ট্রেনে শৌচালয়ের ধারণা এল কোথা থেকে জানেন কি?

শৌচালয় ছাড়া দূরপাল্লার ট্রেন এখন ভাবাই যায় না। কিন্তু একটা সময় ছিল যখন শৌচালয়ের কোনও চিহ্ন মাত্র ছিল ট্রেনগুলিতে। কী ভাবে দূরপাল্লার ট্রেনগুলিতে শৌচালয়ের আবির্ভাব হল তার একটা সুন্দর কাহিনি রয়েছে। সেই কাহিনিটি কী জেনে নেওয়া যাক।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৬ ১৮:১১
Share:

শৌচালয় ছাড়া দূরপাল্লার ট্রেন এখন ভাবাই যায় না। কিন্তু একটা সময় ছিল যখন শৌচালয়ের কোনও চিহ্ন মাত্র ছিল ট্রেনগুলিতে। কী ভাবে দূরপাল্লার ট্রেনগুলিতে শৌচালয়ের আবির্ভাব হল তার একটা সুন্দর কাহিনি রয়েছে। সেই কাহিনিটি কী জেনে নেওয়া যাক।

Advertisement

১৮৫৩ সালে ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জের সময় ভারতে রেল পরিষেবা চালু হয়। এই পরিষেবা চালু হওয়ার ৫৫ বছর পর্যন্ত ট্রেনগুলিতে কোনও শৌচালয়ের ব্যবস্থা ছিল না। বিশেষ করে নিচু শ্রেণির যাত্রীদের জন্য এই ব্যবস্থার কোনও প্রয়োজনই মনে করতেন না রেলকর্তারা। তাঁরা মনে করতেন, যাত্রীরা ৫০ মাইলের বেশি যাত্রা করবেন না, অতএব, শৌচালয়ের প্রয়োজনই বা কী! কিন্তু ব্রিটিশ বাবুদের এই ধারণায় ভাঙন ধরিয়েছিলেন এক সাধারণ বাঙালি।

তিনি শ্রী অখিলচন্দ্র সেন।

Advertisement

সালটা ১৯০৯। কাজের সুবাদে ট্রেনে করে অখিলবাবুর কোথাও একটা যাওয়ার কথা ছিল। বাড়ি থেকে বেরনোর আগে স্ত্রী যত্ন করে তাঁকে কাঁঠাল খেতে দিলেন। প্রথমটায় ভেবেছিলেন একটা-দুটো খেয়েই রওনা দেবেন। কিন্তু স্ত্রীয়ের সঙ্গে ব্যবসা নিয়ে এমন আলোচনায় মেতে গিয়েছিলেন যে, কখন পাতে দেওয়া সমস্ত কাঁঠাল খেয়ে ফেলেছেন খেয়ালই করেননি তিনি।

যাই হোক, খাওয়া-দাওয়া সেরে তিনি একটা টাঙ্গা ডেকে স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দিলেন। সময়মতো ট্রেন এসে পৌঁছল স্টেশনে। তিনি ঝটপট উঠে পড়ে জানলার ধারের সিটে বসে পড়ে গা-টা এলিয়ে দিলেন। একেই পেট পুরে খাওয়া হয়ে গিয়েছে। তাই যাতে কোনও অঘটন না ঘটে সেই ভয় মনের মধ্যে চেপে বসেছিল।

ট্রেন চলতে শুরু করল। বেশ কিছু ক্ষণ চলার পর, তাঁর আশঙ্কাকে সত্যি করেই পেটের মধ্যে একটা ব্যাথা অনুভব করতে লাগলেন। অনেকগুলো কাঁঠাল খেয়েছিলেন তখন, ফলে হজমও ঠিক করে হয়নি। আরও খানিকটা যাওয়ার পর যেন ব্যাথাটা যেন আরও বাড়ল। এ দিকে ট্রেনে কোনও শৌচালয়ও নেই। তা হলে উপায়?

কী করবেন ভাবতে ভাবতে পরের স্টেশনেই নেমে পড়লেন। সেটি ছিল আহমেদপুর স্টেশন। এক দৌড়ে চলে গেলেন স্টেশনের শৌচালয়ে। সেখানে শৌচকর্ম সারতে সারতেই ট্রেনের গার্ড দিলেন হুইসেল বাজিয়ে। ব্যস! এক হাতে লোটা ও অন্য হাতে ধুতি ধরে ট্রেন ধরার জন্য পড়িমড়ি করে দৌড় লাগালেন অখিলবাবু। তত ক্ষণে ট্রেনের গতি বেড়ে গিয়েছিল। হুমড়ি খেয়ে প্ল্যাটফর্মের উপর পড়ে যান এক গাদা লোকের সামনে। সে দিন ভারী রাগ হয়েছিল ওই গার্ডের উপর। বাড়িতে ফিরেই একটি চিঠি লিখেছিলেন সাহেবগঞ্জের ডিভিশনাল অফিসারকে।


দিল্লির রেল মিউজিয়ামে রাখা অখিলবাবুর সেই চিঠি

চিঠিতে তিনি কী লিখেছিলেন? তাঁর বয়ানটা ছিল এ রকম—

ডিয়ার স্যর,

আই অ্যাম অ্যারাইভ বাই প্যাসেঞ্জার ট্রেন আহমেদপুর স্টেশন অ্যান্ড মাই বেলি ইজ টু মাচ সোয়েলিং উইথ জ্যাকফ্রুট। আই অ্যাম দেয়ারফর ওয়েন্ট টু প্রিভি। জাস্ট আই ডুয়িং দ্য নুইসেন্স দ্যাট গার্ড মেকিং হুইসেল ব্লো ফর ট্রেন টু গো অফ অ্যান্ড আই অ্যাম রানিং উইথ লোটা ইন ওয়ান হ্যান্ড অ্যান্ড ধোতি ইন দ্য নেক্সট হোয়েন আই অ্যাম ফল ওভার অ্যান্ড এক্সপোজ অল মাই শকিং টু ম্যান অ্যান্ড ফিমেল উইমেন অন প্ল্যাটফর্ম। আই অ্যাম গট লিভড‌্ আহমেদপুর স্টেশন।

দিজ টু মাচ ব্যাড, ইফ প্যাসেঞ্জার গো টু মেক ডাং দ্যাট ড্যাম গার্ড নট ওয়েট ট্রেন মিনিটস‌্ ফর হিম। আই অ্যাম দেয়ারফর প্রে ইওর অনার টু মেক বিগ ফাইন অন দ্যাট গার্ড ফর পাবলিক সেক। আদারওয়াইজ আই অ্যাম মেকিং বিগ রিপোর্ট টু পেপারস।”

(“আমি আহমেদপুর স্টেশনে পৌঁছলাম। কাঁঠাল খাওয়ার জন্য আমরা পেট ফুলতে শুরু করে। স্টেশনে নেমে শৌচকর্ম করতে যাই। কাজ শেষ করে উঠতে যাব, তখনি গার্ড ট্রেন ছাড়ার জন্য বাঁশি বাজালেন। এক হাতে লোটা অন্য হাতে ধুতি ধরে ট্রেন ধরার জন্য ছুট লাগালাম। আমি পড়ে গেলাম। স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষ ও মহিলারা আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। আহমেদপুর স্টেশনেই আমাকে অপেক্ষা করতে হল। এটা খুব খারাপ বিষয় হয়েছে। যদি কোনও যাত্রী শৌচকর্মের জন্য যায়, কয়েক মিনিট ট্রেনটাকে দাঁড় করাতে পারল না গার্ড? এই কারণেই আপনার কাছে আমার অনুরোধ ওই গার্ডের জরিমানা করা হোক, নাহলে এই খবরটা খবরের কাগজে দিয়ে দেব।”)

অখিলবাবুর ওই চিঠি আজও একটি ইতিহাস। তাঁর এই চিঠিই রেলে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিল। এর পরেই সমস্ত দূরপাল্লার ট্রেনগুলিতে শৌচালয়ের ব্যবস্থা করা হয়। তাঁর এই চিঠি নয়াদিল্লির রেলওয়ে মিউজিয়ামে আজও জ্বলজ্বল করছে।

আরও পড়ুন:
যে ভারতীয় ব্র্যান্ডগুলোকে সবসময়ই বিদেশি ভাবি আমরা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন