ক্যাচ না ফসকায়, সজাগ শ্রীসন্থ

মিসবা-উল হকের ব্যাট থেকে শর্ট ফাইন-লেগের দিকে বলটা উড়ে আসতে দেখে মাথাটা নাকি বিলকুল ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। ক্যাচ অবশ্য ফসকায়নি। বলটা শ্রীসন্থের তালুবন্দি হতেই লাফিয়ে উঠেছিল কাশ্মীর থেকে কোচি। ধোনির হাতেই প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেটাও পাকিস্তানকে হারিয়ে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

তিরুঅনন্তপুরম শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৬ ০৩:২৫
Share:

ভোটের মাঠে। খুদে সই শিকারির আবদার মেটাচ্ছেন বিজেপি প্রার্থী শান্তাকুমারন শ্রীসন্থ। শঙ্কুমুঘম বিচে। — নিজস্ব চিত্র।

মিসবা-উল হকের ব্যাট থেকে শর্ট ফাইন-লেগের দিকে বলটা উড়ে আসতে দেখে মাথাটা নাকি বিলকুল ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। ক্যাচ অবশ্য ফসকায়নি। বলটা শ্রীসন্থের তালুবন্দি হতেই লাফিয়ে উঠেছিল কাশ্মীর থেকে কোচি। ধোনির হাতেই প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেটাও পাকিস্তানকে হারিয়ে।

Advertisement

কাট টু ২০১৬। শান্তাকুমারন শ্রীসন্থ এখন ভোটের মাঠে। ধোনির জায়গায় এ বার তাঁর ক্যাপ্টেন অমিত শাহ। টুর্নামেন্টের নাম কেরল বিধানসভা ভোট। রাজ্যে বিজেপির প্রথম খাতা খোলার লক্ষ্যে এ বার ফিল্ডিং পজিশন, তিরুঅনন্তপুরম-সেন্ট্রাল বিধানসভা কেন্দ্র।

ভোট তালুবন্দি করতে সকাল থেকেই শ্রীসন্থ শঙ্কুমুঘম বিচের সামনে জেলেদের পাড়ায়। দেখলে কে বলবে, এই পেস বোলারই অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের সামনে আগ্রাসী হতেন। স্লেজিংয়ের জবাবে স্লেজিং বা ব্যাট ঘুরিয়ে ডিস্কো নাচতেও ছাড়তেন না। এখন তাঁর মুখেই আকুতি, ‘‘চেচি, শ্রীসন্থিনু ভোট চেইলে? প্লিজ!” (দিদি, শ্রীসন্থকে ভোট দেবে তো!) একের পর এক নিজস্বীর আবদার মেটাচ্ছেন। অটোগ্রাফের খাতা পেলে মজা করে জানাচ্ছেন, আঙুলে খুব ব্যথা। তার পরে সই করে লিখছেন, ‘জয়, জয়, জয় বিজেপি।’

Advertisement

প্রশ্নটা করা গেল, পিচ কেমন? স্যুইং মিলছে? ‘‘দারুণ। খুব সাড়া পাচ্ছি”, জবাব শ্রীসন্থের। ‘‘এই মানুষগুলোই প্রার্থনা করতেন আমি যাতে উইকেট পাই। এ বার ওঁদের কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার পালা।’’ মন দিয়ে মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনছেন। বলছেন, ‘‘পরিশ্রম করছি। মাঠের মতোই।’’ নতুন পাড়ায় ঢোকার আগে ঘামে জবজবে সাদা ফুল-শার্টের বুকের কাছটা টেনে ধরে ভিতরে ফুঁ দিলেন। যেমনটা নতুন ওভারের শুরুতে করতেন। সাদা তোয়ালেতে ভাল করে মুখের ঘাম মুছে নিলেন।

তখনই ফ্ল্যাশব্যাক ২০১৩ সালের আইপিএল। স্পট-ফিক্সিংয়ের অভিযোগে দিল্লি পুলিশ বিমানবন্দরে গ্রেফতার করল শ্রীসন্থকে। এই সাদা তোয়ালে কোমরে গুঁজেই নাকি মাঠ থেকে বুকিদের সঙ্কেত দিতেন তিনি। এক মাস পর তিহাড় থেকে মুক্তি পেলেও মাঠে ফেরা হয়নি। সুযোগ পেলেই ভোটের মাঠে কংগ্রেস-সিপিএম নেতারা সেই প্রসঙ্গ তুলছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভি এস শিবকুমারের কটাক্ষ, ম্যাচ গড়াপেটা করে মানুষকে ধোঁকা দেওয়া ছাড়া আর কোনও অভিজ্ঞতা নেই।

শ্রীসন্থের বন্ধু ও ম্যানেজার শ্যাম নাবাস মনে করালেন, ‘‘গত বছর দিল্লি হাইকোর্ট ওঁকে সব অভিযোগ থেকে ক্লিনচিট দিয়েছে।’’ ক্লাব ক্রিকেটে শ্রীসন্থের সতীর্থ শ্যামের যুক্তি, ‘‘সাম্প্রতিক অতীতে আর কোনও মালয়ালি শ্রীসন্থের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাফল্য পাননি। কেরলের মানুষ এখনও শ্রী-কে ভালবাসে।’’ কিন্তু বাস্তব হল, হাইকোর্ট নির্দোষ বললেও বিসিসিআই এখনও নিষেধাজ্ঞা তোলেনি। বিরোধীদের দাবি, সেই ‘লাইফটাইম ব্যান’ তোলার চেষ্টাতেই নাকি শ্রীসন্থ তাঁর বিজেপি-ঘনিষ্ঠ শ্বশুরমশাই হিরেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াতের মাধ্যমে অমিত শাহ-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কমিউনিস্ট পরিবারের ছেলে হয়েও বিজেপির টিকিটে ভোটে লড়তে রাজি হয়ে যান!

উড়িয়ে দিচ্ছেন শ্রীসন্থ। তাঁর দাবি, নরেন্দ্র মোদীকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই তিনি বিজেপিতে। গড়াপেটা নিয়ে তাঁর দাবি, ‘‘নির্দোষ ছিলাম। রাতে পার্টি করতাম, লাইফস্টাইল অন্য রকম ছিল। তাই ফেঁসে গিয়েছিলাম। এখন পাল্টে গিয়েছি। তিহাড়ে কাটানো এক মাস, বিয়ে ও মেয়ে আমাকে বদলে দিয়েছে।’’

সত্যিই কি পাল্টেছেন? কংগ্রেসের শশী তারুরকে ‘নকল আঁতেল’ বলে টুইট করেছেন। ক্রিকেট মাঠের মতো রাজনীতিতেও বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়ে না। ঘরোয়া ক্রিকেটে এক বার সচিন তেন্ডুলকরকে স্লেজিং করেছিলেন। শ্রীসন্থ ছাড়া আর কোনও ভারতীয় ক্রিকেটারের এমন দুঃসাহসের রেকর্ড নেই। এ বার বিজেপির রাজ্য সভাপতি প্রৌঢ় কে রাজশেখরনকে সচিনের সঙ্গে তুলনা করে বসেছেন। তা-ই নিয়ে ফেসবুক-টুইটারে হাসিমশকরা থামছেই না। মালয়ালি লেখক এন এস মাধবন বলছেন, ‘‘এ সব বললে সবাই হরভজন সিংহ হয়ে উঠবে।’’

আট বছর আগে আইপিএল-এ হরভজনের থাপ্পড় খেয়ে শ্রীসন্থের ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না ইতিহাসে ঢুকে গিয়েছে। ভোটের ফলের পরে শ্রীসন্থ কাঁদবেন না হাসবেন, আরব সাগরের ধারে এখন তারই অপেক্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন