এফআইআর করে তদন্ত নয় কেন, প্রশ্ন রাফালে

আজ রাফাল-চুক্তি সংক্রান্ত যাবতীয় মামলার শুনানির শেষে রায় সংরক্ষিত রেখেছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। এ দিন থেকেই কোর্টের গ্রীষ্মকালীন অবকাশ শুরু হয়ে গেল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৯ ০৩:৩২
Share:

ফাইল চিত্র।

রাফাল-চুক্তি নিয়ে এফআইআর দায়ের করে কেন তদন্ত হবে না, তা নিয়ে কেন্দ্রের ব্যাখ্যা চাইল সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্র জানাল, আইনি অপরাধ হয়েছে বলে দেখে মনে হলে তবেই এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু হতে পারে। কিন্তু রাফাল-চুক্তিতে আইনি অপরাধের বিষয় নেই। অভিযোগকারীরা এখন মামলা দাঁড় করানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

Advertisement

আজ রাফাল-চুক্তি সংক্রান্ত যাবতীয় মামলার শুনানির শেষে রায় সংরক্ষিত রেখেছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। এ দিন থেকেই কোর্টের গ্রীষ্মকালীন অবকাশ শুরু হয়ে গেল। খুলবে ১ জুলাই। ফলে ভোটের মধ্যে রাফাল নিয়ে নতুন করে ফয়সালা হওয়ার সম্ভাবনা কার্যত নেই।

গত ডিসেম্বরে কোর্ট রাফাল-চুক্তিতে সিবিআই তদন্তের দাবি খারিজ করে দিয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধবিমান কেনার দর কষাকষির সময়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাজে প্রধানমন্ত্রীর দফতর নাক গলিয়েছিল বলে নথি পরে প্রকাশ্যে আসে। তার ভিত্তিতে রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানান যশবন্ত সিনহা, অরুণ শৌরি ও প্রশান্ত ভূষণ। নরেন্দ্র মোদী সরকার ‘মিথ্যে’ তথ্য দিয়ে সুপ্রিম কোর্টকে ভুল পথে চালিত করেছে বলেও মামলা হয়। আবার রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টকে উদ্ধৃত করে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ মন্তব্যের জন্যও আদালত অবমাননার মামলা করেছিলেন বিজেপি নেত্রী মীনাক্ষী লেখি। তিনটি মামলাতেই সুপ্রিম কোর্ট রায় সংরক্ষিত রেখেছে।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বাজপেয়ী সরকারের মন্ত্রী অরুণ শৌরি আজ আদালতে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সওয়াল করেছেন। তিনি বলেন, ডিসেম্বরের রায়ে ‘ত্রুটির’ পিছনে রয়েছে কেন্দ্রের ভুল তথ্য। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ যুক্তি দেন, ‘‘ডিসেম্বরে আর্জি খারিজ করে দেওয়ার পিছনে ভিত্তি ছিল যে আমরা চাইছি, রাফাল চুক্তি বাতিল হোক। কিন্তু আমরা শুধু চাইছি, এফআইআর দায়ের করে তদন্ত হোক। সুপ্রিম কোর্টই ললিতা কুমারী মামলায় বলেছিল, আইনি অপরাধ হয়েছে বলে মনে হলে এফআইআর করে তদন্ত করতে হবে।’’

বিচারপতি কে এম জোসেফ প্রশ্ন তোলেন, ললিতা কুমারী মামলার রায় মেনে এফআইআর কেন দায়ের হবে না? কেন্দ্রের এজি কে কে বেণুগোপাল বলেন, ‘‘এখানে আইনি অপরাধ নেই। অভিযোগকারীরা মামলা খাড়া করার জন্য সরকারের থেকেই নথি চাইছে।’’

ভূষণ বলেন, সরকার কোর্টকে মিথ্যে তথ্য দিয়েছিল যে সিএজি রাফাল-চুক্তি খতিয়ে দেখেছে। তার ভিত্তিতে ডিসেম্বরের রায় ঘোষণা হয়। সরকার ভুল সংশোধন করেছে। এ ছাড়া, সরকার তখন বলেছিল, সিএজি রিপোর্টে রাফাল-এর দাম প্রকাশ করা হবে না। সরকার আগেই কী ভাবে জানল, সিএজি রিপোর্টে কী থাকবে? তাঁর আরও যুক্তি, প্রাথমিক চুক্তি থেকে দুর্নীতি বিরোধী শর্ত, ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি, সার্বভৌম গ্যারান্টি–সহ আটটি শর্ত বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত, রাফাল হাতে সময় পাওয়ার পিছিয়ে দেওয়ার কথা সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানায়নি।

প্রধানমন্ত্রী দফতর দর কষাকষিতে নাক গলায়নি— কেন্দ্রের এই দাবি উড়িয়ে ভূষণ বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন। মোদীর চুক্তি ঘোষণার কিছু দিন আগেই অনিল অম্বানীর সঙ্গে ফ্রান্স সরকারের বৈঠক হয়েছে। অম্বানী ফ্রান্সে বিপুল কর ছাড়ও পান। সাদা চোখে অনেক কিছুই ধরা পড়ছে না। তাই তদন্ত দরকার। এজি যুক্তি দেন, চুক্তির শর্ত হিসাবে যুদ্ধবিমানের দাম প্রকাশ করা যাবে না। এই যুদ্ধবিমান গয়না নয়, হাইওয়ে বা বাঁধের চুক্তিও নয়। বিশ্বের আর কোথাও এ ধরনের বিষয় আদালতের সামনে আসে না। আদালতকে উদ্ধৃত করে ‘চৌকিদার চোর’ বলার জন্য কোর্টের কাছে আগেই ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিলেন রাহুল গাঁধী। কিন্তু মীনাক্ষীর আইনজীবী মুকুল রোহতগি অভিযোগ করেন, রাহুল অনেক দেরিতে ক্ষমা চেয়েছেন। তাঁকে ভর্ৎসনা করা বা কারাদণ্ড দেওয়া হোক। রাহুলের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, তিনি প্রথমেই দুঃখপ্রকাশ করেছেন। আদালত তা না মানায় ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন। এর পরে মামলা শেষ করে দেওয়াই উচিত।

এরই মধ্যে আরব সাগরে শুরু হয়েছে ভারত-ফ্রান্স যৌথ নৌ-মহড়া। ফরাসি বিমানবাহী রণতরীর ডেকে আজ নেমেছে রাফাল যুদ্ধবিমান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন