বিজেপির দ্বন্দ্বে ইন্ধন মমতার

রীতিমতো রাজনাথ সিংহ, সুষমা স্বরাজ, নিতিন গডকড়ীদের নাম করে প্রশ্ন তুললেন, মোদী-শাহের নেতৃত্বে আদৌ কি যোগ্য সম্মান পাচ্ছেন বিজেপির বর্ষীয়ান নেতারা?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৫৭
Share:

ব্রিগেডে মমতা। —নিজস্ব চিত্র।

তিন রাজ্যে সদ্য ক্ষমতা হারানোর জেরে এমনিতেই প্রশ্নের মুখে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের নেতৃত্ব। শরিকদের পাশাপাশি মুখ খুলছেন দলের বিক্ষুব্ধরাও। বিজেপির অভ্যন্তরের সেই অসন্তোষকেই আজ ব্রিগেডের বিরোধী মঞ্চ থেকে সুকৌশলে উস্কে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রীতিমতো রাজনাথ সিংহ, সুষমা স্বরাজ, নিতিন গডকড়ীদের নাম করে প্রশ্ন তুললেন, মোদী-শাহের নেতৃত্বে আদৌ কি যোগ্য সম্মান পাচ্ছেন বিজেপির বর্ষীয়ান নেতারা?

Advertisement

মোদী-ঝড় যে স্তিমিত, সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনেই তা স্পষ্ট। মোদী-শাহ তাঁদের দলে যত কোণঠাসা হচ্ছেন, ততই শরিক নেতৃত্বের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে শুরু করেছেন বিজেপির অন্য নেতারা। আজ ব্রিগেডে মমতা বলেন, ‘‘বিজেপির কাছে জানতে চাই, তারা কি দলের কোনও নেতাকে আদৌ সম্মান দেয়? যেমন রাজনাথ সিংহ? নিতিন গডকড়ী? শত্রুঘ্ন সিন্‌হা? যশবন্ত সিন‌্‌হা? অরুণ শৌরি? নির্বাচন এগিয়ে আসছে। তাই এখন সম্মিলিত নেতৃত্বের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনের পরে সব ভুলে গিয়ে অন্য নেতাদের ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে।’’

মমতার সুরেই সরব হন মঞ্চে উপস্থিত শত্রুঘ্ন সিন্‌হা। যিনি বিজেপির টিকিটেই নির্বাচিত সাংসদ। ‘বিহারিবাবু’ বলেন, ‘‘নোট বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত যে হয়েছে, তা লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশীর মতো বর্ষীয়ান নেতারাই জানতেন না। পরে তো শুনেছি, খোদ অর্থমন্ত্রী পর্যন্ত অন্ধকারে ছিলেন।’’

Advertisement

বেশ কিছু দিন ধরেই নানা ভাবে মোদী-শাহ নেতৃত্বের প্রতি প্রকাশ্যে অনাস্থা দেখাচ্ছিলেন নিতিন গডকড়ী। প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতির ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ সঙ্ঘের একাংশও। সঙ্ঘের মহারাষ্ট্রের কৃষক নেতা কিশোর তিওয়ারি সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবতকে চিঠি লিখে অবিলম্বে গডকড়ীকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরার

আর্জি জানিয়েছেন। বিজেপির আর এক প্রবীণ নেতা সঙ্ঘপ্রিয় গৌতম প্রস্তাব দিয়েছেন, উপপ্রধানমন্ত্রী করা হোক গডকড়ীকে। অমিত শাহকে সরিয়ে মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানকে বিজেপি সভাপতি এবং যোগী আদিত্যনাথের পরিবর্তে রাজনাথকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী করার প্রস্তাবও তিনি দিয়েছেন দলকে।

গডকড়ীর মতো প্রকাশ্যে না হলেও, বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতৃত্ব ও অসন্তুষ্ট শরিকদের কাছে তলায় তলায় ক্রমশ নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াচ্ছেন রাজনাথ। সুষমা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী লোকসভা ভোটে তিনি লড়ছেন না। অনেকে বলছেন, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের একটি বড় অংশের অসন্তোষ এখানেই স্পষ্ট। বছর দেড়েক আগে রাহুল গাঁধী ঘরোয়া মহলে জানিয়েছিলেন, ২০১৯-এর নির্বাচনে বিজেপির আসন দেড়শোর নীচে নেমে গেলে রাজনাথ, সুষমা বা গডকড়ীকে প্রধানমন্ত্রী করার চাপ আসবে এনডিএ-এ শরিকদের ভিতর থেকেই। যদিও গত এক বছরে পরিস্থিতি পাল্টেছে। বিরোধীরা একজোট হয়ে মোদীকে হারানোর স্বপ্ন দেখছেন। সেই লক্ষ্যেই আজ বিজেপির অভ্যন্তরের অসন্তোষকে উস্কে দেন মমতারা।

নেতৃত্বের প্রতি রোষ বাড়ছে দেখেই সম্প্রতি দিল্লিতে দলীয় সম্মেলনের আগে শীর্ষ তথা বিক্ষুব্ধ নেতাদের ভোট সংক্রান্ত একাধিক কমিটির দায়িত্ব দিয়েছেন অমিত শাহ। লক্ষ্য একটাই, বিক্ষুব্ধদের দলীয় কাজে ব্যস্ত রাখা। যাতে লোকসভার আগে অন্তত অসন্তোষ প্রকাশ্যে মাথাচাড়া দিতে না পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন