘাঁটির ছবি আপলোড করত। তবুও পুলিশ তাদের ধরতে পারত না। গারো পাহাড়ে সোহনই ছিল আলফ স্বাধীন নেতাদের আশ্রয়দাতা। আলফার থেকে বিস্ফোরক তৈরির কৌশল শিখত জিএনএলএ।

আরও পড়ুন: বিয়ের উপহারে বাক্সবোমা, বরের মৃত্যু, জখম নববধূ

কিন্তু সোহনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে জিএনএলএ ও স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলি সন্দেহ প্রকাশ করেছে। গত বারের ভোটে জিএনএলএকে কাজে লাগিয়ে উইলিয়ানগরে জিতেছিলেন কংগ্রেসের প্রার্থী তথা মন্ত্রী দেবোরা সি মারাক। এমনটাই অভিযোগ তুলেছিলেন জঙ্গি হানায় হত জোনাথন। পুলিশ দেবোরার নামে চার্জশিটও দেয়। ২০১৬ সালে আত্মসমর্পণ করা সোহনের বিশ্বস্ত সঙ্গী ও বহু নাশকতায় অভিযুক্ত বাইচুংকে কাজে লাগিয়ে পুলিশ জিএনএলএর ঘাঁটি ধ্বংস শুরু করলেও, যে ভাবে দেবোরা জামিন পাওয়ার দিনেই বাইচুং ও জোনাথনকে মারা হল— তা নিয়ে এনসিপি দলে সন্দেহ তুঙ্গে। পাশাপাশি, জিএনএলএ সংগঠন সূত্রে বলা হয়, বাইচুং কংগ্রেস-জিএনএলএ আঁতাঁতের অনেক কিছুই জানত। সে এনসিপি প্রার্থীর হয়ে মাঠে নামায় তাকে সরতে হল। একই সঙ্গে জোনাথন ও বাইচুং-সহ পাঁচ জনকে বিস্ফোরণে মৃত্যুর ঘটনার দায়ও সোহনের উপরে চাপিয়ে তাকে আগে থেকে ধরে রেখে আজ ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে বলেও জিএনএলএ ও বিভিন্ন সংগঠন দাবি তুলেছে। সোহন ঘনিষ্ঠদের মতে, সেনাধ্যক্ষ সোহনকে ঘিরে থাকত সংগঠনের সেরা যোদ্ধারা। আগে প্রতি বারই তাকে ধরতে গিয়ে বিফল হয়েছে পুলিশ। তাই, তাকে মারতে গেলে যে ধরনের গুলির লড়াই হওয়ার কথা ও একাধিক জঙ্গি মারা পড়ার কথা— তা এ দিন হয়নি। সম্ভবত ফাঁদে ফেলে তাকে ধরে, সময় বুঝে হত্যা করা হল। জিএনএলএর ওভারগ্রাউন্ড কর্মীদের দাবি, সোহনের মৃতদেহের ছবিতে যে ভাবে মাথার এক পাশ গুলিতে উড়ে গিয়েছে দেখা যাচ্ছে, সেটাও মাথায় নল ঠেকিয়ে গুলি করলেই হয়। লড়াইতে দূর থেকে গুলি করলে এমন আঘাত হয় না।

অবশ্য সরকার ও পুলিশ এ সব দাবি উড়িয়ে জানায়, দীর্ঘ দিনের চেষ্টার পরেই আজ সোহনকে বাগে পাওয়া গিয়েছিল। আত্মসমর্পণ না করে সে গুলি চালায়। পাল্টা গুলিতে তার মৃত্যু হয়। ভোটের আগে সোহনের মৃত্যু রাজ্যের কাছে বিরাট আশীর্বাদ। গারো পাহাড়ে সন্ত্রাস অনেক কমবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন