মহা-মামলা পিছোল না সুপ্রিম কোর্ট

রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারী যে ভাবে তড়িঘড়ি করে বিজেপিকে সরকার গড়ার সুযোগ করে দেন তা সংবিধানবিরোধী, এই অভিযোগ তুলে কালই সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করে শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৫
Share:

রবিবার সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা, পৃথ্বীরাজ চ্বহাণ ও অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। পিটিআই

মহারাষ্ট্রে সরকার গড়া নিয়ে চলা মামলায় আজ সব পক্ষকে নোটিস দিল সুপ্রিম কোর্ট। সরকার পক্ষকে সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে আদালতে দু’টি চিঠি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিজেপির দেবেন্দ্র ফডণবীস রাজ্যপালকে দেওয়া যে চিঠিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাবি জানিয়েছিলেন এবং রাজ্যপাল পাল্টা যে চিঠিতে ফডণবীসকে সরকার গড়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, দু’টি চিঠিই ওই সময়ের মধ্যে জমা দিতে বলেছে সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ। বিষয়টি সময়সাপেক্ষ, এই যুক্তিতে কেন্দ্র ও বিজেপির তরফে মামলাটি দু’-তিন দিন পিছনোর আর্জি জানানো হলেও তা খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। ফলে কিছুটা হলেও চাপে পড়ল বিজেপি।

Advertisement

গত কাল ভোরে কার্যত বিরোধীদের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যথাক্রমে বিজেপির দেবেন্দ্র ফডণবীস এবং এনসিপির অজিত পওয়ার শপথ নেন। রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারী যে ভাবে তড়িঘড়ি করে বিজেপিকে সরকার গড়ার সুযোগ করে দেন তা সংবিধানবিরোধী, এই অভিযোগ তুলে কালই সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করে শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেস। আজ রবিবার হওয়া সত্ত্বেও প্রধান বিচারপতি শরদ বোবড়ের নির্দেশে বেলা সাড়ে ১১টায় মামলার শুনানি শুরু হয় বিচারপতি এন ভি রমণ, বিচারপতি অশোক ভূষণ ও বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চে।

আজ শিবসেনা ও কংগ্রেস-এনসিপি জোটের তরফে আইনজীবী যথাক্রমে কপিল সিব্বল ও অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি মূলত দু’টি বিষয়ে আদালতে সরব হন। তাঁরা বলেন, কবে, কখন, কী ভাবে, কোন প্রক্রিয়া মেনে ওই সরকার গড়া হয়েছে, তা অজানা। প্রয়োজনীয় সমর্থন না-থাকা সত্ত্বেও যে ভাবে রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেবেন্দ্রকে শপথ নেওয়ার সুযোগ করে দেন, তাতে পক্ষপাতিত্বের গন্ধ রয়েছে। বিরোধী আইনজীবীদের মতে, সম্ভবত রাজ্যপাল অন্য কারও কথা মানতে গিয়ে ওই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। এতে রাজ্যপাল পদের গরিমা নষ্ট হয়েছে। তাই ওই প্রক্রিয়া বাতিল করা হোক। দ্বিতীয় আবেদনে আজ, নিদেনপক্ষে আগামিকালের মধ্যে বিধানসভায় শক্তি পরীক্ষার অনুরোধ করা হয়। বিরোধী পক্ষের আইনজীবীদের আশঙ্কা, রাজ্যপাল ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ভোটাভুটির জন্য সময় দিলে ধরে নিতে হবে, বিজেপিকে বিধায়ক কেনাবেচার সুযোগ করে দিতেই পরিকল্পিত ভাবে সময় দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

পাল্টা যুক্তিতে সরকারের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা ও বিজেপির পক্ষে মুকুল রোহতগি জানান, এ ভাবে রাজ্যপালের সিদ্ধান্তকে চ্যালঞ্জ জানানো যায় না। রাজ্যপাল নিজের কাজের জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য নন। এ ব্যাপারে রাজ্যপাল সম্পূর্ণ দায়মুক্ত। রোহতগিরা বলেন, তিন দলের আবেদনে বলা হয়েছে, রাজ্যপাল অন্য কারও কথা শুনে ওই পদক্ষেপ করেছেন। ওই বক্তব্য কী ভাবে আবেদন হতে পারে? উত্তরে হাল্কা মেজাজে বিচারপতি এন ভি রমণ বলেন, আদালতের কাছে আবেদনের প্রশ্নে ‘স্কাই ইজ দ্য লিমিট’।

এর পরেই মামলাটির শুনানি তিন-চার দিন পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন জানান রোহতগি। তাঁর যুক্তি, চলতি মামলায় ফডণবীসের হয়ে বলার কেউ নেই। তাই শুনানি ক’দিন পিছনো হোক। পাল্টা কপিলরা বলেন, বিধায়ক কিনতে বাড়তি সময় জোগাড়ের উদ্দেশ্যেই এই যুক্তি দেওয়া হচ্ছে।

দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে শুনানির দিন পিছিয়ে দেওয়ার আর্জি খারিজ করে আদালত। কাল ফের মামলার শুনানি হবে বলে নোটিস পাঠানো হয় সব পক্ষকে। একই সঙ্গে ফডণবীসের রাজ্যপালকে দেওয়া সংখ্যাগরিষ্ঠতার চিঠি এবং রাজ্যপালের ফডণবীসকে সরকার গড়তে আমন্ত্রণ জানানোর চিঠি জমা দিতে বলা হয়। আদালত

জানিয়েছে, রাজ্যপালের কাছ থেকে কাগজ এলে তবেই চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ভোটাভুটি সংক্রান্ত আবেদনের ফয়সালা করা সম্ভব হবে। ওই কাগজ জমা দেওয়ার জন্য অন্তত দু’দিন সময় দেওয়ার আবেদন করেন তুষার মেহতা। সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে কাল সাড়ে দশটার মধ্যে দু’টি চিঠিই জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।

সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখ না-খোলায় প্রাথমিক ভাবে দলের জয় হয়েছে বলে দাবি করেছেন মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেতা আশিস সেলার। অন্য দিকে কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালার মতে, ‘‘কাল ভোটাভুটি নিয়ে শীর্ষ আদালত রায় দিলেই অবৈধ সরকারের পতনের দিন গোনা শুরু হয়ে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন