ইন্টারনেট শিখে কী লাভ, প্রশ্ন শুনে চুপ সুন্দরও

গাঁ-গঞ্জে ইন্টারনেটের ব্যবহার হাতেকলমে শিখিয়ে দেওয়ার লোক রয়েছে। তাঁরা শেখাচ্ছেনও। কিন্তু তার পরই শুনতে হচ্ছে পাল্টা প্রশ্ন— ‘এ সব শিখে করবটা কী? আমাদের তো স্মার্টফোনই নেই।’ কেউ আবার বলছেন, ‘স্মার্টফোন থেকেও কী লাভ! এখানে তো ইন্টারনেট কাজ করে না।’

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

গোকুলপুর (খড়্গপুর) শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৯
Share:

অচেনা সুন্দর। বৃহস্পতিবার গোকুলপুর গ্রামে। ছবি: এএফপি।

গাঁ-গঞ্জে ইন্টারনেটের ব্যবহার হাতেকলমে শিখিয়ে দেওয়ার লোক রয়েছে। তাঁরা শেখাচ্ছেনও। কিন্তু তার পরই শুনতে হচ্ছে পাল্টা প্রশ্ন— ‘এ সব শিখে করবটা কী? আমাদের তো স্মার্টফোনই নেই।’ কেউ আবার বলছেন, ‘স্মার্টফোন থেকেও কী লাভ! এখানে তো ইন্টারনেট কাজ করে না।’

Advertisement

বাংলার গ্রামে পা রেখে এমন সব প্রশ্নের সামনে পড়ে নিরুত্তর খোদ গুগলের সিইও! বৃহস্পতিবার আইআইটি থেকে বেরিয়ে খড়্গপুর স্টেশনে গিয়ে ওয়াইফাই পরিষেবার হালহকিকত দেখেন তিনি। তারপর যান খড়্গপুর গ্রামীণ থানার প্রত্যন্ত গ্রাম গোকুলপুরে। সেখানে গুগলের তরফে গ্রামের লোককে ইন্টারনেট শেখানোর কাজে নিযুক্ত তরুণী স্মৃতিলেখা জানার সঙ্গে কথা হয় সুন্দরের। খাটিয়ায় বসে ডাবের জলে গলা ভেজানোর ফাঁকে স্মৃতিলেখার মুখ থেকেই সুন্দর শুনলেন, ‘‘গ্রামের লোককে স্মার্টফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার শেখাচ্ছি ঠিকই। কিন্তু এই প্রত্যন্ত এলাকায় ‘টু জি স্পিড’ পাওয়াও কঠিন। বেশির ভাগ লোকের হাতেই তো স্মার্টফোন নেই।’’

দেশ জুড়ে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র স্লোগান। গুগলের মাথা হিসেবে এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন সুন্দরও। তবে ভারতবর্ষের গাঁ-গ়ঞ্জ এই ব্যবস্থার জন্য ঠিক কতটা প্রস্তুত, তার আঁচ এ দিন স্মৃতিলেখার কথাতেই পেয়েছেন তিনি। আর এর যে চটজলদি সমাধান নেই তা বুঝেই বোধহয় চুপ করে থেকেছেন। বিজনেস ম্যানেজমেন্টের ছাত্রী স্মৃতিলেখা বলছিলেন, ‘‘উনি শুধু শুনলেন। সমাধানের রাস্তা কিছু বললেন না।”

Advertisement

বছর তিনেক আগে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষকে, বিশেষ করে মহিলাদের ইন্টারনেট ব্যবহার শেখাতে উদ্যোগী হয়েছিল গুগল। ১০টি রাজ্যে ৬০ হাজার গ্রামের প্রায় ৩ লক্ষ মানুষকে ইন্টারনেট ব্যবহারে সড়গড় করে তোলা তাদের লক্ষ্য। পশ্চিমবঙ্গে এই কাজ শুরু হয়েছে গত জুনে। ‘সহজ ই-ভিলেজ’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে গ্রামে গ্রামে ‘ইন্টারনেট সাথী’ তৈরি করেছে তারা। সেই কাজ দেখতেই গোকুলপুরে ঢুঁ মেরেছিলেন সুন্দর। স্মৃতিলেখা ছাড়াও সেখানে তাঁর সঙ্গে কথা হল পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি, বান্দোয়ান, ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রামের ‘ইন্টারনেট সাথী’দের সঙ্গে। তাঁরাও জানালেন, নোট বাতিলের পরে প্রত্যন্ত এলাকাতেও ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রয়োজনটা তৈরি হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি ইন্টারনেট ব্যবহারের অনুকূল নয়। গুগলের জনসংযোগ আধিকারিক গৌরব ভাস্কর বলছিলেন, “গ্রামে ইন্টারনেট পরিষেবার জন্য তেমন কিছু হয়নি। যেখানে ইন্টারনেট নেই সেখানে আর কী করা যাবে!”

এ দিন গোকুলপুর ছাড়ার আগে গ্রামের কচিকাঁচারা ঘিরে ধরেছিল সুন্দরকে। আব্দার, ছবি তুলতে দিতে হবে। একগাল হেসে রাজিও হয়ে যান সুন্দর। ছেলেদের থেকে ক্রিকেট ব্যাট চেয়ে নিয়ে মাঠেও নেমে পড়েন। সন্দীপ পাতর, পিন্টু জানারা বলছিল, ‘‘উনি কত বড় একজন মানুষ। তাও আমাদের সঙ্গে খেললেন, হাসিঠাট্টা করলেন। দারুণ অভিজ্ঞতা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন