Syed Ali Shah Geelani

গিলানির ইস্তফায় পালাবদল

২০১০-এ কাশ্মীরে পুলিশের গুলিতে স্থানীয়দের মৃত্যু নিয়ে বিক্ষোভের সময় থেকে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল পাকিস্তানের সঙ্গে কাশ্মীরের সংযুক্তির পক্ষে সওয়াল করা গিলানিকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীনগর ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২০ ০৩:৩৪
Share:

চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের টানাপড়েনের মধ্যেই বড় পালাবদল ঘটল কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনীতিতে। অল পার্টি হুরিয়ত কনফারেন্স থেকে পদত্যাগ করলেন কট্টরপন্থী হুরিয়ত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি। সেই সঙ্গে আঙুল তুললেন জম্মু-কাশ্মীর ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের হুরিয়ত নেতাদের দিকে।

Advertisement

২০১০-এ কাশ্মীরে পুলিশের গুলিতে স্থানীয়দের মৃত্যু নিয়ে বিক্ষোভের সময় থেকে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল পাকিস্তানের সঙ্গে কাশ্মীরের সংযুক্তির পক্ষে সওয়াল করা গিলানিকে। এক সময়ে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনীতিতে শেষ কথা বলা গিলানি কিছুটা হলেও কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন বলে জল্পনা শোনা যাচ্ছিল উপত্যকায়। সন্ত্রাসে অর্থ জোগানের মামলায় গিলানির জামাই ফান্টুশ গিলানি গ্রেফতার হওয়ায় আরও চাপে পড়েন তিনি। গিলানির ছেলে নইমকেও জেরা করা হয়।

আজ প্রথমে এক অডিয়ো বার্তায় হুরিয়তের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদের কথা জানান গিলানি। তাতে সংগঠনের ‘বর্তমান পরিস্থিতি’র জন্যই সরে দাঁড়ানোর কথা বলেন তিনি। পরে সামনে আসে হুরিয়তের নেতাদের উদ্দেশে লেখা তাঁর একটি চিঠি।

Advertisement

চিঠিতে গিলানি সরাসরি জানান, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ এবং গণ-গ্রেফতারির পরেও যে হুরিয়ত নেতারা মুক্ত ছিলেন, তাঁরা ওই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেননি। তিনি বারবার তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও ভবিষ্যতের কৌশল স্থির করা যায়নি।

সেই সঙ্গে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের হুরিয়ত নেতাদের দিকে আঙুল তুলে গিলানির দাবি, ওই নেতারা কেবলই প্রতিনিধি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তাঁদের নেই। কিন্তু তাঁরা পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের প্রশাসন, আইনসভার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কয়েক জনকে সরানোও হয়েছে।

গিলানি জানান, সম্প্রতি পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের সদস্যেরা নিয়ম ভেঙে একটি সম্মেলন করেন। তাতে হুরিয়ত নেতৃত্বের বিরোধিতা করা হয়। শ্রীনগরের হুরিয়ত নেতারা করোনা অতিমারির মধ্যেই সম্মেলন করে সেই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন। গিলানির দাবি, কাশ্মীরের হুরিয়ত নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সেই দায় নিতে তিনি রাজি নন।

ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রে খবর, অল পার্টি হুরিয়ত কনফারেন্সের নেতৃত্বের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিবাদ চলছিল। সৈয়দ আলি শাহ গিলানির সংগঠন তেহরিক-ই-হুরিয়তের নেতার পদে ছেলে নইমকে বসাতে চেয়েছিলেন তিনি। রাজি হয়নি পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। আবার পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে হুরিয়ত নেতৃত্বের বড় অংশ ঝুঁকে পড়েছিলেন হিজবুল নেতা ও ইউনাইটেড জেহাদ কাউন্সিলের নেতা সৈয়দ সালাউদ্দিনের দিকে। বিশেষ মর্যাদা লোপের পরে উপত্যকায় তেমন বড় বিক্ষোভ না হওয়ায় গিলানির উপরে ক্ষুব্ধ হয় আইএসআই। তার উপরে বুরহান ওয়ানির মতো তরুণ জঙ্গি নেতা, শাহ ফয়সলের মতো তরুণ রাজনীতিক উঠে আসায় ক্রমশ জমি হারাচ্ছিলেন গিলানি। হুরিয়তে নতুন নেতৃত্বের কথা ভাবতে শুরু করেছিল আইএসআই। তবে গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, ইস্তফা দিয়ে ফের সহানুভূতির হাওয়ায় ভর করে হুরিয়ত নেতৃত্ব দখলের চেষ্টা করতে পারেন গিলানি।

বিজেপি নেতা জয় পাণ্ডার কথায়, ‘‘সবচেয়ে কট্টর বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা গিলানি পদত্যাগ করলেন। বিশেষ মর্যাদা লোপের প্রভাব দেখা যাচ্ছে।’’ আর এক বিজেপি নেতা রাম মাধবের বক্তব্য, ‘‘গিলানি কাশ্মীরকে সন্ত্রাসের দিকে ঠেলে দেওয়া ও অনেক কাশ্মীরির জীবন নষ্টের জন্য দায়ী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন