পাঁচ মাস পরে স্থায়ী মুখ্যমন্ত্রী পেল তামিলনাড়ু, আর মুখ্যমন্ত্রীর সেই পুরনো চেয়ার পেল এক নতুন মালিক। আজ জয়ললিতার ছেড়ে যাওয়া চেয়ারে বসেই রাজ্যশাসন শুরু করলেন সদ্য আস্থা ভোটে জিতে আসা ই কে পালানীস্বামী।
সকাল থেকেই সংশয়ে ভুগছিল তামিলনাড়ু সচিবালয়— জয়ললিতার ছেড়ে যাওয়া চেয়ারে না আগের মুখ্যমন্ত্রী পনীরসেলভমের মতো আলাদা চেয়ারে বসবেন নতুন মুখ্যমন্ত্রী পালানীস্বামী? এর আগে জয়ললিতার জেল ও অসুস্থতার কারণে দফায় দফায় অন্তত তিন বছর মুখ্যমন্ত্রিত্ব সামলেছেন পনীরসেলভম। কিন্তু ‘কেয়ারটেকার’ মুখ্যমন্ত্রী একবারের জন্যও জয়ললিতার চেয়ারে বসেননি। ভরতের মতো ফাঁকা চেয়ারে ‘আম্মা’-র ছবি বসিয়ে নিজে আর পাঁচ জন মন্ত্রীর মতোই ‘সাধারণ’ কুর্সিতে বসে রাজ্য শাসন করে গিয়েছেন পনীরসেলভম। এমনকী, জয়ললিতার মৃত্যুর পরে মুখ্যমন্ত্রিত্ব পেয়েও সেই আনুগত্যে ভাঁটা পড়েনি। ফাঁকা চেয়ার তাই ফাঁকাই পড়ে ছিল সচিবালয়ে।
কিন্তু এ বার পরিস্থিতি আলাদা। ক্ষমতাও এখন নতুন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের হাতে। গত শনিবার আস্থা ভোটে জিতে আসার পরে আজ ছিল প্রথম কাজের দিন। শুরুতেই মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকেন পালানীস্বামী। এ দিন তাঁকে কাজ করতে দেখা গিয়েছে জয়ললিতার চেয়ারে বসেই। সামনে জয়ললিতার একটি ছবি রেখে প্রথম দিনেই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
১) রাজ্যের ৫০০টি সরকারি মদের দোকান বন্ধ।
২) চাকুরিরতা মহিলাদের টু-হুইলার কেনায় ৫০ শতাংশ ছাড়।
৩) গর্ভবতী মহিলাদের ভাতা ১২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৮ হাজার টাকা।
৪) বেকার যুবক-যুবতীদের ভাতা বৃদ্ধি।
৫) রাজ্যের জেলে সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য সরকারি খরচে পাঁচ হাজার বাড়ি বানানোর সিদ্ধান্ত।
এডিএমকে সূত্রের খবর, নির্বাচনের আগে এ সব প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন আম্মা নিজেই। আর তাই ক্ষমতায় বসেই আম্মার প্রতিশ্রুতি পূরণের পথে হাঁটলেন পালানীস্বামী। আজকের সিদ্ধান্তগুলো থেকে স্পষ্ট, শুরু থেকেই তামিল মহিলাদের মন জয় করে এগোতে চাইছেন নতুন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে রাজ্যের আর্থিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আজকের এই জনমোহিনী সিদ্ধান্তগুলোর জন্য রাজ্যের উপর ঋণের বোঝা আরও বাড়বে। পশ্চিমবঙ্গের ধাঁচেই তামিলনাড়ুর ঘাড়ে বর্তমানে প্রায় ২ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি টাকার দেনা রয়েছে। গত বছর মে মাসে ক্ষমতায় এসে প্রথম দিনই গৃহস্থের জন্য বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাদের উপর চাপ কমাতে বিয়ের কনেদের জন্য সোনা, কৃষি ঋণ মুকুবের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। যার জেরে নতুন করে আট হাজার কোটি টাকার বোঝা চেপেছিল রাজ্যের উপর। আজ পালানীস্বামীও সেই পথে হেঁটে প্রথম দিনে যে ভাবে দরাজহস্ত হয়েছেন, তাতে আরও কয়েক হাজার টাকার দেনা রাজ্যের ঘাড়ে চাপতে চলেছে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে রাজনৈতিক মহল বলছে, এই মুহূর্তে রাজ্যের আর্থিক স্বাস্থ্যের চেয়ে এডিএমকে দলের স্বাস্থ্য তথা মানুষের মনে বিশ্বাসযোগ্যতা ফেরাতে বেশি তৎপর দলীয় নেতারা। ফলে কিছু দিন তামিলনাড়ুতে এই খয়রাতির রাজনীতিই চলবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন: ভারতের প্রবল চাপেই বন্দি হাফিজ: বিস্ফোরক দাবি জঙ্গি নেতার ভাইয়ের
জেলে বসে তামিলনাড়ুর ক্ষমতা দখলের খেলায় সাফল্য পেলেও, আজ এডিএমকের সাধারণ সম্পাদক শশিকলার স্বামী নটরাজনের বিরুদ্ধে ফের দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার মামলাটি মাথাচাড়া দিয়েছে। ১৯৯৪ সালে ব্রিটেন থেকে একটি টয়োটা লেক্সাস গাড়ি ভারতে ব্যবহারের জন্য নিয়ে এসেছিলেন নটরাজন। অভিবাসন দফতরের কাছে নটরাজন দাবি করেছিলেন, ওই গাড়িটি এক বছরের পুরনো। ফলে সেটির দামও কম। পরে দেখা যায়, গাড়িটি নতুন। পুরনো গাড়ির সপক্ষে যে নথি ও ইন-ভয়েস নটরাজন জমা দিয়েছিলেন, তদন্তে দেখা যায় সেগুলো ভুয়ো ও জাল। এর ফলে সে সময়ে প্রায় ১.৬২ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছিল সরকার। তদন্তে নামে সিবিআই ও ইডি।
পরে ওই মামলায় ২০১০ সালে সিবিআই আদালত নটরাজনকে চক্রান্ত, নথি জাল, ভুয়ো নথি পেশ, প্রতারণা ও কর ফাঁকি দেওয়ার অপরাধে দু’বছরের কারাবাসের শাস্তি শোনায়। হাইকোর্টে ওই রায়ের উপর স্থগিতাদেশের আবেদন করেন নটরাজন। যা মঞ্জুর হয়। সেই স্থগিতাদেশ আরও বাড়ানো হবে, নাকি ওই রায় কার্যকর করা হবে, সেই মামলার চূড়ান্ত শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে ২৭ ফেব্রুয়ারি। এডিএমকে সূত্রের খবর, নটরাজনের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের কাছে যা তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, তাতে স্ত্রীর মতোই তাঁর এ বার জেলযাত্রা প্রায় অবশ্যম্ভাবী বলে ধরে নিয়েছেন দলীয় নেতারা। আর তা হলে ফের মুখ পুড়বে শশিকলার। নতুন করে বন্ধুর হবে সাড়ে তিন বছর পরে জেল থেকে বেরিয়ে এসে দলের ক্ষমতা হস্তগত করার রাস্তা।