poison

স্টাইরিনের বিষ কিন্তু এক দিনে মোছার নয়

বিষাক্ত স্টাইরিন ব্যবহার করে পলিস্টাইরিন তৈরির কারখানা কেন জনবহুল এলাকায় তৈরির ছাড়পত্র পেল?

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

রায়পুর শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২০ ০৪:৫২
Share:

গ্যাস দুর্ঘটনার পর পুলিশ উদ্ধারকার্যে নামে। ফাইল চিত্র।

ভোপাল সাক্ষী, বিশাখাপত্তনমের গ্যাস দুর্ঘটনার রেশ দু’এক দিনে শেষ হওয়ার নয়।

Advertisement

ডজন খানেক মানুষ তো প্রাণের বিনিময়ে যন্ত্রণা থেকে বেঁচে গেলেন। কিন্তু যে হাজারেরও বেশি মানুষ বিষাক্ত স্টাইরিন গ্যাস গিলেছেন, যাঁদের অনেকেই এখন হাসপাতালে, তাঁদের যে কড়া মাসুল দিতে হবে— ভোপাল তা বিলক্ষণ জানে। ছত্রিশ বছরে ভোপালের গ্যাস-পীড়িতদের একটা গোটা প্রজন্ম এখন প্রায় নিকেশ। তাঁদের অনেকেই পঙ্গু হয়েছেন ইউনিয়ন কার্বাইডের কারখানা থেকে ছড়িয়ে পড়া মিথাইল আইসোসায়ানেট (মিক)-এর বিষক্রিয়ায়। অনেকে পঙ্গু সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, নিজেরাও বা বেঁচেছেন ক’বছর? ছত্রিশটা বছর ধরে দেশের গণতন্ত্র ও আইনের সব দরজায় মাথা ঠুকেও বিচার পাচ্ছেন না লক্ষাধিক মানুষ। কত সরকার গেল-এল, সবাই বিদেশি কর্পোরেট বনাম আম-নাগরিকের লড়াইয়ে কর্পোরেটের পাশে। শীতের সেই রাতে বাতাসে ছড়িয়ে পড়া বিষবাষ্প গিলে লক্ষাধিক মানুষ যখন হাঁসফাঁস করছেন, প্রশাসন ব্যস্ত ছিল ইউনিয়ন কার্বাইডের কর্তাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে। সকালে পুলিশ এসেছিল খোঁজ নিতে। আমি আশা করব, ভোপালের অভিজ্ঞতা বিশাখাপত্তনমের হবে না। সরকার পাশে থাকবে। প্রাণঘাতী গ্যাসে এত মানুষের মৃত্যু, হাজারো মানুষের যন্ত্রণায় বুক ফাটা যাদের নিদারুণ অবহেলায়, বিচার হবে তাদের।

তবু প্রশ্ন ওঠে অনেক, উত্তরও তো জানা!

Advertisement

বিষাক্ত স্টাইরিন ব্যবহার করে পলিস্টাইরিন তৈরির কারখানা কেন জনবহুল এলাকায় তৈরির ছাড়পত্র পেল? সাধারণ মানুষের তো এলাকার কারখানায় দরজা ঠেলে ঢোকার অনুমতিটুকুও থাকে না। জানেনও না কীসের সেই কারখানা। অজান্তেই গ্যাস চেম্বারে বিষ-বন্দি হয়ে থাকেন তাঁরা। মানুষ যে সরকারকে নির্বাচিত করে ক্ষমতায় বসিয়েছে, তারাই ছাড়পত্র দিয়েছে বিষ-কারখানার। এমন একটি অবহেলার দায় কেন নেবে না প্রশাসন?

আরও পড়ুন: বিষক্ষয়ের পথ কি গোষ্ঠীর সংক্রমণই

দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির কাছে পরিবেশ, প্রকৃতি, প্রাণের চেয়ে মুনাফাই আগে। কী ভোপাল, কী বিশাখাপত্তনম— নিছক দুর্ঘটনা বলে ছাড় পেতে পারেন না সংস্থার কর্তারা। এত বিষাক্ত রাসায়নিক জমিয়ে রাখবেন, লকডাউনের অজুহাতে তার দেখভালের ব্যবস্থাটুকুও থাকবে না, ভাল্ব খুলে সেটা বাতাসে ছড়িয়ে যাবে— এই অবহেলার দায়ভার তাঁদের নিতেই হবে। আজকের যুগে এমন একটি গুরুতর বিষয় ইলেক্ট্রনিক নজরদারির বদলে স্রেফ শ্রমিকদের হাতে ফেলে রাখাটাও অপরাধের নামান্তর। আসলে এর জন্য যে খরচ, বেমালুম তা এড়িয়ে গিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এর বিচার চাই।

আরও পড়ুন: দেশে ফেরাতে টাকা কেন, প্রশ্ন রাহুলের

সন্দেহ নেই, সরকারের ঔদাসীন্যই কারাখানা কর্তৃপক্ষকে সুরক্ষা-খাতে নিয়মরক্ষার খরচটুকু করতে লুব্ধ করে। আসলে এ দেশে সুরক্ষা-বিধিই ততটা কঠোর নয়। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা জানেন, অবহেলায় প্রাণহানি হলেও দিব্যি গা বাঁচিয়ে বেরিয়ে আসা যায়। কারণ বিদেশি লগ্নিই অগ্রাধিকার সরকারের, জান-মাল পরে। চাই, বিশাখাপত্তনম ব্যতিক্রম গড়ুক।

(লেখক পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী)

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন