ছবি:সংগৃহীত
আশঙ্কাই সত্যি হল। শেষ পর্যন্ত গোমাংস বিতর্কের জেরে ভাঙন ধরল মেঘালয় বিজেপিতে। মোদী সরকারের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিচি (স্থানীয় মদ) ও গোমাংসের ভোজ আয়োজন করেছিলেন প্রদেশ বিজেপি নেতাদের একাংশ। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাতে নারাজ হওয়ায় দল থেকে ইস্তফা দিলেন এক নেতা। আরও এত নেতাকে দল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্র গরু কেনাবেচা নিয়ে নির্দেশ জারি করার পরেই মেঘালয়ে অসন্তোষ ছড়ায়। মেঘালয়ে খাসি-গারো-জয়ন্তীয়া উপজাতির মধ্যে গোমাংস জনপ্রিয় খাদ্য। সেখানকার মাংস ব্যবসায়ী, গো-হাটের ব্যবসায়ীরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশ মানা সম্ভব নয়। সামনের বছর রাজ্যে ভোট। কংগ্রেসকে সরিয়ে রাজ্য জয়ের স্বপ্ন দেখছে বিজেপি-এনপিপি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে গোমাংস নিয়ে মানুষের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হলে তাদের জনপ্রিয়তা কমবে বলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে সতর্ক করেছিল প্রদেশ বিজেপি। এক ধাপ এগিয়ে এএনভিসি জঙ্গি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা তথা প্রাক্তন সভাপতি, বর্তমানে বিজেপির নেতা বার্নার্ড সি মারাক দাবি করেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে গোমাংস নিষিদ্ধ তো হবেই না, উল্টে আরও সস্তা কর দেওয়া হবে।
সেখানে না থেমে উত্তর-গারো হিল জেলা সভাপতি বাচু চাম্বুগং মারাক ঘোষণা করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের বর্ষপূর্তি উদযাপন করতে জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে গারো হিলে বিজেপি নেতারা উৎসব করবেন। সেখানে থাকবে ঢালাও বিচি ও গোমাংসের ভোজ। ফলাও করে ফেসবুকে সেই 'বিফ অ্যান্ড বিচি পার্টি'র কথা ঘোষণাও করেন তিনি। কিন্তু খবর পেয়েই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কড়া নিষেধাজ্ঞা পাঠায়।
শিলংয়ে হাজির থাকা কেন্দ্রীয় নেতা নলিন কোহালি জানান, বিজেপি শৃঙ্খলাবদ্ধ দল। দলীয় অনুশাসনের ঊর্ধ্বে উঠে, নিজের স্বার্থে, নিজের মতো চলে দলের ভাবমূর্তি খারাপ করা মেনে নেওয়া হবে না। তিনি বাচুকে দল ছাড়তে বলেন। বার্নার্ডের জবাবদিহি তলব করা হয়।
আরও পড়ুন: নিয়ন্ত্রণরেখায় পাল্টা জবাব ভারতের, নিহত ৫ পাক সেনা, জখম আরও ৬ জন
এর পরেই দুই নেতা দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। পদত্যাগ করে বার্নার্ড বলেন, "বিজেপি উপজাতি ও খ্রিস্টানদের উপরে হিন্দুত্ব চাপাতে চাইছে। আমরা নিজেদের মতো করে উৎসব করলে মানুষের মন থেকে শঙ্কা কাটত। গারো পাহাড়ের ২৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। কিন্তু গোমাংস নিয়ে তাদের মনোভাবই বিজেপিকে দূরে সরিয়ে দেবে। সুবিধে পাবে কংগ্রেস।" বার্নার্ড জানান, তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে তুরা থেকে লড়বেন।
কোহালি অবশ্য মনে করছেন দুজনের দলত্যাগের কোনও প্রভাব ভোটে পড়বে না। দলে যোগ্যতর নেতার অভাব নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। যদিও গোমাংস নিয়ে প্রদেশ বিজেপি নেতারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করছেন। কারণ তাঁদের অনেকেরই প্রিয় খাদ্য গোমাংস। তাই দল থেকে আরও অনেক নেতা বেরিয়ে যেতে পারেন বলে খবর।