তাঁর বাড়িতে ইলিশ খেয়েছেন সনিয়াও

ইউপিএ-১ জমানায় পরমাণু চুক্তি নিয়ে স্পিকারের ভোটদানের ঔচিত্য ঘিরে বিতর্ক হয়। সব শেষে লোকসভায় ‘ক্যাশ ফর ভোটে’র বিতর্কে কারাট-লাইনের বিরোধী অবস্থান নেন তিনি।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৮ ০৪:১০
Share:

সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং সনিয়া গাঁধী। ফাইল চিত্র।

সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় তখন সিপিএমের সংসদীয় দলনেতা। দিল্লির অশোক রোডের ২১ নম্বর বাড়ি। সেখানেই বিরোধী নেতাদের জন্য বসেছে মধ্যাহ্নভোজের আসর। সনিয়া গাঁধীর পাতে সর্ষেবাটা ইলিশ। সামনে ধবধবে সাদা ধুতি পাঞ্জাবি পরিহিত লম্বা মানুষটি দাঁড়িয়ে। বলছেন, ‘‘আর একটা ইলিশ খেতেই হবে। মাছের রানি! আর শুনুন, এটা হল কলকাতা থেকে আনা টাটকা গঙ্গার ইলিশ।’’

Advertisement

বাধ্য অতিথি সনিয়া। বিস্মিত হয়ে দেখেছি, জন্মসূত্রে ইতালীয় নারী নিখুঁত ভাবে কাঁটা বেছে ইলিশ খাচ্ছেন! জনতা দলের নেতারাও ছিলেন, ছিলেন লালু প্রসাদ, মুলায়ম সিংহ যাদব। সে দিন বিজেপি-বিরোধী ঐক্যের মঞ্চ তৈরি হয়েছিল অশোক রোডের বাড়িতে। আজ যখন আর একটা লোকসভা নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে, আবার যখন বিরোধী মঞ্চ তৈরির চেষ্টা চলছে, তখন দশ বারের লোকসভার সাংসদ, দিল্লিতে সকলের দাদা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় দাঁড়ি টেনে দিলেন এ জীবনে।

তিনি কতখানি কমিউনিস্ট ছিলেন, তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু তিনি যে নিপাট বাঙালি ভদ্রলোক ছিলেন, তা নিয়ে তাঁর অতি বড় শত্রুও কোনও প্রশ্ন তুলবেন না। মোহনবাগান প্রেম, বাঙালি ভোজন, বিচিত্র পর্যায়ের বন্ধুবৃত্ত, রবীন্দ্রনাথের গান— সব মিলিয়ে তাঁর জীবনটা পলিটব্যুরোর খিড়কি থেকে সিংহদুয়ারের লক্ষ্মণরেখা অতিক্রম করেছিল। শুধু সিপিএম বা বামপন্থী মহলই নয়, জ্যোতি বসুর শিষ্য সোমনাথের গ্রহণযোগ্যতা ছিল বৃহত্তর রাজনৈতিক বৃত্তেও। সনিয়া-মনমোহন সিংহেরা অনায়াসে আলোচনা করতেন তাঁর সঙ্গে। তিনিও অবলীলায় বিজেপির সুমিত্রা মহাজনকে ডেকে বলতে পারতেন, ‘‘এত চেঁচাও কেন!’’ সোমনাথবাবুর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে দিল্লি থেকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে কলকাতা গিয়ে সুমিত্রা নিজেই বলেছেন, সাধারণ সাংসদ এবং স্পিকার— দুই ভূমিকাতেই তিনি সোমনাথবাবুর শিক্ষার্থী। সোমনাথবাবুই তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন স্পিকার হিসাবে অক্ষরে অক্ষরে বিধি মেনে চলার। একই রকম স্বীকৃতি এসেছে আর এক প্রাক্তন স্পিকার মীরা কুমারের কাছ থেকেও। যদিও তাঁরা কেউই বামপন্থী নন।

Advertisement

ইউপিএ-১ জমানায় পরমাণু চুক্তি নিয়ে স্পিকারের ভোটদানের ঔচিত্য ঘিরে বিতর্ক হয়। সব শেষে লোকসভায় ‘ক্যাশ ফর ভোটে’র বিতর্কে কারাট-লাইনের বিরোধী অবস্থান নেন তিনি। লালকৃষ্ণ আডবাণী আজ বললেন, ‘‘সংসদে অনেক মতপার্থক্য হয়েছে, কিন্তু যে ভাবে তাঁকে দল থেকে তাড়ানো হয়, তাতে খারাপ লেগেছিল।’’

আরও পড়ুন: দ্বিধাথরথর সিপিএম, পলিটব্যুরোর শোকবার্তা এল ৫ ঘণ্টা পর

আরও পড়ুন: সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ রাজনৈতিক মহল

সোমনাথবাবুর মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই তাঁর পরিবারের কেউ কেউ বিমান বসুর প্রতি ক্ষোভ উগরে দিলেও সিপিএম-জীবনে বিমানবাবুই ছিলেন তাঁর কট্টর সমর্থক। অশোক রোডের বাড়িতে যত দিন ছিলেন, তত দিন বিমানবাবু দিল্লি এলে সেখানেই থাকতেন। সকালে নিজে হাতে দোসা বানিয়ে সোমনাথবাবুকে খাওয়াতেন। গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় তাঁকে সিপিএমের হয়ে প্রচারে নামানোর চেষ্টা হয়। সীতারাম দেখাও করতে যান তাঁর বাড়ি। শেষ পর্যন্ত সোমনাথবাবু সিপিএমের হয়ে প্রচারে নামতে রাজি হননি। কিন্তু কোনও দিন ‘বিক্ষুব্ধ নেতা’র মতো আচরণও করেননি।

আরও পড়ুন: দলের নির্দেশ অমান্য করেছিলেন সংসদীয় দায়িত্ববোধ থেকেই

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন