বিলে সম্মতির বিষয়ে শীর্ষ আদালতের পরামর্শ চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি। বুধবার সেই সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয় প্রধান বিচারপতির এজলাসে। —ফাইল চিত্র।
অনেক ক্ষেত্রে রাজ্যপালদের কাছে তিন-চার বছর ধরে বিল আটকে থাকছে। তার পরেও কী ভাবে কেন্দ্র বলতে পারে রাজ্যগুলি ‘মিথ্যা আশঙ্কা’ করছে! বিলে সম্মতি সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে বুধবার এই প্রশ্নই তুলল সুপ্রিম কোর্ট। বিলে সম্মতি সংক্রান্ত বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের থেকে পরামর্শ চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি গবইয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে এই সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি চলছে। ওই শুনানি চলাকালীনই মৌখিক ভাবে কেন্দ্রের উদ্দেশে এ বিষয়ে প্রশ্ন করে আদালত।
কেন্দ্রের তরফে আদালতে জানানো হয়, গত ৫৫ বছরে মাত্র ২০টি বিলে সম্মতি স্থগিত রাখা হয়েছে। ৯০ শতাংশ বিলেই এক মাসের মধ্যে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের হয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এ দিন এজলাসে বলেন, ‘‘রাজ্যপাল হলেন সংবিধানের অভিভাবক। তিনি ভারতের রক্ষক এবং প্রতিনিধি। গোটা দেশের স্বার্থে প্রতি যত্নবান ভূমিকা পালন করেন তিনি। রাজ্যপাল দেশের রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধিত্ব করেন। মন্ত্রিসভার সঙ্গে পরামর্শ করে এবং সহযোগিতা নিয়ে তাঁর সবকিছু করা উচিত।”
আদালতে সওয়ালের সময় সলিসিটর জেনারেল এ-ও জানান, অনেক সময় রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে চা পানের জন্য ডেকে পাঠান। তখন তাঁরা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “সংবিধান এ ভাবেই চলে। এ ভাবেই চলে এসেছে। কিন্তু এখন মিথ্যা আশঙ্কা করা হচ্ছে যে এ বিষয়ে কিছু করার প্রয়োজন রয়েছে।” আইনি খবর পরিবেশনকারী ওয়েবসাইট ‘লাইভ ল’ অনুসারে, মেহতার এই যুক্তির প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি গবই বলেন, “বিলগুলি যখন তিন-চার বছর ধরে রাজ্যপালের কাছে আটকে থাকে, তখন আপনি কী ভাবে বলতে পারেন (রাজ্যগুলি মিথ্যা আশঙ্কা করছে)?”
তখন মেহতা জানান, অনির্দিষ্টকালের জন্য বিলগুলি ঝুলে থাকার জন্য যুক্তি দেখাচ্ছে না কেন্দ্র। তবে একটি সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বিষয়টির সরলীকরণ করা যায় না বলেই সওয়াল করেন সলিসিটর জেনারেল। তাঁর ব্যাখ্যা, এই ধরনের বিষয়গুলির সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা এবং রাজনৈতিক সমাধান জড়িত থাকে। মেহতা বলেন, “যে বিলগুলি ভীষণ অসাংবিধানিক, সেগুলির ক্ষেত্রে সম্মতি স্থগিত রাখতে হয়।”
মামলার শুনানির একটি পর্যায়ে বিচারপতি পিএস নরসিংহ জানান, সংবিধানের ২০১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে, রাষ্ট্রপতি বিল আটকে রাখতে পারেন না। তাঁকে হয় বিলে সম্মতি দিতে হবে, কিংবা সেটি পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে হবে। কিন্তু বিলটি দ্বিতীয় বার রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার পরে কী করণীয়, সে বিষয়ে সংবিধানে কিছু উল্লেখ নেই। বস্তুত, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির এই বেঞ্চে বিচারপতি নরসিংহ ছাড়াও রয়েছেন বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি এএস চান্দুরকর। সম্প্রতি বিলে সম্মতি সংক্রান্ত বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে সময়সীমার কথা বলেছে, তা নিয়ে শীর্ষ আদালতের পরামর্শ চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি। মোট ১৪ দফা প্রশ্নের ব্যাখ্যা চেয়েছেন তিনি। তা নিয়ে বুধবার নবম দিনের শুনানি হল প্রধান বিচারপতির এজলাসে।