Doctor

কতগুলো খুন, পঞ্চাশের পরে আর গোনেনি ডাক্তার

ঠিক নিজের হাতে খুন হয়তো নয়, তবে খুনি দলের সে ছিল পাণ্ডা। শিকার ছিল মূলত ট্যাক্সিচালক, ট্রাকচালকেরা। উত্তরপ্রদেশের কাসগঞ্জে ডাক্তারের দলের লোকেরা যাত্রী সেজে ট্যাক্সিতে উঠত।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২০ ০৪:৪২
Share:

দেবেন্দ্র শর্মা

ডাক্তার কতগুলো খুন করেছে, ডাক্তার নিজেও জানে না। কারণ সংখ্যাটা পঞ্চাশ পেরোনোর পরে সে গোনাই ছেড়ে দিয়েছিল!

Advertisement

ঠিক নিজের হাতে খুন হয়তো নয়, তবে খুনি দলের সে ছিল পাণ্ডা। শিকার ছিল মূলত ট্যাক্সিচালক, ট্রাকচালকেরা। উত্তরপ্রদেশের কাসগঞ্জে ডাক্তারের দলের লোকেরা যাত্রী সেজে ট্যাক্সিতে উঠত। নিরিবিলি কোনও জায়গায় ট্যাক্সি থামাত। তার পরে চালককে খুন করে ট্যাক্সিটা নিয়ে পালাত। মৃতদেহটা ভাসিয়ে দেওয়া হত হাজারা খালে। যে খাল থেকে কুমির উঠে এসে মাঝে মাঝে গ্রামবাসীদের ঘরবাড়িতে বিশ্রাম নেয়। ট্যাক্সিচালকের মৃতদেহ লোপাট করে দিত কুমিরের দল। আর ট্যাক্সিগুলো বেচে দেওয়া হত ২০-২২ হাজার টাকায়। এলপিজি সিলিন্ডার বোঝাই আস্ত ট্রাকও লুট হত একই ভাবে। চালককে মারা হত, ডাক্তারের ভুয়ো গ্যাস এজেন্সিতে নামানো হত সিলিন্ডার। ট্রাকগুলোকে মেরঠে নিয়ে গিয়ে ভেঙে ফেলা হত।

ডাক্তার-বাহিনীর কীর্তিকলাপের এই বর্ণনা দিচ্ছিলেন দিল্লি পুলিশের ডিসি (ক্রাইম) রাকেশ পাওয়েরিয়া। মঙ্গলবার দিল্লির বাপরৌলা এলাকা থেকে ‘ফেরার আসামি’ ডাক্তারকে গ্রেফতার করা পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের টেবিলে আনা হয়েছিল রাতে। সেই পর্ব শেষ হতে হতে ভোর। ঠান্ডা মাথায়, ‘তদন্তকারীদের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা’ করে, পরতে পরতে নিজের অপরাধের ঝুলি খুলে ধরে ‘ডাক্তার’ দেবেন্দ্র শর্মা। আর তখনই বলে, ‘‘কত জনকে মেরেছি, পঞ্চাশের পরে তা গোনা ছেড়ে দিয়েছিলাম।’’

Advertisement

দেবেন্দ্র সত্যিই ডাক্তার। বয়স ৬২। নিরীহ চেহারা, চশমা পরা, মাঝারি উচ্চতা। আয়ুর্বেদ ও সার্জারির ডিগ্রি রয়েছে তার নামের পাশে। মাঝে মাঝে ক্লিনিকও চালিয়েছে। কিন্তু ডাক্তার হিসেবে সুনামের বদলে তার পরিচিতি ‘বদনামে’। দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো রাজ্যে তার নামে মোট কতগুলো মামলা ঝুলছে, পুলিশও ঠিক জানে না। খুন, অপহরণ, কিডনি পাচার চক্রের সদস্য, ভুয়ো এলপিজি এজেন্সির ব্যবসা— অভিযোগ অজস্র। তেমনই এক খুনের মামলায় গত ১৬ বছর ধরে সে যাবজ্জীবন জেল খাটছিল জয়পুরের সেন্ট্রাল জেলে। গত জানুয়ারিতে ২০ দিনের প্যারোলে বেরিয়ে বেপাত্তা হয়ে যায় দেবেন্দ্র। সেই থেকে টানা তল্লাশি চালিয়ে গত মঙ্গলবার পুলিশ তার হদিস পায়।

দেবেন্দ্রের স্ত্রী-সন্তানেরা তার সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়েছিলেন বছর ষোলো আগেই। পুলিশ জানিয়েছে, উত্তরপ্রদেশে নিজের দেশের ভিটে হয়ে দিল্লিতে এসে প্রথমে মোহন গার্ডেনে এক পরিচিতের বাড়িতে উঠেছিল দেবেন্দ্র। তার পরে আত্মীয়া এক বিধবা মহিলাকে বিয়ে করে থাকতে শুরু করে বাপরৌলায়। দেবেন্দ্র জানিয়েছে, নতুন করে জীবন শুরুর চেষ্টা করছিল সে। আরম্ভ করেছিল জমি-বাড়ির কারবার। ইদানীং কনট প্লেসের ‘মার্শাল হাউস’ কিনতে ইচ্ছুক জয়পুরের এক ব্যবসায়ীর হয়ে দালালি করছিল। পুলিশ জানিয়েছে, দেবেন্দ্রের অন্ধকার জগতের খবর তার দ্বিতীয়া স্ত্রী জানতেন।

আলিগড়ের পুরেনি গ্রামে দেবেন্দ্রের আদি বাড়ি। বিএএমএস ডিগ্রি বিহারের সিওয়ানের। ১৯৮৪ সালে জয়পুরে গিয়ে সে একটা ক্লিনিক খোলে। দিব্যি চলছিল। ১৯৯২-এ গ্যাসের ডিলারশিপ নিতে গিয়ে ১১ লক্ষ টাকা লগ্নি করে ঠকে যায় দেবেন্দ্র। সেই বিপুল ক্ষতি সামলে তিন বছর পরে আলিগড়ে ছারা-য় নিজেই ভুয়ো এলপিজি সংস্থার কারবার খোলে। সম্ভবত সেই প্রথম বার দেবেন্দ্র পা বাড়ায় অন্ধকার জগতে। ১৯৯৪ থেকে জড়িয়ে পড়ে কিডনি পাচার চক্রে। জয়পুর থেকে বল্লভগড় হয়ে গুরুগ্রাম পর্যন্ত বিছিয়ে থাকা সেই চক্রের হয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ১২৫টি বেআইনি কিডনি প্রতিস্থাপন করে দেবেন্দ্র। প্রতি অস্ত্রোপচারের পারিশ্রমিক ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা।

এ সবের মধ্যেই আলিগড়ে বেআইনি গ্যাসের ব্যবসা ধরা পড়ায় দেবেন্দ্র গ্রেফতার হয়। তা সত্ত্বেও সে ২০০১-এ উত্তরপ্রদেশের আমরোহায় একই ব্যবসা ফেঁদে বসে এবং আবার গ্রেফতার হয়। তবে দ্বিতীয় বার গ্যাসের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার পরে জয়পুরের ক্লিনিকে বসতে শুরু করেছিল সে। ডাক্তারি চলেছিল টানা প্রায় দু’বছর। কিন্তু কাকপক্ষীতেও টের পায়নি, চেম্বারে বসা এই ডাক্তারবাবুই তখন আলিগড়ে ট্যাক্সি-ছিনতাইয়ের গ্যাং‌ চালাচ্ছে। তার কলকাঠিতেই খুন হচ্ছেন একের পর এক ট্যাক্সিচালক।

২০০৪-এ কিডনি পাচার চক্রের মামলায় জেলে যায় দেবেন্দ্র। ২০০২ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত অনেকগুলো খুনের মামলায় গ্রেফতার হয়। তার মধ্যে দোষী সাব্যস্ত হয় মাত্র ছ’সাতটায়।

ডাক্তার যদিও তখন গোনা ছেড়ে দিয়েছে!

আরও পড়ুন: শিক্ষায় সঙ্ঘ-ধ্বনি, নিয়ন্ত্রক সংস্থাতেও কি আরএসএস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন