কলকাতা ছুঁয়ে ত্রিপুরার হাত ধরলেন রতন টাটা

পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু সিঙ্গুর আন্দোলন সেই স্বপ্ন সফল হতে দেয়নি। এ বার রতন টাটাকে পাশে পেলেন ত্রিপুরার বাম মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। নতুন শিল্প কারখানার ঘোষণা এখনই না করলেও আপাতত ত্রিপুরার মানব কল্যাণে কাজ করতে চায় টাটা ট্রাস্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আগরতলা ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৫ ০৩:৫৮
Share:

স্বাগতম। বামশাসিত ত্রিপুরায় রতন টাটাকে অভ্যর্থনা মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের। বৃহস্পতিবার বাপি রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।

পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু সিঙ্গুর আন্দোলন সেই স্বপ্ন সফল হতে দেয়নি। এ বার রতন টাটাকে পাশে পেলেন ত্রিপুরার বাম মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। নতুন শিল্প কারখানার ঘোষণা এখনই না করলেও আপাতত ত্রিপুরার মানব কল্যাণে কাজ করতে চায় টাটা ট্রাস্ট।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গ থেকে চলে যাওয়ার আগে টাটা বলেছিলেন, মাথায় বন্দুক ধরে তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে যেতে বাধ্য করা হল। আজ ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে ফিরে যাওয়ার আগে রতন টাটা জানিয়ে গেলেন, তিনি আবার ফিরবেন। রাজ্যের প্রাকৃতিক সম্পদকে রাজ্যেই কাজে লাগিয়ে কী করা যায়, তার পরিকল্পনা নিয়েই ফিরবেন। ঘটনাচক্রে কলকাতা হয়েই আগরতলায় আসতে হল তাঁকে।

কী রকম? আজ রতন টাটার কর্মসূচিতে কলকাতা ছিল না। সিঙ্গুর পরবর্তী সময়ে এই শহরে তাঁর যাতায়াত এমনিতেই কমে গিয়েছে। কিন্তু পাকেচক্রে এ দিন ফ্যালকন বিমানটি তাঁকে নিয়ে নেমে এল কলকাতাতেই। রতন টাটা কলকাতায় নেমে অবশ্য কালবিলম্ব করেননি। মিনিট কয়েকের মধ্যে স্পাইসজেটের উড়ান ধরে চলে যান আগরতলা।

Advertisement

সটান আগরতলা আসার জন্যই রতন আজ ব্যক্তিগত বিমান নিয়ে উড়েছিলেন মুম্বই থেকে। কিন্তু পথে আচমকাই বিগড়ে যায় তাঁর বিমান। দুপুরে মাঝ আকাশ থেকে ফ্যালকনের পাইলট যোগাযোগ করেন কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে। তিনি নেমে আসেন কলকাতায়। কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই বিমান সারানো যায়নি। দুপুরে আগরতলায় গিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নিজের কাজ সেরে ফেলেন রতন টাটা। তাঁকে ফিরিয়ে আনার জন্য আজ বিকেলে জামশেদপুর থেকে একটি বিমান আগরতলা যেতে চায়। কিন্তু সূত্রের খবর, এ দিন সন্ধ্যায় তাদের মাথার উপর দিয়ে ওই বিমানকে ওড়ার অনুমতি দেয়নি বাংলাদেশ সরকার। ফলে বিমানটি মাঝ আকাশ থেকেই ফের জামশেদপুর ফিরে যায়। সন্ধ্যায় রতন টাটা স্পাইসের বিমানেই আগরতলা থেকে কলকাতায় ফেরেন। কলকাতা থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ানে ফিরে যান মুম্বই।

দেশের অন্যতম বৃহত্ শিল্পগোষ্ঠীর প্রাক্তন চেয়ারম্যান রতন টাটা আজ ত্রিপুরায় এসেছিলেন টাটা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হিসেবে। মূলত রাজ্যের মানবসম্পদ উন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক উন্নয়নে কাজ করবে টাটা ট্রাস্ট। রতন টাটাকে পাশে পেয়ে সাংবাদিক বৈঠকে দৃশ্যতই উত্ফুল্ল মুখ্যমন্ত্রী নিজের বসার জন্য রাখা চেয়ারটি রতন টাটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বসতে অনুরোধ করলেন। ইতস্তত করলেও ভারতীয় শিল্প জগতের প্রবাদপ্রতিম প্রবীণ মানুষটি মানিকবাবুর অনুরোধ ফেরাতে পারলেন না। আপ্লুত হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বললেন, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আতিথেয়তায় আমি ও আমার সহকর্মীরা মুগ্ধ।’’

রাজ্য সরকারের সঙ্গে টাটা ট্রাস্ট-এর একটি ‘সমঝোতা পত্র’ স্বাক্ষর হল আজ। এর পর রতন টাটাকে পাশে নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘রাজ্যের উন্নয়নে আজকে টাটা ট্রাস্টের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। রতন টাটা উদ্যোগী না হলে এই চুক্তি কোনও ভাবেই সম্ভব হতো না।’’ ট্রাস্টের কাজের পরিধি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মানিকবাবু বলেন, ‘‘ট্রাস্টের কাজের মধ্যে দিয়ে রাজ্যের উন্নয়ন হবে। দুগ্ধ প্রকল্প, মত্স্য উত্‌পাদন, শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, সাধারণ ভাবে শিক্ষা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য ইত্যাদি বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ট্রাস্ট এ রাজ্যে কাজ করবে।’’ কিন্তু রতন টাটা এলেন, অথচ রাজ্যের শিল্প ক্ষেত্রে লগ্নি এল না! এটা কী করে সম্ভব? টাটা সন্স-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘আগামী দিনে ভূগর্ভস্থ প্রকৃতিক গ্যাস-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদকে বড় শিল্পের জন্য কী ভাবে কাজে লাগানো যায়, সে সম্ভাবনা নিয়েও নিশ্চয় চিন্তাভাবনা করা হবে। আমি ফিরে আসব।’’ বর্তমানে ট্রাস্টের মাধ্যমে আগরতলার উপকণ্ঠ, ইন্দ্রনগরে অটোমোবাইল পরিষেবার উন্নতির জন্য একটি ‘সেন্টার অব এক্সেলেন্স’ কেন্দ্র তৈরি করা হবে। আর লংতরাই পাহাড়ের কোলে, অমবাসায় তৈরি হবে একটি ফুড প্রসেসিং ইউনিট। সরকারি সূত্রের খবর, টাটা ট্রাস্ট এ সব কাজের জন্য বাত্‌সরিক প্রায় ৬০ কোটি টাকা খরচ করবে।

রাজ্যের ছোট ও প্রান্তিক চাষি এবং শ্রমিকেরা যাতে আর্থিক ভাবে লাভবান হয়ে নিজেদের জীবন যাপনের মান উন্নয়ন করতে পারেন সে উদ্দেশ্যেই টাটা ট্রাস্ট মূলত কাজ করবে বলে রতন টাটাও জানান। ত্রিপুরার মানব কল্যাণেই ট্রাস্টের কাজকর্ম সীমাবদ্ধ থাকবে। কোনও ব্যবসায়িক কাজকর্ম যে টাটা গোষ্ঠী এখনই ত্রিপুরায় করবে না, সে ইঙ্গিতও স্পষ্ট ছিল টাটার ঘোষণায়। রাজ্যের যে প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, তাকে টাটা গোষ্ঠী তার নিজের আর্থিক বৃদ্ধি বা লাভের জন্য কাজে লাগাবে না, সে কথাও রতন টাটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন। ট্রাস্ট-এর কাজের মাধ্যমে পরবর্তী কালে এ রাজ্যে মানবকল্যাণ ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন মূল্য যুক্ত করবে বলে তিনি জানান। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষও সম্ভ্রম ও আত্মমর্যাদা নিয়ে বসবাস করবেন।’’ সারা দেশের সঙ্গে বৃহত্তর পৃথিবীও বিষয়টি তখন অন্য চোখে দেখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন