মুখ্যমন্ত্রীর জরুরি বার্তা দিল্লিতে

মেঘালয়ে কুর্সির লড়াই চিন্তা বাড়াচ্ছে সনিয়ার

সনিয়া গাঁধীর হাতে এখন মাত্র ছ’টি রাজ্য সরকার। আর দলের এই দুর্দশার মধ্যেও শুরু হয়েছে বিধায়কদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও ক্ষমতার লড়াই। প্রথমে অরুণাচল, পরে উত্তরাখণ্ডে কয়েক প্রস্ত নাটকের পরে এখন আলোচনা উত্তর-পূর্বের রাজ্য মেঘালয়কে নিয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০৩:৪৬
Share:

সনিয়া গাঁধীর হাতে এখন মাত্র ছ’টি রাজ্য সরকার। আর দলের এই দুর্দশার মধ্যেও শুরু হয়েছে বিধায়কদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও ক্ষমতার লড়াই। প্রথমে অরুণাচল, পরে উত্তরাখণ্ডে কয়েক প্রস্ত নাটকের পরে এখন আলোচনা উত্তর-পূর্বের রাজ্য মেঘালয়কে নিয়ে। কেননা, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আওয়াজ উঠিয়েছেন কংগ্রেস বিধায়কদের একটা বড় অংশ। মুখ্যমন্ত্রীকে কুর্সি থেকে নামাতে নাকি নরেন্দ্র মোদীর দলের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে চলেছেন তাঁরা। অভিযোগ, সব কিছুর পিছনেই কলকাঠি নাড়ছে বিজেপি। মেঘালয়ের বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে মোদীর দলের মাখামাখির খবর জানিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী জরুরি বার্তা পাঠিয়েছেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধীকে। তবে দলে বিদ্রোহের এই সংবাদ এখন চিন্তা বাড়াচ্ছে দিল্লির ২৪ আকবর রোডের বাড়িটিতে।

Advertisement

অসমে ক্ষমতা হাতছাড়া হওয়ার দু’সপ্তাহও কাটেনি। তার মধ্যেই উত্তর-পূর্বের রাজনীতিতে জমে উঠেছে নাটক। সর্বানন্দ সোনোয়ালের মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ার পরেই উত্তর-পূর্বে বিজেপি-রাজ কায়েমের পরিকল্পনা নিয়ে ‘নর্থ-ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স’ গড়েছেন অমিত শাহ। যার আহ্বায়কের ভার দিয়েছেন কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যাওয়া নেতা হিমন্তবিশ্ব শর্মার কাঁধে। বিজেপি সূত্রে খবর, তখন থেকেই মেঘালয় ও মণিপুর দখলের ‘নীল নকশা’ আঁকতে শুরু করেছেন হিমন্ত।

মেঘালয়ে ইউনাইটেড অ্যালায়েন্স-২ জোট সরকার। সেখানে কংগ্রেসের ৩০ জন, এনসিপির ২ ও ১২ জন নির্দল বিধায়ক রয়েছেন। তবে জোটের মোট ৪৪ জন বিধায়কের মধ্যে ৩৩ জনই মুকুলের বিরুদ্ধে গলা তুলেছেন। তুরা উপ-নির্বাচনে স্ত্রী তথা মহেন্দ্রগঞ্জের বিধায়ক ডিকাঞ্চি ডি শিরার পরাজয় রুখতে পারেননি মুকুল। তার পর থেকে তাঁকে সরানোর দাবি জোরদার হয়। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব
হার কারণ জানতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডি ডি লাপাং ও সাংসদ ভিনসেন্ট পালা ও ওয়ানসুক সিয়েমের সঙ্গে বৈঠক করেন। তখনই লাপাং দলের অসন্তোষের কথা শীর্ষনেতাদের কানে তোলেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লাপাংকেই পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরেছে দলের বিরোধী গোষ্ঠী।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে আজ সনিয়া ও রাহুল গাঁধীকে জরুরি চিঠি পাঠিয়েছেন মুকুল। জানিয়েছেন, বিজেপির অসমের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রাম মাধব ও নর্থ-ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক হিমন্তর সঙ্গে লাপাংয়ের গোপন বৈঠক হয়েছে। বিজেপি উত্তরাখণ্ড, অরুণাচলের মতো পরিস্থিতি মেঘালয়েও তৈরি করতে চাইছে। মন্ত্রিসভার সদস্য ও বিধায়কদের ভাঙিয়ে নিতে চাইছেন হিমন্তরা। তবে গত কয়েক দিনে কংগ্রেসের ৩০ জন বিধায়কের মধ্যে ২০ জন যখন সাংমার বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লাপাংকে নেতা নির্বাচন করছেন, তখন সফররত নরেন্দ্র মোদীর ছায়াসঙ্গী হয়ে ঘুরতে হয়েছে মুকুলকে। মঞ্চে বসে শুনতে হয়েছে মোদীর প্রচার। মুকুল এ দিন চিঠি পাঠানোর কথা মেনে নিয়ে বলেন, ‘‘দলে সব সময়ই সুবিধাবাদী নেতারা থাকেন। তবে আমাদের সরকারের ভিত মজবুত। বিজেপি তাকে সহজে ভাঙতে পারবে না।"

দল ভাঙানোর অভিযোগ উড়িয়েছেন রাম মাধব, হিমন্তও। তাঁদের বক্তব্য, মেঘালয়ে কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্বে বিজেপির ভূমিকা নেই। ঘটনা হল, এক সময় লাপাং মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে দলে বিদ্রোহের রাস্তা পার করে হিমন্তই মুকুলকে মুখ্যমন্ত্রী করেছিলেন। এ বার উল্‌ট-পুরাণ। তবে এর আগে অরুণাচল ও অসমে মুখ্যমন্ত্রী বদল না করার মাসুল দিয়েছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। তাই মেঘালয়ে এ বার একই পথে না-ও হাঁটতে পারে এআইসিসি। সে কারণে আতঙ্কে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা।

অবশ্য গত ৪৮ ঘণ্টায় রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কিছুটা বদলও এসেছে। দড়ি টানাটানির খেলায় কংগ্রেসের বিধায়ক আমপারিন লিংডো, রোশন ওয়ারজিরি ও এইচ ডি আর লিংডো রাতারাতি শিবির পাল্টে ফেলেছেন। আরও দু’জন বিধায়ক জানিয়েছেন তাঁরা নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে শরিক হতে চান না। আবার মেঘালয়ে কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীতেও মুকুলের স্থান নেওয়ার দৌড়ে রয়েছেন অনেকেই। সবার থেকে এগিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডি ডি লাপাং। আছেন সাংসদ ভিনসেন্ট পালা, পরিষদীয় মন্ত্রী প্রেস্টন টিংসং এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এস সি মারাকও। বিদ্রোহীদের মধ্যে নেতৃত্বের এই প্রতিযোগিতা যদিও মুকুলকে খানিকটা স্বস্তি দিচ্ছে।

রাজ্যের প্রধান বিরোধী জোট মেঘালয় প্রগ্রেসিভ ফ্রন্টে ইউডিপির বিধায়ক সংখ্যা ৮। এনপিপির বিধায়ক ২ জন। এ ছাড়া নির্দল ২ জন। এইচএসপিডিপি বিধায়কের সংখ্যা ৪।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন