প্রতীকী ছবি।
ব্যস্ত রাস্তার দু’দিক প্রায় জবরদখল করে বাঁশ-কাঠের তৈরি অস্থায়ী কাঠামো। দিন কয়েকের মধ্যে তাতে শাসক দল এডিএমকে-র হোর্ডিং টাঙানোর কথা। দলের প্রতিষ্ঠাতা এম জি রামচন্দ্রনের শতবর্ষ পালনে তামিলনাড়ুর প্রায় সব শহরের, সব রাস্তাতেই এমন পেল্লাই সব বিজ্ঞাপন বসানোর তোড়জোড় চলছে। যার বেশির ভাগই অবৈধ বলে অভিযোগ। আর গত শনিবার ভোররাতে এমনই এক হোর্ডিংয়ে ধাক্কা খেয়ে প্রাণ হারালেন এক প্রবাসী যুবক।
পুলিশ জানায়, যুবকের মাথায় হেলমেট ছিল। হোর্ডিংয়ে ধাক্কা খেয়ে যখন মাটিতে পড়ে যান, তখনও ছিল। তবু পাশ দিয়ে ধেয়ে আসা ট্রাকের চাকা নিমেষে পিষে দিয়ে গেল বছর বত্রিশের সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার রঘুপতি কান্দাস্বামীকে। আর সকাল হতে না হতেই ফেসবুক-টুইটারে প্রশ্ন উঠে গেল— ‘‘কে মারল রঘুকে?’’
কর্মস্থল আমেরিকা থেকে সম্প্রতিই কোয়ম্বত্তূরের বাড়িতে ফিরেছিলেন রঘুপতি। ঘটনার দিন বিয়ের পাকা কথা বলতে পাত্রীর বাড়ি যাচ্ছিলেন তিনি। সিঙ্গানাল্লুর বাসস্ট্যান্ডে মোটরবাইক রেখে বাসেই যাওয়া-আসার কথা ছিল। হল না। দিনের আলো ফোটা পর্যন্ত রাস্তাতেই প়ড়ে রইল রঘুর দেহ। অভিযোগ, রাস্তার যে অংশ দিয়ে মোটরবাইক চলার কথা, তার প্রায় ৩০ শতাংশই দখল করেছিল ওই হোর্ডিং-কাঠামো।
তবে তাঁর মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি চান না নেটিজেনরা। তাঁদের লক্ষ্য শাসক দলও নয়। এক নেটিজেনের কথায়, ‘‘আমাদের প্রতিবাদ নাগরিকদের প্রতি সমাজের একটা অংশের উদাসীনতার বিরুদ্ধে।’’ রাস্তা দখল করে এমন সব বিপজ্জনক হোর্ডিং-বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে হাইকোর্টের। তার পরেও এমন ঘটনায় অবশ্য এডিএমকে-র কাছেও জবাবদিহি চাইছে সোশ্যাল মিডিয়া। যার ঠিক পর-পরই শাসক দলের বিরুদ্ধে এ নিয়ে তোপ দাগতে শোনা যায় বিরোধী দল ডিএমকে-র কার্যনির্বাহী সভাপতি এম কে স্ট্যালিনকে। মুখ্যমন্ত্রী ই পলানীস্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের দাবিও তুলেছে রাজ্যের অন্য বিরোধী দল পিএমকে। কোয়ম্বত্তূর মেডিক্যাল কলেজ মোড়ের এই ঘটনার জেরে গত তিন দিনে যে ভাবে ক্ষোভ ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, তাতে প্রশাসনও মাঠে নামতে বাধ্য হয়। আগাম অনুমতি ছাড়া রাস্তার দু’পাশে যত হোর্ডিং ছিল, রাতারাতি তার সবগুলিকেই ‘অবৈধ’ তকমা দিয়ে তুলে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় পুরসভা।
তবু কমছে না ক্ষোভ। এলাকার সমাজকর্মী আর এম সেলভারাজ জানান, হোর্ডিং সরানোর আর্জি জানিয়ে গত শুক্রবারও তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘রাস্তা জুড়ে হোর্ডিং না থাকলে হয়ত এমন বেঘোরে মরতে হতো না রঘুপতিকে। ওর কী দোষ ছিল বলতে পারেন?’’