মোদীর উপর হামলার হুমকি তালিবানের

এখানে-ওখানে হামলার দায় স্বীকার বা দীর্ঘস্থায়ী ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার হুমকি-পর্ব পেরিয়ে আরও একধাপ এগোলো পাকিস্তানের তেহরিক-ই-তালিবান জঙ্গিগোষ্ঠী। এ বার সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপর হামলা চালানো হবে বলে হুমকি দিল তারা। রবিবার সন্ধ্যায় ওয়াগা সীমান্তে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে ৬০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যুর দায় ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (জামাত -উল- আহরার) গোষ্ঠী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৪ ০২:১১
Share:

এখানে-ওখানে হামলার দায় স্বীকার বা দীর্ঘস্থায়ী ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার হুমকি-পর্ব পেরিয়ে আরও একধাপ এগোলো পাকিস্তানের তেহরিক-ই-তালিবান জঙ্গিগোষ্ঠী। এ বার সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপর হামলা চালানো হবে বলে হুমকি দিল তারা। রবিবার সন্ধ্যায় ওয়াগা সীমান্তে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে ৬০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যুর দায় ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (জামাত -উল- আহরার) গোষ্ঠী। বুধবার তাদেরই নেতা এহসানউল্লাহ এহসান একটি সংবাদসংস্থাকে ফোনে জানিয়েছে, পাকিস্তানের পাশাপাশি ভারতও তাদের নিশানায় রয়েছে। সেই প্রসঙ্গেই মোদীর উপরে হামলার হুমকি দিয়েছে এহসানউল্লাহ।

Advertisement

ঠিক কী বলেছে পাক জঙ্গি-নেতাটি?

সংবাদসংস্থাকে এহসানউল্লাহ বলেছে, “আমি মোদীকে জানিয়ে দিয়েছি, আমাদের আত্মঘাতী জঙ্গিরা যদি সীমান্তের এপারে হামলা চালাতে পারে, তা হলে ভারতের দিকেও পারবে। আমি মোদীকে জানিয়েছি যে, ওঁর হাত কাশ্মীরি মুজাহিদিন ও গুজরাতের নিরীহ মানুষের রক্তে লাল হয়ে রয়েছে, যার জন্য ওঁকে মূল্য চোকাতে হবে।” সংবাদসংস্থাকে এই সব কথা বলার আগে এহসানউল্লাহ টুইটারেও এই হুমকি প্রচার করেছে।

Advertisement

গত কাল পেন্টাগন মার্কিন প্রশাসনকে পাঠানো এক রিপোর্টে জানিয়েছিল, ভারত তাদের তুলনায় বেশি শক্তিশালী বলেই তাদের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে আসছে পাকিস্তান। আফগানিস্তানে প্রতিপত্তি খোয়ানোর বদলা নিতেই সে দেশের পাশাপাশি ভারতেরও সুস্থিতি নষ্ট করতে ইসলামাবাদ মরিয়া বলেও জানিয়েছিল পেন্টাগন। তার পরেই আজ পাক তালিবানের হুমকিতে কিছুটা চিন্তিত নয়াদিল্লি। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন গোয়েন্দা-কর্তারা। তাঁর নিরাপত্তাও বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে। যদিও এ ব্যাপারে কেন্দ্রের তরফে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি।

কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়েছেন, পাকিস্তানের নীতি এখন কে ঠিক করছে, সে দেশের নির্বাচিত সরকার না অন্য কেউ, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। ইসলামাবাদের উদ্দেশে তাঁর হুমকি, এই ছায়াযুদ্ধ ও সীমান্তে গোলাগুলি চালিয়ে গেলে পাকিস্তানকে এমন মূল্য চোকাতে হবে, যা সে দেশের সাধ্যের বাইরে।

পাক-প্রশাসন সম্পর্কে কড়া অবস্থান নিলেও সে দেশের জঙ্গি কার্যকলাপ কী ভাবে বন্ধ করা যায়, তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত কেন্দ্র। কারণ তালিবান নেতা এহসানউল্লাহ আজ যে ভাবে হুমকি দিয়েছেন, তা থেকে স্পষ্ট যে তারা ভারতকে নিশানা করতে মরিয়া।

তালিবানি আতঙ্কের এই আবহের মধ্যেই কেন্দ্রের অস্বস্তি বাড়াচ্ছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়টিও। এমনিতেই গত কয়েক মাসে বিক্ষিপ্ত ভাবে হলেও ছোটখাটো কয়েকটি গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দেশের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বড়সড় জঙ্গি হামলার আশঙ্কাও রয়েছে পুরোমাত্রায়। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে আল-কায়দা, আইএসআইএস-এর মতো কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের প্রভাব বৃদ্ধি। এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দ্রুত বৈঠকে বসবেন তিনি। সরকারি সূত্রের খবর, সম্ভবত আগামী মাসেই দিল্লিতে ওই বৈঠকটি হতে চলেছে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রশ্নে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে এই প্রথম বৈঠক করবেন মোদী। এ মাসের শেষেই অসমে ডিজি সম্মেলন হওয়ার কথা। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন তিনি।

মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই একাধিক জঙ্গি সংগঠন এ দেশে বড়সড় নাশকতার ছক কষতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। বর্তমানে কেন্দ্রের সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ পূর্ব ভারতকে ঘিরে। অসমের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও যে জঙ্গি নেটওয়ার্ক একেবারে তৃণমূল স্তরে গিয়ে কাজ করছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণ। আসন্ন মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলনে ওই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানা গিয়েছে। আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলনে মূল ফোকাস থাকবে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারতের জঙ্গি সমস্যা। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীদের এ ধরনের সম্মেলনে না আসার পূর্ব ইতিহাস রয়েছে!”

পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যে যে ভাবে গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে, তাতে উদ্বিগ্ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। অবিলম্বে উপদ্রুত এলাকাগুলিতে শান্তি ফেরাতে রাজ্যগুলিকে কড়া বার্তা দিয়েছে তারা। কিন্তু তাতেও বিশেষ কাজ হয়নি বলেই আক্ষেপ কেন্দ্রের। তাই আসন্ন বৈঠকে আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নে রাজ্যগুলিকে আরও কড়া মনোভাব নেওয়ার পরামর্শ দেওয়ার কথা ভাবছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

কেন্দ্রের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে ভারতকে নিশানা করার ব্যাপারে আল কায়দার মতো জঙ্গি সংগঠনগুলির সক্রিয়তা বেড়ে যাওয়া। সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় আমদাবাদ, অসম, কাশ্মীর-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জঙ্গি হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে আল কায়দা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি। ওসামা বিন লাদেনের স্বপ্ন সফল করতে কাশ্মীর, গুজরাত, অসম, মায়ানমার ও বাংলাদেশকে নিয়ে একটি ইসলামিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার হুমকিও দিয়েছে এই জঙ্গি নেতা। নতুন জঙ্গি সংগঠন আইএসআইএসও এখন দিল্লির কাছে উদ্বেগের। ওই জঙ্গি গোষ্ঠীর ডাকে ইতিমধ্যেই ভারত ছেড়েছেন জনা পঞ্চাশেক যুবক।

বিহারের সমস্তিপুর, কাটিহার, কিষাণগঞ্জের মতো জেলাগুলিতে আইএসআইএসের কিছু সমর্থক রয়েছে বলেও জেনেছেন গোয়েন্দারা। এই ধরনের সমস্যা কী ভাবে মেটানো যেতে পারে, তা নিয়ে ওই বৈঠকে রাজ্যগুলির সঙ্গে বিশদে কথা বলতে চান মোদী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন