সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ যে থমকে যায়নি, কাশ্মীরের রোজকার ঘটনাই তার প্রমাণ। উদ্ধার হওয়া কালো টাকার পরিমাণ এখনও অজানা। কত জাল নোট ধরা পড়েছে, এখনও তার হিসেব হয়নি। ডিজিটাল লেনদেন বেড়েছে যৎসামান্যই।
সব মিলিয়ে, নোট বাতিলের ফলে লাভের লাভ কিছু হয়নি বলেই সংসদে রিপোর্ট পেশ করতে চলেছে অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। নোট বাতিলের পরেই বিরোধীরা সমবেত ভাবে অভিযোগ করেছিলেন, এর ফলে অর্থনীতির সর্বনাশ হবে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমেহন সিংহ সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, এটা সংগঠিত লুঠ। সূত্রের খবর, সংসদীয় কমিটির রিপোর্টেও সেই দিকেই ইঙ্গিত করা হতে পারে।
কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা বীরাপ্পা মইলির নেতৃত্বাধীন সংসদীয় কমিটির অন্যতম সদস্য রাহুল গাঁধী। ওই রিপোর্ট বিরোধীদের হাতে বড় অস্ত্র তুলে দিতে পারে বলে কমিটি সূত্রে খবর। নোট বাতিলের ফলে লাভের বদলে ক্ষতিই বেশি হয়েছে বলে রিপোর্টে থাকতে পারে। নোট বাতিলের গুণাবলী বোঝাতে ও ডিজিটাল লেনদেনের প্রচারে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। অথচ নোট বাতিলের ধাক্কায় কাজ হারিয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অসংগঠিত ক্ষেত্র। আর কফিনে শেষ পেরেক মেরেছে আমজনতার সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদের হার কমা।
তবে সরকারের বক্তব্য, নোট বাতিলের সুফল মিলতে সময় লাগবে আরও কয়েক মাস। প্রাথমিক ভাবে বেশ কিছু সুফল ইতিমধ্যেই চোখে পড়তে শুরু করেছে। যেমন আয়করের রিটার্ন জমা পড়ার পরিমাণ এ বছরে প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে।
নোট বাতিলের প্রভাব বুঝতে গত কয়েক মাসে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, অর্থ মন্ত্রক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কর্তাদের তলব করেছিল কমিটি। কী তথ্য পেয়েছে তারা?
নোট নাকচের লাভ-ক্ষতি
• কালো টাকা উদ্ধার: পুরো হিসেব মেলেনি
• জাল নোট চিহ্নিত: পুরো হিসেব পাওয়া যায়নি
• সন্ত্রাসে মদত বন্ধ: হাতে যথেষ্ট তথ্য নেই
• ডিজিটাল লেনদেন: ২৩% বেড়ে এখন কমতির দিকে
• সেভিংস অ্যাকাউন্টে: সুদের হার কমছে
• আয়কর রিটার্ন: প্রায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি
ডিজিটাল লেনদেন বাড়াতে খরচ
• বিজ্ঞাপন: ৯৪ কোটি টাকা
• লটারিতে: ৩৪০ কোটি টাকা
সূত্রের খবর, সরকারি কর্তারা কমিটিকে জানিয়েছেন, নোট বাতিলের পরে ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন বেড়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। এর সঙ্গে মোবাইলে অ্যাপস বা মেসেজের মাধ্যমে লেনদেন ধরলে সব মিলিয়ে ২৩ শতাংশ ডিজিটাল লেনদেন বেড়েছে। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্তারা জানিয়েছেন, বাজারে নগদ জোগান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল লেনদেনও কমতে কমতে প্রায় আগের জায়গায় পৌঁছচ্ছে। এ দিকে ডিজিটাল লেনদেনে উৎসাহ দিতে তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রক প্রায় ৯৪ কোটি টাকা খরচ করেছে। ডিজিটাল লেনদেনের জন্য নীতি আয়োগ যে লটারির আয়োজন করেছিল, শুধু তাতেই খরচ হয়েছে ৩৪০ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:মায়াকে চাপে ফেলতে নতুন মঞ্চ দলিতদের
কালো টাকা কতখানি ধরা পড়েছে? কমিটি সূত্রের খবর, অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রায় ৪,১৭২ কোটি টাকার সন্ধান মিলেছে, যা কালো টাকা হতেও পারে। অথচ মোদী সরকার প্রথম দিন থেকে স্বপ্ন দেখিয়েছে, নোট বাতিলের ফলে ৫-৭ লক্ষ কোটি কালো টাকা উদ্ধার হবে। নোট বাতিলের পরে জমা নোটের মধ্যে জাল নোট কত, সেই তথ্যও দিতে পারেনি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। গভর্নর উর্জিত পটেল জানিয়েছেন, এখনও হিসেব কষা শেষ হয়নি।
কমিটির সদস্যদের যুক্তি, নোট বাতিলের পরে গত ডিসেম্বরেই শ্রম মন্ত্রকের শ্রমিক ব্যুরো রিপোর্ট দিয়েছিল যে, দেড় লক্ষের বেশি অস্থায়ী কর্মী ও দিনমজুর কাজ হারিয়েছেন। আরও প্রায় ৪০ হাজার আংশিক সময়ের কর্মীরও চাকরি গেছে বলে সেই সময় জানা গিয়েছিল। সেই সংখ্যা পরবর্তী সময়ে আরও বহু গুণ বেড়েছে বলেই অভিযোগ সর্বভারতীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির।
সূত্রের খবর, এই নোট বাতিলের ধাক্কাতেই স্টেট ব্যাঙ্ক সুদের হার ৪% থেকে কমিয়ে ৩.৫% করেছে। কারণ নোট বাতিলের পর সেভিংস অ্যাকাউন্টে ১ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা জমা পড়েছে। ফলে তহবিল সংগ্রহের খরচ কমাতে সুদ কমাতে হয়েছে।