কাছাড় জেলার আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা নেই— গুমড়ায় জেএমবি নেতা জহিরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ঘাঁটি গেড়ে থাকলেও এখানকার সীমান্ত ঘুরে দেখে এমনই অভিমত বিধায়ক প্রতিনিধি দলের। তবে বিভিন্ন পরিকাঠামোগত ত্রুটি দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তাঁরা।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৭ বিধায়ক মঙ্গলবার কাছাড়ের সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। নেতৃত্বে ছিলেন প্রবীণ অগপ বিধায়ক ফণীভূষণ চৌধুরী। তিনি গুয়াহাটি ফিরে গিয়ে জানান, রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব কে ভি ইপিন তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। তাঁর হাতেই তাঁরা মুখ্যসচিবের উদ্দেশে লেখা বিধায়ক দলের রিপোর্ট তুলে দিয়েছেন।
কী আছে সেই রিপোর্টে?
ফণীবাবু জানিয়েছেন, কাটিগড়ার টুকরগ্রামে দু’টি সাসপেনসন-সেতু নির্মাণ খুবই জরুরি। এলাকাটি এক বিশেষ অবস্থানে। তিন দিক নদীতে ঘেরা। একদিক খোলা। সে দিকে আবার প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ। ফলে নদীপথই ওই এলাকায় বসবাসকারীদের একমাত্র ভরসা। তা-ও তাঁরা বসবাস করেন কাছাড় জেলায়। আর নদীপথে যোগাযোগ একমাত্র করিমগঞ্জ জেলার ভাঙ্গার সঙ্গে। টুকরগ্রামের এমন অবস্থানের দরুন সমস্যায় সীমান্ত রক্ষীরাও। নিয়মিত তাঁদের নৌকোয় যাতায়াত করতে হয়। কোনও সঙ্কটে প্রহরারত জওয়ানরা ক্যাম্পের সাহায্য চাইলে নদী পেরোতে গিয়েই সময় গড়িয়ে যাবে। তাই সে জায়গায় দু-দিকে দু’টি সাসপেনসন বা ব্রেইলি ব্রিজের সুপারিশ করেছেন ফণীবাবুরা। একটি করিমগঞ্জের ভাঙ্গার সঙ্গে, অন্যটি দিয়ে কাছাড়ের কাটিগড়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পরামর্শ তাঁদের।
এ ছাড়া, কাঁটাতারের বাইরে ১৭৬টি ভারতীয় পরিবারকে নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে বিধায়কদলটি। তাঁদের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএসএফ-এর বেঁধে দেওয়া সময়ে তাঁরা গেট পেরিয়ে মূল ভূখণ্ডে আসা-যাওয়া করেন। বিষয়টি যেমন তাঁদের জন্য সমস্যার, তেমনি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার পক্ষেও ঝুঁকিবহুল। তাই শীঘ্র তাঁদের কাঁটাতারের ওপার থেকে নিয়ে আসতে হবে। সে জন্য পুনর্বাসন প্রকল্পের সুপারিশ করা হয়েছে।
ফণীবাবু জানান, দুই অংশে মোট দেড় কিলোমিটার সীমান্তে আজও কাঁটাতার বসেনি। সেখানে দ্রুত বেড়া বসানো চাই। সীমান্ত সড়ক মেরামতির দিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে। রাস্তাঘাট বেহাল থাকায় সীমান্ত প্রহরায় সঙ্কট বাড়ছে। সে জন্য সিপিডব্লিউডি-কে অতিরিক্ত অর্থের ব্যবস্থা করতে হবে। ফ্লাডলাইটেও কোনও ধরনের গাফিলতি বরদাস্ত করা উচিত নয় বলে অভিমত তাঁদের। ফণীবাবু বলেন, ‘‘জেনারেটর ও সৌরবিদ্যুতের সাহায্যে সীমান্তে আলো জ্বালানো হচ্ছে বটে। তবে তাকে ফ্লাড লাইট বা আলোর বন্যা বলা যায় না।’’ সে জন্য রাজ্য সরকারের বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানি কাজ করে চলেছে বলে তাঁদের জানানো হয়েছে। সেই কাজ ত্বরান্বিত করার উপর জোর দিতে বলেন বিধায়করা।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলার আন্তর্জাতিক সীমান্ত পরিদর্শনের জন্য এ রকম মোট ৯টি বিধায়ক দল তৈরি করা হয়েছে। তাঁরা সবাই নিজেদের রিপোর্ট মুখ্যসচিবের কাছে পেশ করবেন। পরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সব মিলিয়ে একটি রাজ্য প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। তা কেন্দ্রের কাছে পেশ করা হবে। ফণীবাবু আশাবাদী, কাছাড় সীমান্তের পরিকাঠামোগত সমস্যাগুলি রাজ্য প্রতিবেদনে গুরুত্ব পাবে এবং কেন্দ্র সে সবের সমাধানে উদ্যোগী হবে।