দিল্লির দুঃস্থ মজুর, শ্রমিক, গৃহ পরিচালকদের পাশে এ বার চিত্তরঞ্জন পার্ক মহিলা সংগঠনের সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালি মহিলারা।
সম্প্রতি দু’ দিন ব্যাপী এক বিনামূল্যে চিকিৎসা শিবির করলেন তাঁরা। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষাও করা হল।
বিষয়টির সলতে পাকানো শুরু হয়েছিল বহু দিন আগে। একদল বাঙালি গৃহবধূ বিনা পারিশ্রমিকে কোনও রকম সাহায্য ছাড়া একটি সংগঠন তৈরি করেন চিত্তরঞ্জন পার্কে ১৯৭৩ সালে। নাম ‘পূর্বশ্রী মহিলা সমিতি’। স্বল্পসংখ্যক মহিলা মিলে শুরু করলেও আজ তার পরিধি সুবিশাল। প্রায় চারশোর বেশি সভ্য সংখ্যা।
পূর্বশ্রী মহিলা সমিতির কর্মপ্রণালী গোটা বছর বিস্তৃত। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সমিতির সভাপতি করবী বসাক জানালেন “গরিব মজুর বাচ্চাদের গোটা বছর লেখাপড়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য আমরা সমিতির প্রাঙ্গনে একটি স্কুল নির্মাণ করেছি যেখানে বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়। এ ছাড়া গরিব মানুষদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা কেন্দ্র এবং বহুমুখী চিকিৎসা পরীক্ষাকেন্দ্রর ব্যবস্থা আছে যেখানে সব রকম পরীক্ষা বিনামূল্যে হয়ে থাকে।”
শুধু তাই নয়, বিয়ের পাত্র-পাত্রী খোঁজার জন্য ম্যারেজ অফিরক্ত ও অন্যান্য পরীক্ষাগার, নানা রকম সাংস্কৃতিক কাজ, ইত্যাদি সব কিছু করে চলেছে এই সমিতি। এই সমিতির একজন সক্রিয় সদ্যসা সুরকার শান্তনু মৈত্রর মা মঞ্জু মৈত্র জানালেন, “ছেলের কথায় মুম্বই গিয়েও থাকতে পারি না সমিতির টানে। গোটা বছর এত ধরনের সমাজকল্যাণমুলক কাজে আমরা নিজেদের ব্যস্ত রাখতে পারি। সমাজের এমন একটা শ্রেণীর উন্নতির জন্য আমরা কাজ করছি যাদের প্রতিনিয়ত আমাদের প্রয়োজন অথচ তাদের সমস্যা নিয়ে আমাদের কোনও চিন্তা নেই। এমন লোকদের জন্য আমরা কিছু করতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করি।”
শীতের দিল্লি, উচ্চশ্রেণীর লোকেদের কাছে দারুণ আরামদায়ক হলেও দুঃস্থ মানুষদের কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক। দিল্লির ঠান্ডায় বস্ত্রহীন মানুষদের পাশে পূর্বশ্রী মহিলা সমিতির এক নতুন উদ্যোগ ‘হাটে বাজারে।’ দৈনদিন জীবনে বহু জিনিস যা আমাদের পু্রনো বলে মনে হয় অথচ ফেলে দিতে মন চায় না সেই সব বহু ব্যবহৃত জিনিস মহিলা সমিতি চেয়ে নিয়ে আসে লোকের বাড়ি গিয়ে এবং তা ঠিকঠাক করে বিক্রি করেন মাত্র ৫ টাকা মূল্যের বিনিময়ে গরিব মানুষদের কাছে। উলের পোশাক, ব্যাগ, পোশাক, শাড়ি, বাচ্চাদের জামাকাপড় কিনতে ‘হাটে বাজারে’ নামের এই মেলায় ভিড় উপচে পড়ে। প্রতি বছর বড়দিনের আগে এই মেলা চিত্তরঞ্জন পার্কের এক বিশেষ আকর্ষণ।