দিল্লি সরগরম, আটক তৃণমূলের ৩৪ সাংসদ

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পর গত কাল রাজ্যের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর আজ মমতার নির্দেশে মোদী-বিরোধী আন্দোলন পৌঁছে গেল রাজধানীর রাজপথে।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৭
Share:

থানায় আটক অবস্থাতেই ধর্না। বুধবার দিল্লিতে তৃণমূলের সাংসদরা। ছবি:পিটিআই।

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পর গত কাল রাজ্যের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর আজ মমতার নির্দেশে মোদী-বিরোধী আন্দোলন পৌঁছে গেল রাজধানীর রাজপথে। প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে প্রবল ধাক্কাধাক্কির মধ্যেই সৌগত রায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন, মুকুল রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদাররা গলা ফাটালেন ‘মোদী হঠাও-দেশ বাঁচাও’ স্লোগানে। পুলিশ তৃণমূলের ৩৪ জন সাংসদকেই আটক করে তুঘলক রোড থানায় নিয়ে যায়।

Advertisement

গাড়িতে তোলার সময় পুলিশের হাতে মারও খান কয়েক জন সাংসদ। থানা চত্বরে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেও বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তৃণমূলের নেতারা। আটক থাকা অবস্থাতেই দোলা সেন, কাকলি ঘোষ দস্তিদাররা স্লোগান তোলেন, ‘‘মমতা সে জো টকরায়ে গা, উয়ো চুর চুর হো জায়েগা’! থানার চাতালে বসে ধর্না এবং স্লোগান চালিয়ে যান সাংসদেরা। গণসঙ্গীতের লিরিকে ‘মোদী যাও’ ‘অমিত শাহ যাও’ জুড়ে নিয়ে গাইতে থাকেন দোলা। গেটের ও-পার থেকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘‘সঞ্জীব যাদব নামের এক অফিসার আমাদের গাড়িতে তোলার সময় মেরেছে। সৌগতদা ও আমার কাঁধে জোরে আঘাত করেছে। থানার ভিতরেও বিজেপির কিছু নেতা বসে রয়েছেন।’’ দলের মুখপাত্র ডেরেকেরও দাবি, ‘‘কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায় এবং প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশের হাতে মার খেয়েছেন।’’

তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বন্ধ হোক’ অথবা ‘জরুরি অবস্থা বন্ধ হোক’ এমন পোস্টারই নিয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সাংসদরা। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির প্রতিবাদে সরাসরি কোনও স্লোগানও দেননি তাঁরা। সিবিআইয়ের নামও করা হয়নি। পাছে এই বার্তা যায় যে, দুর্নীতির প্রশ্নে ভয় পেয়েই তৃণমূল আন্দোলন করছে। গোটা বিষয়টিকে তৃণমূল তাই মোদী সরকারের ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’র প্রতিবাদ হিসেবেই তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়েছে এককাট্টা হয়ে। থানায় এক পুলিশ অফিসার জানতে চান, আটক করে আনা এই ৩৪ জনের মধ্যে ক’জন সাংসদ। ডেরেক জবাব দেন, সকলেই। এ দিন কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের প্রাক-বাজেট বৈঠক ছিল। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র সেখান থেকে ‘ওয়াক আউট’ করেন। তাঁর বক্তব্য, দেশে ‘আর্থিক জরুরি অবস্থা’ চলছে। তার মধ্যে এই সব বৈঠক অর্থহীন।

Advertisement

খোদ দিল্লিতে এসে মমতা-বাহিনীর এই আক্রমণে স্পষ্টতই কিছুটা দিশাহারা বিজেপি নেতৃত্ব। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছিল, দিল্লিতে তৃণমূল সাংসদেরা বিক্ষোভ করলে পাল্টা প্রতি আক্রমণে যাওয়া হবে। কাল রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে কথা বলে আজ দুপুরে দিল্লিতে চলে আসেন রাজ্যের বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ। পরিকল্পনা ছিল, সাউথ অ্যাভিনিউয়ে ডেরেক, অভিষেক, মুকুল— তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের বাড়ির সামনে উগ্র বিক্ষোভ দেখানোর। পুলিশও পৌঁছে যায় সেখানে। কিন্তু পরে এই রণকৌশল বদলানোর জন্য নির্দেশ আসে মোদী, অমিত শাহদের কাছ থেকে।

বিজেপি শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য, মমতার বিরুদ্ধে এই বিষয়টি নিয়ে শঠে শাঠ্যং রাজনীতি করলে আখেরে তৃণমূলেরই সুবিধে হবে। তাদের আন্দোলনকে কার্যত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। আগামী ৬ তারিখ দিল্লিতে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। বিভিন্ন রাজ্য থেকে নেতারা আসবেন সেখানে। আজ যদি দলের কর্মীরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে মারদাঙ্গার রাস্তা নেন, তা হলে দলের অন্দরেই সমালোচিত হতে হবে। এ ছাড়া, কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গাঁধী ছুটি থেকে ফিরে ১১ তারিখ নোট-বন্দির বিরুদ্ধে কনভেনশন করতে চান। সেখানে বিরোধীরা, বিশেষ করে মমতারা কী ভূমিকা নেন সেটাও দেখে নিতে চাইছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব।

আপাতত তাই তৃণমূলের সঙ্গে পথে নেমে বিরোধে যাওয়ার প্রশ্নে ধীরে চলারই নীতি নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। যদিও মুখে পাল্টা আক্রমণ চলছেই। অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ, দলের সচিব শ্রীকান্ত শর্মা আজ বলেন, ‘‘যখন কালো টাকা নিয়ে দলের রাঘব বোয়ালদের ধরা হচ্ছিল না, তখন মমতারা চিৎকার করছিলেন, কেন হচ্ছে না! আজ যখন ধরা পড়ছে, তাঁরাই উল্টো সুরে বলছেন, কেন হচ্ছে?’’ তৃণমূল নেতাদের কাছেও খবর ছিল যে সাউথ অ্যাভিনিউয়ে ‘হামলা’ করতে পারেন বিজেপি কর্মীরা। আজ ভোরের ফ্লাইটে রওনা হয়ে দুপুর দু’‌টোর মধ্যে সংসদে পৌঁছে যান তৃণমূল নেতারা। দলের সংসদীয় অফিসে প্রায় এক ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন, ডেরেক, দীনেশ ত্রিবেদী, শিশির অধিকারী, শতাব্দী রায়, মুকুল রায়, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় দোলা সেন, অর্পিতা ঘোষেরা। সংবাদমাধ্যমকে তৃণমূল সূত্রে প্রাথমিক ভাবে জানানো হয়, ঘণ্টা খানেক পর সাউথ অ্যাভিনিউয়ে পৌঁছনোর জন্য। সেখানে মুখোমুখি সংঘর্ষ হবে, এমনটাই অনুমান করছিলেন তৃণমূলের নেতারা। পরে বিজেপির পরিবর্তিত সিদ্ধান্তের খবর পেয়ে তাঁরা সংসদ থেকে বেরিয়ে সোজা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, ৭ লোককল্যাণ মার্গে রওনা হন। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পৌঁছনোর কিছু আগেই পুলিশ মোদী-বিরোধী পোস্টার হাতে স্লোগানরত সাংসদদের আটক করে ১৪৪ ধারা অমান্য করার অভিযোগে। বাসে করে থানায় আনার প্রায় তিন ঘণ্টা পরে ছাড়া হয় তাঁদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন