Supreme Court on Waqf Amendment Act 2025

ওয়াকফ আইন সংশোধন ঘিরে অশান্তির ঘটনায় উদ্বিগ্ন দেশের প্রধান বিচারপতি! এ নিয়েও শুনানি হবে বৃহস্পতিবার

সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। বুধবার শুনানি চলাকালীন ওয়াকফকে ঘিরে অশান্তির প্রসঙ্গ ওঠে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৪৪
Share:

সংশোধিত ওয়াকফ আইনকে কেন্দ্র করে অশান্তির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে অশান্তির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না। বুধবার তাঁর বেঞ্চে এই আইন সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল। সেখানেই ওয়াকফ আইন সংশোধনকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদী বিক্ষোভে অশান্তির প্রসঙ্গ ওঠে। দেশের নানা প্রান্তেই এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে, একাধিক রাজ্যে অশান্তিও হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে অশান্তি হয় মুর্শিদাবাদে। বুধবার শুনানি চলাকালীন সে বিষয়ে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আইনজীবীরা। তখনই বিচারপতি খন্না হিংসা নিয়ে তাঁর দুশ্চিন্তার কথা প্রকাশ করেছেন। এই ধরনের ঘটনাগুলিকে ‘উদ্বেগজনক’ (ডিস্টার্বিং) বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

Advertisement

ওয়াকফকে ঘিরে অশান্তির প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, আদালতে বিষয়টি বিচারাধীন। এই ধরনের হিংসা বা অশান্তির ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয়। এমন ঘটনা উদ্বেগজনক। পরবর্তী শুনানিতে অশান্তির প্রসঙ্গও শুনবেন বলে জানিয়েছেন বিচারপতি খন্না। সুপ্রিম কোর্টে ওয়াকফ সংক্রান্ত মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বৃহস্পতিবারই।

নতুন সংশোধিত ওয়াকফ আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে বেশ কয়েকটি আবেদন জমা পড়েছিল। মামলাকারীদের মধ্যে রয়েছেন বিহারের আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা, বাংলার তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি, ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। এ ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে বিভিন্ন রাজ্য থেকে।

Advertisement

বুধবার সব মামলাকে একসঙ্গে জুড়ে শুনানি শুরু হয়েছে। প্রধান বিচারপতি খন্নার নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ মামলা শুনছে। বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথন। বুধবার এই সংক্রান্ত শুনানির পর সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে অন্তর্বর্তী কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত। পর দিনই ফের শুনানির দিন ধার্য করেছে।

ভোটাভুটির মাধ্যমে সম্প্রতি ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাশ হয় লোকসভা এবং রাজ্যসভায়। রাষ্ট্রপতির সম্মতিক্রমে তা আইনে পরিণত হয়েছে। তার পর থেকেই এই সংশোধনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন অংশে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। মুর্শিদাবাদে ওয়াকফকে কেন্দ্র করে অশান্তির সূত্রপাত গত ৮ এপ্রিল, মঙ্গলবার। জঙ্গিপুর মহকুমার সুতি, শমসেরগঞ্জ, ধুলিয়ান-সহ বিস্তীর্ণ অংশে অশান্তি হয়েছে। এই সমস্ত অঞ্চলে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়েছিল যে, পুলিশকে গুলি চালাতে হয়েছে। মুর্শিদাবাদের অশান্তিতে তিন জনের মৃত্যুও হয়েছে। অশান্তির জেরে দীর্ঘ দিন মুর্শিদাবাদের একাংশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিছু এলাকায় এখনও বন্ধ রয়েছে। আপাতত পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। তবে বেশ কিছু অঞ্চলে এখনও ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার (বিএনএসএস) ১৬৩ ধারা জারি রয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনীও মোতায়েন করা হয়।

বুধবার শুনানিতে নতুন আইন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে বেশ কিছু প্রশ্ন করেছে সুপ্রিম কোর্ট। নতুন আইন অনুযায়ী, ওয়াকফ বোর্ডের সদস্য হতে পারবেন অমুসলিমেরাও। সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন, হিন্দুদের সম্পত্তি সংক্রান্ত বোর্ডে কি কোনও মুসলিমকে সদস্য হতে দেবে সরকার? এক মামলাকারীর হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। তিনি দাবি করেন, এই আইন সংবিধানের ২৬ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করছে। সংবিধানের এই ধারা স্বাধীন ভাবে মানুষকে ধর্মাচরণের অধিকার দিয়েছে। তাঁর সওয়াল, জেলাশাসক সরকারের অঙ্গ। তিনি ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে তা অসাংবিধানিক। ‘ওয়াকফ বাই ইউজ়ার’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সিব্বল। এই ধারায় দীর্ঘ দিন ধরে কোনও সম্পত্তি ধর্মীয় বা সেবার স্বার্থে ব্যবহার করা হলে তা ওয়াকফ বলে ধরে নেওয়া হয়, তার নথিভুক্তকরণ না হলেও চলে। সিব্বল জানান, এই ধারা ইসলাম ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে আদালত প্রশ্ন করে, বেশির ভাগ মসজিদ চতুর্দশ, পঞ্চদশ শতকে তৈরি। তাদের নথি দাখিল কী করে সম্ভব? বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত শুনানির দিকে নজর থাকবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement