National News

হাত ছুঁইয়ে স্তন ক্যানসার ধরছেন দিল্লির দৃষ্টিহীন যুবতী

যে ভাবে ‘ব্রেইলি’ পদ্ধতিতে হাত ছুঁইয়ে পড়াশোনা করেন দৃষ্টিহীনরা, ঠিক সেই ভাবেই স্পর্শের মাধ্যমে নেহা সুরি এখন বলে দিতে পারছেন, কোন মহিলার স্তনের কোন অংশে ‘লাম্প’ রয়েছে বা ধীরে ধীরে ‘লাম্প’ গড়ে, বেড়ে উঠছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৮:০৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

তাঁর বয়স যখন ২১, তখন দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন নেহা সুরি। হয়ে পড়েছিলেন দিশেহারা। একটা সন্তান আছে তাঁর। তার প্রতিপালনের জন্য রোজগারটা করবেন কী ভাবে? সেটা বছরদু’য়েক আগেকার কথা।

Advertisement

তার ঠিক এক বছর পরেই তিনি টের পান, হাত ছুঁইয়ে অনেক কিছু বুঝে ফেলার একটা বিস্ময়কর ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। খবর পান, প্রশিক্ষণ নিলে এই ক্ষমতা আরও বাড়ানো যায়। তখন এক বছর ধরে প্রশিক্ষণ নেন। গত তিন মাস ধরে সেই নেহাই এখন দিশা দেখাচ্ছেন স্তন ক্যানসারের শঙ্কায় থাকা মহিলাদের।

যে ভাবে ‘ব্রেইলি’ পদ্ধতিতে হাত ছুঁইয়ে পড়াশোনা করেন দৃষ্টিহীনরা, ঠিক সেই ভাবেই স্পর্শের মাধ্যমে নেহা সুরি এখন বলে দিতে পারছেন, কোন মহিলার স্তনের কোন অংশে ‘লাম্প’ রয়েছে বা ধীরে ধীরে ‘লাম্প’ গড়ে, বেড়ে উঠছে। তা সে যতই ছোট হোক, হাত ছুঁইয়ে সেই ‘লাম্প’ এখন অনায়াসেই বুঝে ফেলতে পারেন নেহা। তা যদি আকারে মাত্র ০.৫ সেন্টিমিটার হয়, তা হলেও তা ঠিক ধরা পড়ে যাচ্ছে নেহার হাতের ছোঁয়ায়।

Advertisement

এক বছর ধরে এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন নেহা। এখন মেডিক্যাল ট্যাকটাইল এগজামিনার (এমটিই) নেহার একটি সন্তান রয়েছে। নিজের রোজগারেই সন্তান প্রতিপালন করতে হয় নেহাকে। আগামী সপ্তাহ থেকে নেহা কাজ করবেন দিল্লির বসন্ত কুঞ্জে একটি বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের সঙ্গে। তাঁর কাজটা হবে স্তন ক্যানসারের শঙ্কায় থাকা ৪০ বছরের কম বয়সীদের শরীরে হাত ছুঁইয়ে বলে দেওয়া, লাম্প রয়েছে কি না বা তা কোথাও গড়ে ও বেড়ে উটছে কি না।

আরও পড়ুন- সুনামির গ্রাসে যেতে পারে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গও!​

আরও পড়ুন- স্তন ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে টপলেস সেরেনা​

এই এমটিই-রা স্তন ও লাগোয়া শরীরের চারটি অংশে হাত ছুঁইয়ে লাম্পের অস্তিত্ব বা সম্ভাবনার কথা বলে দিতে পারেন। সেই অংশগুলি হল, স্তন, বগল থেকে পাঁজর পর্যন্ত অংশ, কাঁধ ও পিঠ। তাঁরা আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিয়ে ও পরে আঙ্গুল তুলে নিয়ে চাপ কমিয়ে বুঝে ফেলেন লাম্পের অস্তিত্ব। সেই ভাবে স্তনের প্রতিটি সেন্টিমিটারে স্পর্শের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত এমটিই-দের বড়জোর ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট লাগে। তার পর সেই লাম্পগুলিকে ব্রেইলি পদ্ধতিতে চিহ্নিত (মার্কিং) করা হয়। সেই মার্কিং থেকেই নিশ্চিত হওয়া যায়, স্তনের ঠিক কোন জায়গায় লাম্পটা হয়েছে। তার পর হাত ছুঁইয়ে গোটা স্তনের বিভিন্ন এলাকায় কী অনুভূতি হয়েছে, তা নিয়ে একটা গ্রাফ বানানো হয়। আর সেটা পাঠানো হয় ডাক্তারদের। তাঁরা সেই গ্রাফ দেখে অনেক সহজেই বুঝে ফেলতে পারেন সত্যি সত্যিই স্তন ক্যানসার কোনও মহিলার শরীরে বাসা বেঁধেছে কি না।

নেহা বলেছেন, ‘‘এখন মনে হচ্ছে, দৃষ্টিশক্তি থাকলে তো এই কাজটা এত মন দিয়ে করতে পারতাম না।’’

ভারতে মহিলাদের যত রকমের ক্যানসারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়, তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে স্তন ক্যানসার। জনসংখ্যার প্রতি এক লক্ষে ২৪ জনকে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হতে দেখা গিয়েছে এ দেশে।

চিকিৎসকরা বলেন, স্তন ক্যানসারে মৃত্যুর হার বেড়ে চলার অন্যতম কারণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগীরা ডাক্তারের চেম্বারে আসেন প্রায় শেষ পর্যায়ে। কারণ, তাঁরা লজ্জা বোধ করেন। ফলে, শেষ মুহূর্তে চিকিৎসা শুরু করে কোনও লাভ হয় না। নেহার মতো এমটিই-রা সেই সমস্যা মেটাতে অনেকটাই সাহায্য করতে পারবেন, জানিয়েছেন দিল্লির বসন্ত কুঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালের হেড, নেক অ্যান্ড ব্রেস্ট অঙ্কোপ্লাস্টির বিভাগীয় প্রধান মনদীপ সিংহ মলহোত্র।

তাঁর বক্তব্য, নেহার মতো এমটিই-রা ম্যামোগ্রামের কিছু অসুবিধাও দূর করতে পারবে। স্তনে লাম্প হয়েছে কি না, হলে তা আকারে কেমন, তা বুঝতে এখন ম্যামোগ্রাম করা হয়। কিন্তু মহিলাদের বয়স ৪০ বছরের কম হলে ম্যামোগ্রাম করাটা সম্ভব হয় না। তাঁদের বয়স ৪০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে কিছুটা কাজ হয় অবশ্য। তবে বয়স ৫০ পেরিয়ে গেলে ম্যামোগ্রামটা ভাল ভাবে করা যায়। রয়েছে আরও একটি অসুবিধা। ভারতের ৩০ শতাংশ মহিলার স্তনের আকার ম্যামোগ্রামের জন্য উপযুক্ত নয়। সেই সব ক্ষেত্রে এই এমটিই-রাই আগামী দিনে চিকিৎসকদের অন্যতম প্রধান ‘দিশা’ হবেন বলে মনে করেন মনদীপ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন