সৌগতকে নস্যাৎ করে যেচে সুষমার পাশে তৃণমূল

এক মোদীর পাশে দাঁড়িয়ে বিপাকে পড়েছে অন্য মোদীর দল! সেই বির্তকে আচমকাই নিজেদের জড়িয়ে নিল তৃণমূল! দলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়ের বক্তব্য খণ্ডন করে প্রকারান্তরে সুষমা স্বরাজের পাশেই দাঁড়াল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৫ ০৩:৩৭
Share:

এক মোদীর পাশে দাঁড়িয়ে বিপাকে পড়েছে অন্য মোদীর দল! সেই বির্তকে আচমকাই নিজেদের জড়িয়ে নিল তৃণমূল! দলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়ের বক্তব্য খণ্ডন করে প্রকারান্তরে সুষমা স্বরাজের পাশেই দাঁড়াল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। যার জেরে মোদী-মমতার আঁতাঁত নিয়ে ফের কটাক্ষ করার সুযোগ পেয়ে গেল সিপিএম!

Advertisement

আইপিএল-কাণ্ডে জড়িত ললিত মোদীকে ভিসা পেতে সাহায্য করে তোপের মুখে পড়েছেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা। স্বচ্ছ প্রশাসনের কথা বলে ক্ষমতায় আসা নরেন্দ্র মোদী সরকারের এক প্রথম সারির মন্ত্রী কেন আর্থিক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এক ক্রিকেট-কর্তার পাশে দাঁড়িয়েছেন, সেই প্রশ্ন তুলেই সুষমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে বিরোধীরা। এই ঘটনা নিয়ে রবিবার একটি সর্বভারতীয় চ্যানেলে প্রতিক্রিয়া দিতে দিয়ে সৌগতবাবু বলেছিলেন, ‘‘অপরাধে জড়িত এক ব্যক্তিকে সাহায্য করেছেন সুষমা স্বরাজ। এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছ থেকে এই পদক্ষেপ প্রত্যাশিত নয়। মন্ত্রীর পদ থেকে তাঁর ইস্তফাই দেওয়া উচিত।’’ কংগ্রেস এবং বামেরা ইতিমধ্যে ঠিক এই দাবিই তুলেছে। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব এত সহজে সৌগতবাবুর বক্তব্য মেনে নেননি!

বর্ষীয়ান সাংসদের ওই বক্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর প্রবীণ সহকর্মী ললিত-কাণ্ডে যে মন্তব্য করেছেন, তা তাঁর ‘ব্যক্তিগত মত’। ডেরেকের মতে, ‘‘এটা দলের বক্তব্য নয়। উনি আমাদের দলের মুখপাত্রও নন।’’ আপাতত বিদেশে-থাকা ডেরেক পরে এই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, সাংসদ সৌগতবাবুর তিনি ভক্ত। কিন্তু আগেও বেশ কয়েক বার দলের সঙ্গে আলোচনা না-করেই সৌগতবাবু প্রকাশ্যে মতামত জানিয়ে দেওয়ার ভুল করেছেন। ডেরেকের কথায়, ‘‘এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। যা নিয়ে দলের মধ্যে এখনও কোনও আলোচনা হয়নি। তার আগেই সৌগতবাবু যা প্রকাশ্যে বলেছেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত মত হতে পারে।’’

Advertisement

সৌগতবাবু অবশ্য ডেরেকের কথায় কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি। কিন্তু দল আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে তাঁর মত খারিজ করে দেওয়ার পরেও তিনি নিজের কথা প্রত্যাহার করেননি। যা বলেছিলেন, তা অস্বীকার করার পথেও হাঁটেননি। বরং সৌগতবাবুর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে বলা হয়েছে, অন্যায়কে অন্যায় বলা কীসের অন্যায়? অপরাধে অভিযুক্ত এক জনকে সাহায্য করার অন্যায় নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তৃণমূল নেতৃত্বের কোথায় অসুবিধা হচ্ছে, তা ভেবেও বিস্মিত সৌগতবাবুর ঘনিষ্ঠ জনেরা! তাঁদেরই এক জনের আক্ষেপ, ‘‘কোনও স্বার্থ ছা়ড়া কেউ কি সৌগতদা’র ওই বক্তব্যকে যেচে খণ্ডন করতে যায়? রাজনীতিটা এই জায়গায় পৌঁছেছে!’’

এখান থেকেই অস্ত্র কুড়িয়ে নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধতে ছাড়ছে না সিপিএম। দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের প্রশ্ন, এত দিন তৃণমূল নেতারা বলে আসছিলেন কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক বা রাজ্যের উন্নয়নের প্রশ্নে তাঁরা পারস্পরিক সহযোগিতা করবেন। কিন্তু এই ঘটনায় কেন্দ্র-রাজ্য বা তৃণমূল-বিজেপি’রও তো কোনও ব্যাপার নেই। তা হলে কেন আগ বাড়িয়ে ডেরেককে বিবৃতি দিতে হল? সেলিমের কথায়, ‘‘আগে তৃণমূলে থেকে দলনেত্রীর বিরুদ্ধে মুখ খোলা যেত না। এখন নরেন্দ্র মোদী বা তাঁর মন্ত্রিসভার কোনও সদস্যের বিরুদ্ধেও কেউ মুখ খুলতে পারবেন না! এমনকী, সৌগতবাবুর মতো বর্ষীয়ান নেতাও না!’’ তাঁর আরও কটাক্ষ, ‘‘রাজ্যে কত ঘটনা ঘটে যায়। শাসক দল তখন আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয় না। এই ঘটনায় বিবৃতি দিয়ে তারা বুঝিয়ে দিল, সারদা-সহ নানা পাপের বোঝা এমন ভাবে তাদের কাঁধে চেপে আছে, নরেন্দ্র মোদীর দলই তাদের ত্রাতা!’’

বিদেশমন্ত্রী সুষমার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতার ব্যক্তিগত রসায়ন মধুর। সুষমা নিজে আসরে না নামলে মোদীর সঙ্গে মমতার সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর সম্ভব হত না। বিজেপি-ও রাজ্যসভায় বিল পাশ করানোর জন্য মমতার দলের মুখাপেক্ষী। এই রসায়ন যে আচমকা এমন সু-ললিত পথে সৌগতবাবুকে ‘বলি’ দিয়ে বিরোধীদের হাতে হাতিয়ার তুলে দেবে, কে জানত!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন