ইস্তানবুলে আটকে পড়া হাইলাকান্দির মেয়ে মুক্ত সুষমার চেষ্টায়

ইস্তানবুলের সঙ্গে আরাধনা বরুয়ার তেমন কোনও সম্পর্কই নেই। তাই গত সপ্তাহে সেখানকার বিমানবন্দরে আত্মঘাতী জঙ্গিহানার খবরে বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি তিনি। উদ্বেগের লেশমাত্র ছিল না তাঁর বাড়িতেও।

Advertisement
হাইলাকান্দি শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪১
Share:

আরাধনা বরুয়া

ইস্তানবুলের সঙ্গে আরাধনা বরুয়ার তেমন কোনও সম্পর্কই নেই। তাই গত সপ্তাহে সেখানকার বিমানবন্দরে আত্মঘাতী জঙ্গিহানার খবরে বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি তিনি। উদ্বেগের লেশমাত্র ছিল না তাঁর বাড়িতেও।

Advertisement

উদ্বেগ-আতঙ্কের কথাও নয়। তিনি ডাক্তারি পড়েন ইউক্রেনে। বাড়ি ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায়। বাবা কৃষ্ণকান্ত বরুয়া হাইলাকান্দি জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক। ইস্তানবুলের নাম জেনেছেন মেয়ের ইউক্রেন যাওয়া-আসার সুবাদে। বাড়ি ফেরার পথে ইউক্রেন থেকে বিমান গিয়ে পাঁচঘণ্টা দাঁড়ায় ইস্তানবুল বিমানবন্দরে।

কে জানত, পাঁচঘণ্টার বিরতিই ২১ বছরের আরাধনাকে এমন মুশকিলে ফেলে দেবে! আর এর জেরে উৎকণ্ঠায় দিন কাটাতে হবে গোটা বরুয়া পরিবারকে! ভাগ্যিস, ট্যুইটারে সে খবর জানতে পেরেই পাশে দাঁড়ান ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তাই ইস্তানবুল বিমানবন্দর থেকে ছাড়া পেয়ে মেয়ে আকাশে ওড়ার পর বরুয়াবাবু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। আর বারবার ধন্যবাদ দিয়েছেন দেশের বিদেশমন্ত্রীকে। একই সঙ্গে উল্লেখ করেন তুরস্কের ভারতীয় দূতাবাস ও হাইলাকান্দির জেলাশাসক মলয় বরার কথা।

Advertisement

তিনি জানিয়েছেন: আরাধনা ইউক্রেনের ‘ইভানো ফ্রাঙ্কিভিস্ক ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভারসিটি’-তে ডাক্তারি পড়ছে। মাঝেমধ্যেই বাড়ি আসে। এবারও আসছিল। গত কাল রওনা দেন ইউক্রেন থেকে, মুম্বইয়ের পথে। পথে ইস্তানবুলে পাঁচ ঘন্টার বিরতি। এ মোটেও নতুন নয় আরাধনার কাছে। অন্য বারের মতো কালও সে বিমান থেকে নেমে নীচে হাঁটাহাঁটি করছিল। আচমকা তাঁকে ঘিরে ধরে ইস্তানবুল পুলিশ। হতভম্ব হয়ে পড়ে সে। শুরু হয় তাকে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ। অচেনা জায়গায় ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়েছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্রীটি। কথা বলতে পারছিল না। তবু কোনও ক্রমে ফোন করে বাবাকে বলে ইস্তানবুলে আটকে থাকার কথা।

কেন আটকে রাখা হয়েছে, কেনই বা এত জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে—কিছুই তিনি বুঝতে পারছিলেন না। শুনে হতবাক কৃষ্ণকান্তবাবুও। কী করবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না। বড় অসহায় বোধ করছিলেন তিনি। পরিবারের অন্যরাও দুশ্চিন্তায় কান্নাকাটি জুড়ে দেন। নিরুপায় হয়ে কৃষ্ণকান্তবাবু হাইলাকান্দির জেলাশাসক মলয় বরাকে সব কথা জানান। মলয়বাবু তখন ট্যুইটারে যোগাযোগ করেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে। বিদেশমন্ত্রীও সময় নষ্ট না করে তৎক্ষণাৎ আরাধনা-উদ্ধারে মাঠে নামেন।

ভারতের বিদেশ বিষয়ক বিভাগ থেকে যোগাযোগ করা হয় তুরস্কের ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে। ভারতীয় দূতাবাস কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরে আটক আরাধনা বরুয়ার সঙ্গে কথা বলেন। শুরু হয় ইস্তানবুল পুলিশের সঙ্গে

যোগাযোগ। পুলিশ তাঁদের জানায়, ট্রানজিট ভিসা না থাকার জন্য আটকে রাখা হয়েছে আরাধনাকে। বিমান থেকে নেমে সে দেশের মাটিতে পা রাখার জন্য ট্রানজিট ভিসার প্রয়োজন। শুধু বিমানের টিকিট বা অন্য দেশের পাসপোর্টই যথেষ্ট নয়। কিন্তু মুহূর্তে কী আর ট্রানজিট ভিসা তৈরি হয়! এ ভাবে প্রায় দশ ঘন্টা কেটে যায়। অবশেষে কাল রাতে তাকে মুক্তি দেয় সেখানকার পুলিশ। কিন্তু তার বহু আগেই তার বিমান ইস্তানবুল থেকে উড়ে গিয়েছে। পরে ভারতীয় দূতাবাস কর্তৃপক্ষ দুবাই হয়ে মুম্বইগামী এক বিমানে তাকে তুলে দেয়। কৃষ্ণকান্তবাবু বলেন, সরকারের প্রচেষ্টাতেই তাঁর মেয়ে ঘরে ফিরতে পারছে। বিদেশে পুলিশের কাছে আটক ও পরে মুক্তি পাওয়ায় চিন্তামুক্ত হতেই আরাধনার সামনে দাঁড়ায় নতুন সমস্যা, তাঁর ব্যাগ রয়ে গিয়েছে ইস্তানবুল পুলিশের হেফাজতে। তা নিয়ে চিন্তিত নয় আরাধনা। কিন্তু ওই ব্যাগের মধ্যেই যে তাঁর সমস্ত বইপত্র। এ বারও তৎপর হন হাইলাকান্দির জেলাশাসক মলয় বরা। মলয়বাবু পরে আনন্দবাজার পত্রিকা-কে বলেন, সব সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে। আরাধনার ব্যাগ ইস্তান্বুল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। তিনি অবশ্য কৃতিত্ব নিতে রাজি নন। বলেন, ‘‘এই ঘটনায় বহু কিছু সামনে উঠে এসেছে। উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির জন্য ট্যুইটারের সুবিধে মেলে। সুষমা স্বরাজের মত বিদেশমন্ত্রী বলে ট্যুইটারে সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দেন।’’ নইলে কী যে হতো। আর কিছু বলতে পারেন না কৃষ্ণকান্তু বরুয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন