সত্যপাল মালিক। ফাইল চিত্র।
মাত্র ৪৫ মিনিট। তার মধ্যেই পাল্টে গেল উপত্যকার রাজনীতি। বুধবার বিরোধীরা সরকার গড়ার দাবি তোলার পৌনে এক ঘণ্টার মধ্যে ভেঙে দেওয়া হল জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভাই। যার ফলে আগামী বছর লোকসভার সঙ্গেই সে রাজ্যে বিধানসভা ভোট সেরে ফেলতে চাইছে নির্বাচন কমিশন।
পাঁচ মাস আগে কাশ্মীরে পিডিপি-বিজেপি জোট ভেঙে যাওয়ার পর থেকে তলে তলে সরকার গড়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল দু’পক্ষই। বিজেপি এক দিকে যখন সাজ্জাদ লোনকে সামনে রেখে সরকার গড়তে সক্রিয় হয়, তখন কংগ্রেস এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয় রাজ্য-রাজনীতিতে চিরশত্রু ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) এবং পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি)-কে। তার পরেই গতকাল সন্ধ্যায় আচমকা সরকার গড়ার দাবি জানিয়ে বসেন পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি।
রাজভবনের দাবি, ফ্যাক্স মেশিন খারাপ থাকায় পিডিপি নেত্রীর চিঠি হাতে পাননি রাজ্যপাল। আর বিরোধীদের অভিযোগ, মেহবুবা যে এত দ্রুত সরকার গড়ার দাবি জানাবেন, তা কেন্দ্র আঁচ করতে পারেনি। তাই মেহবুবার দাবি আসামাত্রই এক দিকে সময় কিনতে সাজ্জাদ লোনকে দিয়ে সরকার গড়ার পাল্টা দাবি জানিয়ে রাখে বিজেপি। অন্য দিকে তড়িঘড়ি রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁকে বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দেয় নরেন্দ্র মোদী সরকার। কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের অভিযোগ, ‘‘কাশ্মীর হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে দেখেই ওই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় কেন্দ্র।’’ যদিও রাজ্যপালের দাবি, কেউ সরকার গড়ার অবস্থায় ছিল না। উল্টে বিধায়ক কেনাবেচা চলছিল। তাঁর কথায়, ‘‘গত ক’দিন ধরেই বিধায়ক কেনাবেচার খবর আসছিল। কাউকে ঘুষ দিয়ে আবার কাউকে বন্দুকের নল দেখিয়ে দলে টানার চেষ্টা হচ্ছিল। তাই গতকাল শুভ দিন থাকায় বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’’ কিন্তু মেহবুবার দাবি ওঠার পরেই কেন তা করা হল, তা নিয়ে অবশ্য নিরুত্তর শাসক শিবির।
এরই মধ্যে আজ সকালে বিতর্ক বাধিয়ে বসেন বিজেপি নেতা রাম মাধব। এনসি এবং পিডিপি-র হাত মেলানোর পিছনে পাকিস্তানের মদত রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘গত মাসে পাকিস্তানের নির্দেশে দু’দল পঞ্চায়েত নির্বাচন বয়কট করেছিল। এখন সম্ভবত সীমান্তপার থেকে দু’দলের কাছে জোট করে সরকার গড়ার পরামর্শ এসেছে।’’ ওই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ এনসি নেতা ওমর আবদুল্লা কার্যত রাম মাধবের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, ‘‘আপনাদের হাতে র, আইবি, এনআইএ আছে (সিবিআই-ও আপনাদের পোষা পাখি)। ক্ষমতা থাকলে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ দেখান। না হলে মিথ্যা অভিযোগ তোলার খেলা বন্ধ করুন।’’ কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালার বক্তব্য, ‘‘পিডিপি বিজেপির সঙ্গে থাকলে শুভশক্তির জোট। আর কংগ্রেস বা এনসি-র সঙ্গে হাত মেলালেই অশুভ আঁতাঁত হয়!’’
বিজেপির একাংশও রাম মাধবের বক্তব্যে অসন্তুষ্ট হয়। সেই বার্তা পেয়ে ওমর আবদুল্লার উদ্দেশে রাম মাধব বলেন, ‘‘আপনি যখন বলছেন পাক যোগাযোগ নেই তখন তা মেনে নিলাম। আপনার দেশভক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছি না। তবে আশা করব সরকার গড়ার ব্যর্থ চেষ্টার মতোই আগামী নির্বাচনে দু’দল এক সঙ্গে লড়বে।’’