ছিটমহল বিনিময়ের পরে বেরিয়েছিল এলাকার বাসিন্দাদের বড় মিছিলও।
বাকি ছিটমহল বিনিময় হয়ে গেল। কিন্তু দহগ্রাম-আঙ্গরাপোতা রয়ে গেল একই জায়গায়। থেকে গেল তিনবিঘা করিডরও। অনান্য ছিটমহল বিনিময় হলেও, দহগ্রাম-আঙ্গরাপোতা নিয়ে কেন সিদ্ধান্ত হল না, সে প্রশ্নেই নতুন করে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিল ফরওয়ার্ড ব্লক। দলের বিধায়ক পরেশ অধিকারীর অভিযোগ, তিনবিঘা করিডরের কারণেই মেখলিগঞ্জের ওই এলাকা চোরাকারবারীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। চলছে অবাধে সীমান্ত পারাপার। এমনকী কুচলিবাড়ির মানুষ ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কায় ভুগছেন বলে বিধায়কের দাবি।
ছিটমহল বিনিময়ের পরে খুশির আবির খেলা মশালডাঙায়।
পরেশবাবুর প্রশ্ন, ‘‘সরকার কেন এই অঞ্চলের মানুষদের কথা ভাবল না সেটাই রহস্য। ছিটমহল বিনিময় যখন হল তখন দহগ্রাম-আঙ্গরাপোতাকে আলাদা ভাবে দেখা হবে কেন? আমরা সে জবাব চাই। এর প্রতিবাদে ধারাবাহিক আন্দোলন করা হবে।” ২৬ জুন তিনবিঘায় ‘শহিদ দিবস’ পালন ও জনসভা করে সরকারের ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দাদের আশা ছিল ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমেই করিডরের সমস্যা মিটে যাবে। তা আর হল না।” বর্তমানে তিনবিঘা করিডর দিয়ে দহগ্রাম-আঙ্গরাপোতার মানুষ অবাধে বাংলাদেশে যাতায়াত করতে পারেন। পরেশবাবুর দাবি, ‘‘দুষ্কৃতীরা অপরাধ করে দহগ্রামে চলে যায়। পুলিশের কিছু করার থাকে না।’’ দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বিষয়টি বিপজ্জনক বলে তাঁর দাবি।
দিনভর ছিল আনন্দের উন্মাদনা।
প্রশাসন সূত্রের খবর, মেখলিগঞ্জের কুচলিবাড়ি এলাকায় তিনবিঘা করিডর তৈরি করা হয় ১৯৯২ সালে। ভারতের মধ্যে থাকা বাংলাদেশি ছিটমহল দহগ্রাম-আঙ্গরাপোতার সঙ্গে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগের জন্য চুক্তি করে তিনবিঘা করিডর খুলে দেওয়া হয়। তিনবিঘা করিডর চালুর বিরোধিতায় কুচলিবাড়ি উত্তাল হয়ে ওঠে। ফরওয়ার্ড ব্লক ও বিজেপি প্রতিবাদ আন্দোলন করে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ২ জন আন্দোলনকারীর মৃত্যুও হয়। ওই দিনটি শহিদ দিবস হিসেবে পালন করেন স্থানীয় বেশ কয়েকটি সংগঠন। পরেশবাবু-সহ স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ করে জানান, ভারতের জমির উপর দিয়ে ওই করিডর তৈরি করে বাংলাদেশকে লিজ দেওয়া হয়। প্রথমে এক ঘণ্টা অন্তর করিডর খোলা রাখার কথা থাকলেও পরে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা তা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সুযোগ নিয়েই চলে চোরাকারবার।
ছবিগুলি তুলেছেন হিমাংশুরঞ্জন দেব।
ছিটমহলে হামলা
ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত স্থল সীমান্ত চুক্তি সই হওয়ার পরে ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই অশান্তির অভিযোগ। রবিবার রাতে কোচবিহারের দিনহাটা সংলগ্ন মশালডাঙা ছিটমহলে এক দল বাইরের দুষ্কৃতী স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। কয়েকটি বাড়িঘরে ভাঙচুর করা ছাড়া সেখানকার বাসিন্দারা যাতে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে ফিরে যান, সেই হুমকিও দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই ছিটমহল ভারতের অংশ হওয়ার পরে জমির দখল নেওয়ার জন্যই এই হামলা। হামলাকারীদের পিছনে প্রভাবশালী জমি-ব্যবসায়ীরা রয়েছে বলে তাদের আশঙ্কা। কিছু দিন ধরেই এই এলাকার জমি কেনার জন্য তারা নানা ফন্দি-ফিকির করছিল বলে বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন।