National News

গুয়াহাটিতে দূষণ বাড়ছে ঘরে-বাইরে, পরিস্থিতি সামলাতে কর্মশালা

সকাল ১০টা। জি এস রোডের পাশে, পাঁচ তারা হোটেলের বলরুম। বাইরে গাড়ির ভিড়ও তেমন নয়। কিন্তু মোবাইলের ব্রিজোমিটার অ্যাপ খুললে আঁতকে ওঠার জোগাড়। সেখানে দেখাচ্ছে, বাতাসে দূষণের মাত্রা ভয়ানক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৭ ১৬:২৭
Share:

—ফাইল চিত্র

সকাল ১০টা। জি এস রোডের পাশে, পাঁচ তারা হোটেলের বলরুম। বাইরে গাড়ির ভিড়ও তেমন নয়। কিন্তু মোবাইলের ব্রিজোমিটার অ্যাপ খুললে আঁতকে ওঠার জোগাড়। সেখানে দেখাচ্ছে, বাতাসে দূষণের মাত্রা ভয়ানক। বাইরে পা রাখা চলবে না। দ্রুত জানলা-দরজা বন্ধ করতে হবে। বাচ্চাদের কোনওমতেই বাইরে পাঠানো চলবে না। বাতাসে ধূলিকণার মাত্রা প্রতি কিউবিক মিটারে প্রায় ২০ মিলিগ্রাম।

Advertisement

শিশু চিকিৎসক রশনা দাসের কাছে ক্রমেই বাড়ছে হাঁপানি ও অ্যালার্জি আক্রান্তের সংখ্যা। কাজ দিচ্ছে না অ্যান্টি বায়োটিক।

জিআই ট্যাগ পাওয়া অসমের মুগা শিল্পে দুর্দিন আসছে। কারণ গুটিপোকাদের জীবনচক্রে পরিবর্তন আনছে বাতাসের দূষণ।

Advertisement

উপরে তিনটি চিত্র ক্রমে বিপজ্জনক হতে থাকা গুয়াহাটির আংশিক ছবি তুলে ধরে। গুয়াহাটির বায়ুদূষণ নিয়ে এদিন ক্লিন এয়ার এশিয়া, পুরসভা, রাজ্য সরকার, পরিবহণ দফতরের প্রতিনিধি, আইআইটি গবেষক, চিকিৎসকদের কর্মশালা বসে গুয়াহাটিতে। আলোচনায় উঠে আসে, ২২ পাহাড়ের শহর গুয়াহাটির মানুষ নিজের দোষেই গুয়াহাটির বাতাসকে ক্রমে অবাসযোগ্য করে তুলছেন।

রাজ্য পরিবহণ দফতরের কমিশনার পুরু গুপ্ত জানান, দূষণ রোধে আইন ও নিয়ম বিস্তর থাকলেও তার রূপায়ণ হচ্ছে না। শহরে রাস্তা সীমিত। বাড়ছে গাড়ির চাপ। শিল্প নয়, যানবাহণই এখানে দূষণের প্রধান কারণ। তাই রাশ টানা হচ্ছে নতুন ট্যাক্সির রেজিস্ট্রেশনে।

আইআইটির গবেষক শারদ গোখলে জানান, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে গুয়াহাটির রাস্তায় দূষণমাত্রা ২৫ থেকে ৫০ মাইক্রোগ্রাম প্রতি কিউবিক মিটারে পৌঁছাচ্ছে, যা প্রায় দিল্লিকে ছুঁতে চলেছে। বাড়ছে ব্ল্যাক কার্বনের মাত্রা। যান নিয়ন্ত্রণে অক্ষমতা, পুরনো ডিজেল গাড়ি, মিশ্রিত তেল, টু-স্ট্রোক অটোর ব্যবহার, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বর্জ্য ধ্বংস করার ফলে দূষণ বাড়ছে। শুধু রাস্তা নয়, বাড়ি-অফিসের ভিতরেও তৈরি হচ্ছে দূষণ। মানুষ শুকনো ও ভিজে বর্জ্য আলাদাভাবে জমানো ও নষ্ট করার শিক্ষা পাননি। এ নিয়ে সমীক্ষা চালাতে গিয়েও তাঁরা বাধার সম্মুখীন হয়েছেন।

পুরসভার প্রতিনিধি জানান, ৩১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১টি ওয়ার্ডে এ ব্যাপারে মানুষকে সচেতনা করার চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। ব্যর্থ হন।

গুয়াহাটিতে পাহাড় কাটা, শুকনো পাতা পোড়ানো, কাদা শুকিয়ে ও নেড়া পাহাড়ের ধুলো থেকে ধুলো ঝড় তৈরি হওয়া শীতের শেষ থেকে বর্ষাকাল পর্যন্ত দূষণ বিপজ্জনকভাবে বাড়িয়ে তোলে বলে চিকিৎসক রশনাদেবী জানান। সেই সঙ্গে দূষণ বাড়াচ্ছে রাস্তার ভ্যাট। যা নিয়ম করে সাফ করে না পুরসভা। তিনি বলেন, "দূষণের প্রভাবে শিশুদের শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধছে। ওষুধ কাজ করছে না। কমবয়সীদের হৃদরোগ, স্ট্রোক, হাইপারটেনশন, ডায়বেটিস বাড়ছে। শুধু বাইরের হাওয়া নয় বিভিন্ন হাসপাতালের পুরনো দেওয়ালের ফাটলে জমা জীবানু থেকেও মারণ ভাইরাস ছড়াচ্ছে। যা কেমোথেরাপি বা ডায়ালিসিস চলা রোগিদের পক্ষে মারাত্মক।"

রাজ্য বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও পরিবেশ পর্ষদের কার্যবাহী সভাপতি জয়দীপ বরুয়া জানান, রাজ্যে ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাকশন প্ল্যানে ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। যার সিংহভাগ সিএনজি বাস কেনা ও সিএনজি ডিপো তৈরিকে কাজে লাগানো হবে। এই প্রথম রাজ্যের বায়ুদূষণের মাত্রা পরিমাপ করা ও গত কয়েকবছরের তথ্য একত্রিত করার কাজও হাতে নেওয়া হয়েছে।

টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সের শিক্ষক অভিনন্দন শইকিয়া জানান, গুয়াহাটির রাস্তা শিশু ও বৃদ্ধদের চলার উপযোগী নেই। রানি এলাকায় রেশম শিল্পীরা দেখছেন, মুগা পোকাদের জীবনচক্র বদলাচ্ছে। তার প্রভাব পড়ছে রেশমে। গুয়াহাটির রামসার জলাভূমি দীপর বিলও দূষণ ও জবরদখলে আক্রান্ত।

কালো ধোঁয়ায় বিষাক্ত বাতাস। ফাইল চিত্র।

গুয়াহাটি নগর বিকাশ নিগমের মুখ্য ইঞ্জিনিয়ার দেবজিৎ দাস জানান, দূষণ কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। বহুতল আবাসন তৈরির নিয়ম কড়া করা হচ্ছে। রাস্তায় নির্মাণ সামগ্রী রাখলে জরিমাণা করা হচ্ছে। শহরে তৈরি করা হচ্ছে দু'টি নতুন উদ্যান। শহরে বন্যা কমাতে নতুন খাল প্রণালী তৈরির কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। দীপর বিলকে দূষণমুক্ত করা হবে। পুরসভা জানায় শহরে আরও দূষণ পরিমাপক যন্ত্র বসানো হবে।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে গৌতম মিশ্র জানান, পর্ষদের ছ'টি নজরদার কেন্দ্র রয়েছে। জানুয়ারি থেকে শহরে ২.৫ মাইক্রোমিটার পদার্থকণার দূষণমান পরিমাপের কাজ শুরু হয়েছে।

ক্লিন এয়ার এশিয়ার ভারতের অধিকর্তা প্রার্থনা বরা বলেন, "দূষণ ভয়ঙ্কর মাত্রায় যাওয়ার পরেও দিল্লির মানুষ এখনও দূষণ মনিটর দেখেন না। মানুষের অভ্যাস বদলে প্রযুক্তির চেয়েও বেশি দরকার সরাসরি সচেতনতা বৃদ্ধি। ভারতে যে ৩০টি শহরকে দূষণমুক্ত করার অ্যাকশন প্ল্যান হাতে নেওয়া হয়েছে-তার মধ্যে আছে গুয়াহাটিও। এখানেও মানুষ দূষণকে দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হিসেবে মেনে নিয়েছেন। খালি চোখে বোঝাই যাচ্ছে না দূষণ কী ভাবে মৃত্যুদূতের ভূমিকা নিচ্ছে। জনতা ও সরকারকে হাত মিলিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণে অবিলম্বে কাজ শুরু করতে হবে।"

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন