পাটজাত সামগ্রীর বিকাশে শিলচরে ‘জুট-পার্ক’ তৈরির উদ্যোগ বিশ বাঁও জলে।
চার বছর আগে শুরু হওয়া ওই প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত তৈরি হয়েছে একটি বড় দালানবাড়ি, কয়েকটি শেড। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, প্রকল্প গড়তে বরাদ্দ ৮ কোটি টাকার মধ্যে ইতিমধ্যেই ৭ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা বেসরকারি নির্মাতা সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছে ‘ন্যাশনাল জুট বোর্ড’।
শিলচরের বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, যে জায়গায় ওই জুট-পার্ক তৈরি হচ্ছে, তা শহর থেকে অনেকটা দূরে। যাতায়াতের সমস্যাও রয়েছে। নরসিংহপুর ব্লক অফিসের কাছে গ্রামের রাস্তা দিয়ে ৬-৭ কিলোমিটৈার যাওয়ার পর শান্তিপুরে টিলার উপর ওই পার্কের অবস্থান। ওই রাস্তায় কোনও গাড়ি যাতায়াত করে না। অটোরিকশা ভাড়া নিলে দিতে হবে শতাধিক টাকা। প্রশ্ন উঠছে, পাটজাত সামগ্রীর উৎপাদকদের পক্ষে অত টাকা অটো ভাড়া করা কী ভাবে সম্ভব? পার্কের জন্য তা হলে ওই জমি বেছে নেওয়া হল কেন? স্থানীয় সূত্রের খবর, জুট-পার্কের দরজা, নিরাপত্তারক্ষীদের থাকার জায়গা, ক্যান্টিনের কাজ মাঝপথে থেমে রয়েছে। তৈরি হয়নি কর্মী আবাসন, প্রয়োজনীয় অন্য পরিকাঠামো।
পার্কটি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল ‘আসাম গোল্ডেন ফাইবার জুটপার্ক প্রাইভেট লিমিটেড’। তার কাজকর্ম চলছে শিলচরে, প্রকল্পের উপদেষ্টা কবিতা সেনগুপ্তের বাড়িতে। তিনি জানান, পার্কের কাজ প্রায় শেষের মুখে। শ’খানেক মহিলাকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ৫ হাজার বর্গফুটের শেড তৈরি করা হয়েছে।
এ সবের জন্য এখনও পর্যন্ত কত টাকা খরচ করা হয়েছে? কবিতাদেবীর দাবি, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর নীলোৎপল চৌধুরী বলেন, ‘‘ওই হিসেব আমার কাছে নেই।” একই জবাব মিলেছে সংস্থার অন্যতম কর্তা সাহির জাভেদের কাছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সংস্থার চেকগুলিতে স্বাক্ষর করেন দু’জন ডিরেক্টর জানকী নুনিয়া ও তাপসী ভৌমিক। জানকী নুনিয়া ইংরেজি লিখতে-পড়তে পারেন না। তাপসী ভৌমিক শিলঙের বাসিন্দা। খুব প্রয়োজন না হলে তিনি শিলচরে আসেন না। নীলোৎপলবাবু জানান, নির্মাণকাজ শেষ হলে কোনও শিল্পপতি ওই পার্ক লিজ নিতে পারেন। ছোট ছোট ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও শেড ভাড়া নিতে পারে। পার্কটিতে স্থানীয় পাট ব্যবসায়ীরা এক ছাদের নীচে বসে কাজ করার সুযোগ পাবেন। এতে সহজেই তাঁরা বড় ক্রেতাদের কাছে পৌঁছতে পারবেন। লাভ হবে দু’পক্ষেরই। কিন্তু শান্তিপুরের মতো প্রত্যন্ত জায়গায় ওই জুট-পার্কে নির্মাতা-ক্রেতারা আদৌও ব্যবসা করতে আগ্রহী হবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। আশঙ্কা, ৮ কোটি টাকা খরচে তৈরি ওই পার্ক বাস্তবে জনশূন্য হয়ে পড়ে থাকবে না তো?