Tawang Clash

‘স্থিতিশীল’ তাওয়াং নিয়ে উত্তাল সংসদ, বৈঠকে সেনা, সতর্কতা উত্তরবঙ্গের বায়ুসেনা ঘাঁটিতেও

লাদাখের গালওয়ান, সিকিমের নাকু লার পরে কেন আবার ভারতীয় সেনাকে নিজেদের ভূখণ্ডে চিনা হামলার শিকার হতে হল, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে তা নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ ২৩:০৪
Share:

তাওয়াংয়ে ভারতীয় এবং চিনা সেনার সংঘর্ষ নিয়ে উত্তাল দেশের রাজনীতি। ছবি সংগৃহীত।

দু’পক্ষই বলছে ‘শান্তি ফিরেছে’। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াংয়ের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) রাতের সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে ভারত এবং চিন পরস্পরের দিকে অভিযোগের আঙুলও তুলছে মঙ্গলবার। লোকসভায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সরাসরি চিনা ফৌজের বিরুদ্ধে ‘এলএসি লঙ্ঘনের চেষ্টা’র অভিযোগ তুলেছেন। অন্য দিকে, চিনা বিদেশ দফতরের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন শান্তি ফেরাতে ‘কূটনৈতিক এবং সামরিক স্তরে নিরবচ্ছিন্ন আলোচনা’ এবং ‘স্থিতিশীল পরিস্থিতির’ কথা বললেও অভিযোগ করেছেন, প্রথম এলএসি পেরিয়েছিল ভারতীয় সেনা!

Advertisement

তাওয়াংয়ের ঘটনা নিয়ে উত্তাপ চড়েছে রাজনীতিতেও। লাদাখের গালওয়ান, সিকিমের নাকু লার পরে কেন ফের ভারতীয় সেনাকে নিজেদের ভূখণ্ডে চিনা হামলার শিকার হতে হল, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে তা নিয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি। রাজনাথ সংসদে বিরোধীদের অভিযোগের জবাব দিলেও সে পথে হাঁটেননি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বরং অধিবেশন চলাকালীন বিষয়টি নিয়ে নজিরবিহীন ভাবে সংসদের বাইরে মুখ খুলেছেন তিনি। সেখানেও তাওয়াংয়ে চিনা আগ্রাসনের প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রশ্নোত্তর পর্ব ভন্ডুল করার অভিযোগ তুলেছেন। জওহরলাল নেহরুর জমানায় ‘ভারত-চিন সখ্য’ আর হালফিলে রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনে চিনা অনুদান নিয়ে নিশানা করেছেন কংগ্রেসকে।

তাওয়াং পরিস্থিতির জেরে মঙ্গলবার দফায় দফায় বৈঠক করেছেন স্থলসেনা এবং বায়ুসেনার উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। অসমের তেজপুর, উত্তরবঙ্গের হাসিমারা-সহ গুরুত্বপূর্ণ বায়ুসেনা ঘাঁটিগুলিতে ‘চূড়ান্ত সতর্কতা’ জারি করা হয়েছে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর।

Advertisement

২০২০ সালের গালওয়ান-কাণ্ডের মতো প্রাণহানি না ঘটলেও শুক্রবার রাতের ওই সংঘর্ষের ঘটনায় দু’পক্ষেরই বেশ কয়েক জন সেনা আহত হয়েছেন। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, কোনও ভারতীয় সেনার জখম গুরুতর নয়। গালওয়ানের মতোই তাওয়াংয়েও দ্বিপাক্ষিক সেনাস্তরের ‘রুল অব এনগেজমেন্ট’ মেনে কোনও পক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেনি।

ভারতীয় সেনার তেজপুরের ৪ নম্বর কোরের একটি সূত্র জানিয়েছে, সেই রাতে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) তাওয়াং সেক্টরের ইয়াংৎসে এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতের এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করলে ভারতীয় সেনা ‘দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিরোধ’ করে। সে সময় হাতাহাতি এবং লাঠি-পাথর নিয়ে সংঘর্ষে দু’পক্ষেরই বেশ কয়েক জন আহত হন।

শুক্রবার রাতে প্রায় ৩০০ চিনা সেনা তাদের থাং লা শিবির থেকে ইয়াংৎসে নদী পার হয়ে তাওয়াং সেক্টরে অনুপ্রবেশ করে ভারতের একটি সেনাশিবিরে চড়াও হয়। কিন্তু তার আগের দিন থেকেই উত্তেজনা থাকায় ভারতীয় সেনা প্রস্তুত ছিল। ফলে চিনা সেনা সুবিধা করতে পারেনি। এর পরে দ্বিপাক্ষিক ঊর্ধ্বতন সেনা স্তরের আলোচনায় মুখোমুখি অবস্থান থেকে ‘সেনা পিছনো’ (ডিসএনগেজমেন্ট)-র বিষয়ে ঐকমত্য হয়। ইতিমধ্যে তা কার্যকরও হয়েছে।

২০২০ সালের গত ১৫ জুন পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে অনুপ্রবেশকারী চিনা ফৌজকে ভারতীয় বাহিনী বাধা দেওয়ায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। সংঘর্ষে মোট ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিলেন। আমেরিকা-সহ বিভিন্ন পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট চিনা সেনার নিহতের সংখ্যা ছিল আরও বেশি। যদিও তা প্রকাশ্যে শিকার করেনি বেজিং। গালওয়ান-কাণ্ডের পরে পূর্ব লাদাখের ডেপসাং উপত্যকা এবং প্যাং গং হ্রদের উত্তরে ফিঙ্গার এরিয়াতেও চিনা অনুপ্রবেশের অভিযোগ ওঠে। কোর কমান্ডার স্তরের ধারাবাহিক আলোচনায় উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হলেও ভারতীয় সেনাকে ‘সমঝোতার শর্ত’ হিসাবে ২০২০ সালের এপ্রিলের অবস্থান থেকে বেশ কিছুটা পিছনে আসতে হয়েছে বলে অভিযোগ।

গালওয়ান-কাণ্ডের পরেও চিনা বাহিনীর এলএসি লঙ্ঘনের বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে। ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি উত্তর সিকিমের নাকু লায় অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে ভারতীয় সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে চিনা ফৌজ। অন্তত ২০ জন চিনা সেনা ওই সংঘর্ষে জখম হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তারা শেষ পর্যন্ত পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছিল। নাকু লার সংঘর্ষে জখম হয়েছিলেন ৪ ভারতীয় জওয়ানও। ভারতীয় সেনা ওই ঘটনাকে ‘মামুলি গোলমাল’ বলেছিল।

বিদেশ মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, তিব্বতি বৌদ্ধদের পবিত্র স্থান ইয়াংৎসেতে যাতায়াত বাড়ছিল বৌদ্ধ ভক্তদের। এলএসি লাগোয়া প্রায় ১৪ হাজার ফুট উচ্চতার ওই এলাকার প্রাকৃতিক শোভাও অপরূপ। সেখানে রয়েছে চুমি ঘাৎসে জলপ্রপাত। পর্যটক আকর্ষণ বাড়াতে অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু সেখানে একটি বৌদ্ধ গুম্ফাও নির্মাণ করেছিলেন। ভারতীয় সেনাশিবিরের ‘সুরক্ষা’ থাকায় বৌদ্ধ ভক্ত এবং পর্যটকদের সমাগম বাড়ছিল সেখানেও। তাওয়াং নিয়ে বরাবরই ‘স্পর্শকাতর’ চিন তা বরদাস্ত করতে পারেনি। তাই অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে অতর্কিতে সেনাশিবিরে হামলা চালিয়েছিল লালফৌজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন