প্রতিবাদে আছে, ইস্তফার দাবিতে নেই তৃণমূল

ধর্মতলায় একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিজেপি-কে সিপিএম এবং কংগ্রেসের সঙ্গে একাসনে বসিয়ে ‘হ য ব র ল’ অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন ‘দাঙ্গাবাজদের’ এ রাজ্যে কোনও জায়গা নেই। কিন্তু আজ তাঁর একঝাঁক সাংসদকে যে নির্দেশ দিয়ে দিল্লি পাঠালেন নেত্রী, তাতে বিজেপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রশ্নে প্রতিবাদ জানানোর কথা আছে। কিন্তু চলতি বাদল অধিবেশনে কংগ্রেসের সঙ্গে গলা মিলিয়ে সুষমা স্বরাজ বা বসুন্ধরা রাজের পদত্যাগ দাবির নামগন্ধও নেই।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৫ ০৩:২০
Share:

বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার সংসদ ভবনে। ছবি: প্রেম সিংহ।

ধর্মতলায় একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিজেপি-কে সিপিএম এবং কংগ্রেসের সঙ্গে একাসনে বসিয়ে ‘হ য ব র ল’ অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন ‘দাঙ্গাবাজদের’ এ রাজ্যে কোনও জায়গা নেই। কিন্তু আজ তাঁর একঝাঁক সাংসদকে যে নির্দেশ দিয়ে দিল্লি পাঠালেন নেত্রী, তাতে বিজেপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রশ্নে প্রতিবাদ জানানোর কথা আছে। কিন্তু চলতি বাদল অধিবেশনে কংগ্রেসের সঙ্গে গলা মিলিয়ে সুষমা স্বরাজ বা বসুন্ধরা রাজের পদত্যাগ দাবির নামগন্ধও নেই।

Advertisement

দলীয় সাংসদদের প্রতি নেত্রীর নির্দেশ, ব্যপম কেলেঙ্কারিতে ‘নিরপরাধ মানুষের’ মৃত্যুর তদন্ত দাবি করতে হবে। কিন্তু ‘ললিতগেট’ নিয়ে নৈব নৈব চ। এমনকী ব্যপম কাণ্ডে সার্বিক তোপের মুখে যিনি, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সেই শিবরাজ সিংহ চৌহানের বিরুদ্ধেও তৃণমূল সরাসরি কোনও আক্রমণ শানাবে না বলেই আপাতত ঠিক হয়ে আছে। এই প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদেরা সাফ বলেছেন, কোনও ব্যক্তিকে আক্রমণ নয়, তাঁরা সার্বিক প্রতিবাদ করবেন।

অর্থাৎ, ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’। গত মাসে ললিত মোদী বিতর্কে সুষমার নাম জড়িয়ে যাওয়ার পর নীরবতাই বজায় রেখেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এমনকী তাঁর নির্দেশ ছাড়াই সাংসদ সৌগত রায় সুষমার পদত্যাগের দাবি তোলায় ক্ষুব্ধ হন নেত্রী। তখন রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ ব্রায়েনকে দিয়ে বলানো হয় যে, সৌগতবাবু দলের মুখপাত্র নন। তিনি যা বলেছেন তা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত, দলের নয়। তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়, কংগ্রেস-সহ বাকি বিরোধী দলগুলি সুষমা তথা মোদীর দিকে তির ছুড়লেও, মমতা এখন তা চান না।

Advertisement

সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি-বিরোধী ভাবমূর্তি তুলে ধরাটা জরুরি তৃণমূলের কাছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের কাছে যাতে ভুল বার্তা না যায়, দলের নেতাদের তা দেখার নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রী। তবে অনেকের মতে, মমতা এমন কিছুও করতে চান না, যাতে সারদা-কাণ্ডে সিবিআই–এর সাঁড়াশি ফের শক্ত হয়ে ওঠে। তাই এই মধ্যপন্থার নির্দেশ।

আজ লোকসভায় ব্যপম কেলেঙ্কারির পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবিতে সৌগত রায় একটি মুলতুবি প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। পরে তিনি বলেন, ‘‘নবান্নের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, ব্যপম নিয়ে যে ভয়ঙ্কর মৃত্যুর ঘটনা একের পর এক ঘটে চলেছে, তার বিরুদ্ধে সংসদে আওয়াজ তুলতে। তাঁর মতে, এটি ঠান্ডা মাথায় খুনের ঘটনা। আমরা চাই ব্যপম-কাণ্ডে দোষীদের দ্রুত শাস্তি হোক। অনন্তকাল ধরে তো তদন্ত চলতে পারে না।’’ লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘কারও নাম তুলে আক্রমণের পক্ষপাতী নই আমরা। নেত্রীর নির্দেশমতো সরকারের সার্বিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হব। তা ছাড়া অধিবেশন চালানোর মূল দায়িত্ব সরকার পক্ষের উপরেই বর্তায়। সরকারই ঠিক করুক, তারা আলোচনার পরিবেশ তৈরি করবে কি না।’’

রাজ্যসভায় আজ বসপা নেত্রী মায়াবতী দুর্নীতিতে জড়িত সমস্ত নেতা-মন্ত্রীর অবিলম্বে পদত্যাগ চেয়ে গলা ফাটিয়েছেন। ব্যপম ‘জাতীয় দুর্নীতি’ বলে দাবি করেছেন তিনি। কিন্তু তৃণমূল সাংসদেরা নীরবই থেকেছেন। পরে ডেরেক বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে সমস্ত বিরোধী দলের যোগাযোগ রয়েছে। কথা বলেই আমরা সরকার-বিরোধিতার কৌশল স্থির করেছি। আজ মায়াবতী বিরোধীদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। কাল দেবেন সপা-র রামগোপাল যাদব।’’ কিন্তু যে রাজ্যসভায় সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, সেখানেও কি সুষমা-বসুন্ধরাদের কাঠগড়ায় তুলবে না তৃণমূল? ডেরেকের জবাব, ‘‘ব্যক্তি আক্রমণ নয়। আমরা দুর্নীতি-বিরোধিতার একটা বড় ছাতার তলায় সব বিরোধীকে এককাট্টা করতে চাই।’’

গত কাল ধর্মতলার সমাবেশে ছিলেন না। দিল্লিতে নিজের বাংলোয় শহিদ বেদী গড়ে একান্তে একুশে জুলাই পালন করেছিলেন মুকুল রায়। নেত্রীর সঙ্গে পুরনো সমীকরণ আর নেই। বাদল অধিবেশন নিয়ে তাঁর নির্দেশ সম্পর্কে কী বলছেন রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রাক্তন দলনেতা? মুকুলের কথায়, ‘‘তৃণমূলের অবস্থানই আমার অবস্থান। সে যা-ই হোক। যত দিন দলে আছি, আমার অন্য অবস্থান থাকতে পারে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন