তথ্য অমিল, তাই ক্ষতিপূরণ অধরা

গত দশ বছরে ভারতে বিভিন্ন ওষুধ এবং টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ (ক্লিনিকাল ট্রায়াল) করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন ৪ হাজার ৫৩৪ জন। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তথ্য জানার অধিকারে মামলা করেছিল। তাতে এমনই রিপোর্ট  দিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:১২
Share:

গত দশ বছরে ভারতে বিভিন্ন ওষুধ এবং টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ (ক্লিনিকাল ট্রায়াল) করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন ৪ হাজার ৫৩৪ জন। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তথ্য জানার অধিকারে মামলা করেছিল। তাতে এমনই রিপোর্ট দিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া। তাতে বলা হয়েছে, ওষুধ কিংবা টিকার বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ১৯ হাজার১৮৪ জন। মৃতদের মধ্যে মাত্র ১৬০ জন ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন বলে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের আবেদন, ক্ষতিগ্রস্তদের সবাইকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গ এ ব্যাপারে কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে তার কোনও সাম্প্রতিক তথ্য নেই। তবে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৩-য় একটি হলফনামা দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। তাতে জানানো হয়েছিল, ২০০৫-এর জানুয়ারি থেকে ২০১২-র জুন পর্যন্ত সাত বছরের সময়সীমায় রাজ্যে ১২০টি ক্লিনিকাল ট্রায়ালে ২৩৫৯ জন রোগী অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁদের ভিতর মারা গিয়েছিলেন ৫৩ জন। এই ৫৩ জনের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু পরীক্ষামূলক ভাবে ওষুধ প্রয়োগের সঙ্গে-সঙ্গে হয়েছিল। তাই ক্ষতিপূরণও পেয়েছিলেন শুধু ওই পাঁচ জন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ৯৭ জন। কিন্তু ক্ষতিপূরণ পান শুধু ১৪ জন।

স্বাস্থ্য আন্দোলনে জড়িত সংগঠনগুলির অবশ্য অভিযোগ, কন্ট্রোলারের রিপোর্টে মৃত ও অসুস্থ হওয়ার পরিসংখ্যানে জল মেশানো রয়েছে। তাদের দাবি, মানুষের উপরে ওষুধ এবং টিকার পরীক্ষায় কত জন অসুস্থ হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন এবং ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন তার প্রকৃত তথ্য প্রকাশ্যে আনাই হয় না। ফলে ক্ষতিপূরণের জন্য কোনও দাবি বা আন্দোলন হয় না। সরকারের উপর চাপ তৈরি হয় না। কেউ বেআইনি ভাবে ক্লিনিকাল ট্রায়াল চালালে সেই সংস্থা বা চিকিৎসকের দৃষ্টান্তমূলক কড়া শাস্তির নজির এখনও পর্যন্ত নেই। এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য প্রকাশ্যে আনার দাবিতেই ২০১২ সালে সুপ্রিম কোর্টে মামলা ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

Advertisement

সংস্থার প্রতিনিধি অমূল্য নিধি-র কথায়, ‘‘কোন রাজ্যে কোন ট্রায়ালে কত জন মারা গিয়েছেন বা অসুস্থ হয়েছেন তা ড্রাগ কন্ট্রোলের রিপোর্টে আলাদা করে জানানো নেই।’’ ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে ২০১৪ সালে ক্লিনিকাল ট্রায়ালে অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছিলেন ৪৪৩ জন। ২০১৩ সালে এই সংখ্যাটা ছিল ৫৯০ জন, ২০১৫ সালে ৩৪১ জন এবং ২০১৬ সালে ২৫২ জন। তাঁদের মধ্যে ২০১৫ সালে ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন ৪ জন, ২০১৪ সালে ২১ জন এবং ২০১৩ সালে ৪৫ জন। ২০১৬ সালে মৃতদের কে কে ক্ষতিপূরণ পাবেন তা এখনও চূড়ান্তই করা হয়নি!

কেন অসুস্থ বা মৃতদের ভিতর এত কম লোক ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন তা জিজ্ঞাসা করা হলে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল জ্ঞানেন্দ্র সিংহ ‘নো কমেন্টস’ বলে ফোন নামিয়ে রাখেন।

ড্রাগ কন্ট্রোলের অন্য এক কর্তার কথায়, ‘‘ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলাকালীন কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা মারা গেলে ২৪ ঘণ্টার ভিতর তা দিল্লিতে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেলের অফিসে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা সংস্থার এথিক্স কমিটির জানানোর কথা। এখানেই গলদ। কারণ, অধিকাংশ কমিটিতে গবেষকদের প্রভাব থাকে। ট্রায়ালে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা মারা গেলে তারা দিল্লিতে জানায় না।’’ স্বাস্থ্য আন্দোলন কর্মী পুণ্যব্রত গুণের কথায়, ‘‘অনেক মানুষকেই ভুল বুঝিয়ে বা ভয় দেখিয়ে ক্লিনিকাল ট্রায়ালে নেওয়া হয়। আর্থসামাজিক ভাবে তাঁরা এতটাই পিছিয়ে যে অসুস্থ হলে আইনি লড়াই বা ক্ষতিপূরণ আদায়ের পথে যেতে পারেন না।’’

(শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন