ইলাহাবাদ হাইকোর্ট।
বিচারপতিদের আগমনের রাস্তায় হাঁটাচলা না করার ‘পরামর্শ’ দেওয়া হল ইলাহাবাদ হাইকোর্টের অফিসারদের। হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মতে, বিচারপতিদের আসতে দেখলেও থেমে না যাওয়াটা বা সেই রাস্তায় এ-দিক, ও-দিক করাটা তাঁদের অসম্মান করা।
ইলাহাবাদ হাইকোর্টের এই নির্দেশিকা শুনে কেউ কেউ অবশ্য প্রশ্ন তুলছেন, এটা সামন্ততন্ত্রের নমুনা নয় তো? সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহের প্রশ্ন, ‘‘এটা বিচারপতিদের সম্মান দেখানোর প্রথা না কি বর্ণবৈষম্য?’’
হাইকোর্টের ৩০ মার্চের নির্দেশিকা বলছে, ‘প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, বিচারপতিরা যখন হাইকোর্টের গ্যালারি ধরে হেঁটে এজলাসে বসতে যাচ্ছেন বা নিজেদের চেম্বারে যাচ্ছেন, তখন সেই রাস্তায় হাঁটাচলা করা অফিসার বা কর্মীরা থামছেন না। বিচারপতিদের চলে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষাও করছেন না। এটা স্পষ্টতই বিচারপতিদের অসম্মান করা।’ এই আচরণ বন্ধ না হলে তা কড়া চোখে দেখা হবে বলেও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
আইনজীবী মহলে প্রশ্ন, ‘‘বিচারপতিদের মতো হাইকোর্টের অফিসার-কর্মীরাও তো নিজেদের কাজেই চলাফেরা করছেন। সম্মান দেখাতে সেই কাজ থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে হবে কেন?’’
সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতিদের চেম্বার থেকে এজলাসে যাওয়ার জন্য একেবারে পৃথক পথ রয়েছে বলে এই ধরনের সমস্যা তৈরি হয় না। তবে শীর্ষ আদালতের বিচারপতিদের সঙ্গে পাগড়ি-উর্দিধারী আর্দালিরা থাকেন। বিচারপতিরা এজলাসে আসার আগেই তাঁরা চেয়ার ঠিক জায়গায় রেখে, এজলাসের দরজা খুলে, পর্দা সরিয়ে বন্দোবস্ত করে যান। আবার এজলাস ভাঙার সময় হলেই, চেয়ারের পিছনে এসে দাঁড়িয়ে পড়েন। এজলাসে বিচারপতিদের ঢোকা বা বেরনোর সময় উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান জানানোর প্রথা রয়েছে। তবে আদালত চত্বরে অন্য অনুষ্ঠানে গেলে সেই আর্দালিরাও থাকেন না। মাদ্রাজ হাইকোর্টে অবশ্য বিচারপতিদের সামনে ‘রাজদণ্ড’ হাতে যাওয়ার প্রথা এখনও বর্তমান। যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভাতেও স্পিকারের সামনে ‘রাজদণ্ড’ হাতে যাত্রার প্রথা রয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টে এই প্রথা না থাকলেও, বিচারপতিদের দেখলে সরে দাঁড়িয়ে মাথা নত করে সম্মান জানানোর প্রথা চলে আসছে।