ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সে এক আজব গ্রাম। গ্রামের ৯৯ শতাংশ বাসিন্দাই উপজাতি সম্প্রদায়ের। গাড়ি দূরের কথা, মোটরসাইকেলও দেখা যায় না সেখানে। বর্ষায় কাঁধে তুলতে হয় সাইকেল!
সরকারি অনুদানে মাত্র একটি টিউব-ওয়েল তৈরি হয়েছে। রাস্তা, বিদ্যুৎ নেই। সীমান্ত প্রহরায় সেখানে মোতায়েন জওয়ানও তাতে সমস্যায় পড়েন। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের টুকরগ্রামের নতুন বস্তি দিয়ে অবাধে চলে গরু পাচার।
প্রায় চার দশক আগে কুশিয়ারা নদী কান্দিগ্রাম থেকে গতিপথ বদলে টুকরগ্রামকে দু’ভাগে ভাগ করে দেয়। নদীর পশ্চিম তীরের নাম টুকরগ্রাম। পূর্ব দিকে নতুন বস্তি। নতুন বস্তি নথি অনুযায়ী কাছাড় জেলার হরিটিকর গ্রামের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু গ্রামবাসীদের যাতায়াত করতে হয় করিমগঞ্জের ভাঙ্গা দিয়ে। শুধু তাই নয়, গ্রামের বাসিন্দারা ঠিকানা জেলা কাছাড়। পোস্ট অফিস ভাঙ্গাবাজার।
উন্নয়ন থেকে বহু দূরে থাকা ওই গ্রামের বাসিন্দাদের চোখের সামনে দিয়েই বাংলাদেশে গরু পাচার করে চোরাকারবারিরা। পরোক্ষে তা স্বীকার করেছেন সীমান্ত প্রহরার দায়িত্বে থাকা কয়েক জন জওয়ানও। তাঁরা জানান, ভৌগোলিক ভাবে নতুন বস্তির অবস্থান জটিল। গ্রামে নেই বিদ্যুৎ। তাই সেখানকার সীমান্তে রাত পাহারা দেওয়া সমস্যার। তবে সীমান্তরক্ষীরা সজাগ থাকেন সব সময়ই।
গ্রামটিতে শতাধিক বাড়ি রয়েছে। জনসংখ্যা পাঁচ শতাধিক। ভোটারের সংখ্যা শ’তিনেক। গ্রামবাসীরা জানান, ভোটের সময় শুধু নেতাদের দেখা মেলে। উন্নয়নের আশ্বাসই শুধু দিয়ে যান। বাস্তবে কিছুই হয় না। গ্রামবাসীরা এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। তাই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে সকলে ভোট বয়কট করার কথা ভাবছেন। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, কাগজপত্রে তাঁদের গ্রামের নাম কাছাড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকায় সমস্যা বেড়েছে। গ্রামের যোগাযোগ করিমগঞ্জের সঙ্গে। তা-ই নতুনবাজার এলাকাটি করিমগঞ্জ জেলার সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। গ্রামবাসীরা জানান, সেখানে মাত্র একটি টিউব-ওয়েল রয়েছে। সেটিও গ্রামের ৫০০ বাসিন্দার পিপাসা মেটাতে পারে না। তাই গ্রামের মহিলারা কুশিয়ারা নদী থেকে জল নিয়ে আসেন। বিদ্যুৎ না থাকায় স্বাধীনতার ৬৭ বছর পরও লণ্ঠনের উপর ভরসা করতে হয়। মোবাইল ফোন চার্জ করাতে যেতে হয় করিমগঞ্জের ভাঙ্গায়। সে জন্য দিতে হয় ৫-১০ টাকা।