তেলঙ্গানার সেই সরকারি স্কুল। ছবি: সংগৃহীত।
স্কুল আছে। আছেন তিন শিক্ষকও। মাসে ৮০-৯০ হাজার টাকা বেতনও পান তাঁরা। কিন্তু সেই স্কুলে পড়ানোর মতো নেই কোনও পড়ুয়া। শুধু তা-ই নয়, এই স্কুলের জন্য বছরে ৪০ লক্ষ টাকা খরচ করে তেলঙ্গানা সরকার। কিন্তু তার পরেও স্কুলের এই দুর্দশা কেন, প্রশ্নের মুখে সরকার।
তেলঙ্গানার খাম্মাম জেলার জিলা পরিষদ হাইস্কুলের ছবিটা ঠিক এ রকমই। পর পর তিন বছর স্কুলে কোনও পড়ুয়া ভর্তিও হয়নি বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। খাম্মাম জেলার সদর দফতর থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে আসনাগুর্থি গ্রামে রয়েছে এই স্কুল। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, এক বছর নয়, পর পর তিন বছর কোনও পড়ুয়ার মুখ দেখেনি তাঁরা।
স্কুলে তিন শিক্ষক রয়েছেন। তাঁরা নিয়ম করে প্রতি দিন স্কুলে আসেন। স্কুলের সময়টুকু কাটিয়ে আবার ফিরে যান। গত তিন বছর ধরে এটাই যেন ‘রীতি’ হয়ে উঠেছে ওই স্কুলের। ১৯৭৬ সালে তৈরি হয়েছিল স্কুলটি। তার পর থেকে ১০-১৫ গ্রামের একমাত্র শিক্ষাকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল এই স্কুলই। নব্বইযের দশকে এই স্কুলে ১০০০ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করত। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, পড়ুয়ার সংখ্যা নজিরবিহীন ভাবে কমেছে। অভিভাবকেরা বেসরকারি স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করানো শুরু করেন। পড়ুয়াদের সংখ্যা যেমন কমেছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকের সংখ্যাও কমতে থাকে। যেখানে পুরো স্কুল চালাতে ১১ জন শিক্ষকের প্রয়োজন সেখানে তিন জন শিক্ষক দিয়েই স্কুল চালানো শুরু হয়।
স্থানীয়দের দাবি, পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে পঠনপাঠনেও প্রভাব পড়তে শুরু করে। ধীরে ধীরে অনেকেই সেই স্কুল থেকে সন্তানদের ছাড়িয়ে নিয়ে যান। ভর্তি করান শহরের বেসরকারি স্কুলগুলিতে। স্কুলটিকে বাঁচিতে তোলার জন্য প্রাক্তনীরা নানা ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, সরকারি উদাসীনতায় এবং শিক্ষক নিয়োগে অনীহার কারণে স্কুলটি ধুঁকতে শুরু করে। এক সময়ে ১০০০ পড়ুয়ার চিৎকারে যেখানে স্কুলচত্বর, ক্লাসরুম ভরে উঠত, এখন সেখানে শুধু নিস্তব্ধতা। পড়ুয়াদের পঠনপাঠনের সেই গুঞ্জনও নেই স্কুলে।