টুজি তদন্ত থেকে রঞ্জিতকে সরাল সুপ্রিম কোর্ট

তাঁর অবসরের বাকি আর মাত্র ১২ দিন। তার আগেই সুপ্রিম কোর্টে জোর ধাক্কা খেলেন সিবিআই প্রধান রঞ্জিত সিনহা। আজ তাঁকে টুজি দুর্নীতির তদন্ত থেকে সরিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। কোর্টের নির্দেশ, সিবিআইয়ের ওই তদন্তে সিবিআই প্রধান আর নাক গলাতে পারবেন না। এখন থেকে টুজি তদন্তকারী দলের উচ্চপদস্থ অফিসার মামলার দেখভাল করবেন। সিনহার বিরুদ্ধে অভিযোগ, টু-জি দুর্নীতিতে কয়েক জন অভিযুক্তকে তিনি আড়াল করার চেষ্টা করছিলেন। অভিযুক্ত টেলিকম সংস্থার আধিকারিকদের সঙ্গে নিজের বাড়িতে বহু বার বৈঠকও করেছেন। প্রধান বিচারপতি এইচ এল দাত্তুর বেঞ্চ আজ বলেছে, “অল ইজ নট ওয়েল। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে এবং তা গ্রহণ করা উচিত।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১০
Share:

তাঁর অবসরের বাকি আর মাত্র ১২ দিন। তার আগেই সুপ্রিম কোর্টে জোর ধাক্কা খেলেন সিবিআই প্রধান রঞ্জিত সিনহা। আজ তাঁকে টুজি দুর্নীতির তদন্ত থেকে সরিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। কোর্টের নির্দেশ, সিবিআইয়ের ওই তদন্তে সিবিআই প্রধান আর নাক গলাতে পারবেন না। এখন থেকে টুজি তদন্তকারী দলের উচ্চপদস্থ অফিসার মামলার দেখভাল করবেন। সিনহার বিরুদ্ধে অভিযোগ, টু-জি দুর্নীতিতে কয়েক জন অভিযুক্তকে তিনি আড়াল করার চেষ্টা করছিলেন। অভিযুক্ত টেলিকম সংস্থার আধিকারিকদের সঙ্গে নিজের বাড়িতে বহু বার বৈঠকও করেছেন। প্রধান বিচারপতি এইচ এল দাত্তুর বেঞ্চ আজ বলেছে, “অল ইজ নট ওয়েল। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে এবং তা গ্রহণ করা উচিত।”

Advertisement

সিনহাকে নিয়ে বিতর্ক অবশ্য এই প্রথম নয়। এর আগে লালুপ্রসাদের বিরুদ্ধে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির তদন্তে তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কয়লা কেলেঙ্কারিতেও সিবিআই প্রধান মনমোহন সরকারের আইনমন্ত্রীকে গোপন নথি দেখিয়েছিলেন বলে তাঁকে সুপ্রিম কোর্ট সমালোচনা করেছিল। কোর্ট সে সময় সিবিআই-কে ‘খাঁচার তোতা’ বলেছিল। দু’বছর আগে সিবিআই অধিকর্তা পদে রঞ্জিত সিনহার নিয়োগ নিয়ে বিজেপি-ও আপত্তি তুলেছিল। তাতে কান দেয়নি মনমোহন সরকার। আজ বিজেপির তরফে বলা হয়েছে, যাঁরা সিনহাকে নিয়োগ করেছিলেন, তাঁদের এখন আত্মসমীক্ষা করা উচিত। অনেকেই মনে করছেন, ২ ডিসেম্বর অবসরের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা না করে এখনই সরে দাঁড়ানো উচিত সিনহার। কিন্তু সিনহা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, “এতে অস্বস্তির কিছু নেই। আমি শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে চলব।”

সিনহা যাই বলুন, বিজেপি নেতারা কিন্তু মনে করছেন, নরেন্দ্র মোদী সরকারের এখন দায়িত্ব হল এমন এক জনকে সিবিআই অধিকর্তার পদে বসানো, যিনি সংস্থার ভাবমূর্তি উদ্ধার করতে পারবেন। সিবিআইয়ের বিশেষ অধিকর্তা অনিল সিনহা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিশেষ সচিব প্রকাশ মিশ্র, এনআইএ-প্রধান শরদ কুমার, মুম্বইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার অরূপ পট্টনায়েক, রাজস্থানের ডিজি ওমেন্দ্র ভরদ্বাজের নাম নিয়ে আলোচনা চলছে।

Advertisement

তৃণমূল আবার রঞ্জিত সিনহার ভর্ৎসনার ঘটনায় নিজেদের মতো করে স্বস্তি খুঁজছে। দলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “সিবিআইকে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজে লাগানো হয়, তা সবাই জানে। তাই আজকের রায় সিবিআইয়ের বিশ্বাসযোগ্যতার এতখানি ক্ষতি করে দিয়েছে, যা আর পূরণ হবে না।”

সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবি ওঠার সময় থেকেই ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেতাদের দাবি, সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের যুক্তিতেই সিলমোহর দিল।

তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৃণমূলের উচ্ছ্বসিত হওয়ার কোনও কারণ নেই বলেই মনে করছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “সারদা-তদন্ত হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে যদি সিবিআইয়ের শীর্ষ কর্তাকে একটি মামলা থেকে সরে যেতে হয়, তা হলে অপরাধী হলে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরাও তো ছাড় পাবেন না! সেটাও এই নির্দেশ থেকে স্পষ্ট।”

একই কথা বলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানও। তাঁর কথায় “এই নির্দেশের ফলে সুপ্রিম কোর্টের উপরে আস্থা আরও বাড়ল। নিরপেক্ষ তদন্তে বাধা হলে কেউ ছাড় পাবেন না, বোঝা গেল। রাতের অন্ধকারে যাঁরা সিবিআই অধিকর্তার সঙ্গে দেখা করছিলেন, তাঁরাও এর পরে সাবধান হবেন আশা করি!”

তবে সিবিআইয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও। তাঁর বক্তব্য, “আমরা বারবার বলছি, না আঁচালে কোনও বিশ্বাস নেই! সেটা চিট ফান্ডে সিবিআই হোক বা খাগড়াগড়ে এনআইএ তদন্ত হোক। সারদার মামলায় কোনও রাঘববোয়াল যত ক্ষণ না ধরা পড়ছে বা তাদের সম্পত্তি উদ্ধার হচ্ছে, তার আগে কিছুই বিশ্বাস নেই!”

সারদা কাণ্ডের সঙ্গে অবশ্য টুজি দুর্নীতির তুলনা টানতে নারাজ সিবিআই অফিসাররা। তাঁদের যুক্তি, সারদা তদন্ত এখনও চলছে। সেখানে টু-জি কাণ্ডে প্রধান অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ হয়ে শুনানি শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাংসদদের জেলে পোরা হয়েছে। একটি তদন্তে সিবিআই অধিকর্তার কোনও পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেই সব তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলা যুক্তিযুক্ত নয়। কার্যত একই কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্টও। প্রধান বিচারপতি এ দিন সিনহার বিরুদ্ধে নির্দেশ দিলেও সিবিআই সংস্থার বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। তাঁর কথায়, “এতে সংস্থার ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে।” তা ছাড়া এ দিন আদালতে সিনহার আইনজীবী বিকাশ সিংহ যে যে যুক্তি দিয়েছেন, সিবিআই সংস্থার আইনজীবী তার উল্টো যুক্তি দিয়েছেন।

এ দিন কী হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে? একটি এনজিও-র তরফে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন প্রশান্ত ভূষণ। অভিযোগ, টু-জি দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সংস্থার আধিকারিকদের সঙ্গে নিজের সরকারি বাসভবনে নিয়মিত দেখা করেছেন সিনহা। সেই সংস্থাকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। বিকাশ সিংহের যুক্তি ছিল, সিনহার সিদ্ধান্ত ভুল হতে পারে। কিন্তু কাউকে আড়াল করতে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেননি। কিন্তু সিবিআই সংস্থার আইনজীবী কে কে বেণুগোপাল সিনহার সমালোচনা করেন। সিবিআই অধিকর্তা দাবি তুলেছিলেন, প্রশান্ত ভূষণকে কে গোপন তথ্য জোগান দিচ্ছে, তাঁর নাম প্রকাশ করা হোক। কোর্টও সেই রায় দিয়েছিল।

গত কাল সিনহার তরফে বলা হয়, সংস্থার ডিআইজি সন্তোষ রাস্তোগি প্রশান্ত ভূষণের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করছেন। আজ বেণুগোপাল বলেন, “এই ধরনের মন্তব্য অনুচিত। রাস্তোগির বিরুদ্ধে প্রমাণ থাকলে তা পেশ করা হোক। না হলে মন্তব্য প্রত্যাহার করা হোক।” আদালত জানিয়ে দেয়, কে গোপন তথ্য দিচ্ছে, তাঁর নাম প্রকাশের প্রয়োজন নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন