নাথু লা-য় তুষার ঝড়ে পর্যটকেরা, ত্রাতা সেনা

গরম জল চাই এক্ষুনি। গরম দুধও। চা করতে হবে। ওষুধ দরকার। ডাক্তার কোথায়? 

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:৫৫
Share:

রক্ষাকর্তা: আটক পর্যটকদের উদ্ধার করছেন জওয়ানেরা। নিজস্ব চিত্র

যে হাত বন্দুক ধরে, সেই হাতের আড়ালেই তখন ওম খুঁজছে বাচ্চাগুলো।

Advertisement

গরম জল চাই এক্ষুনি। গরম দুধও। চা করতে হবে। ওষুধ দরকার। ডাক্তার কোথায়?

হাতগুলো ব্যস্ত। স্লিপিং ব্যাগ লাগবে অনেক। এত লোক শোবে কোথায়? মহিলারা আছেন, বৃদ্ধরা, বাচ্চারা। ব্যারাকেই বরং ব্যবস্থা হোক। আর ব্যারাকে যারা থাকে, তারা না-হয় বাইরে তাঁবু খাটিয়ে থাকবে একটা রাত। রক্ত জমিয়ে দেওয়া ঠান্ডায়। বরফের উপরে। রাস্তা থেকে বরফও তো সরাতে হবে! এত লোক যাবে কোথায়?

Advertisement

‘এত’ মানে প্রায় তিন হাজার! ভারতীয় এবং বিদেশি। শুক্রবার যাঁরা ঘুরতে গিয়েছিলেন ভারত-চিন সীমান্তের নাথু লা-য়। ফেরার পথে প্রবল তুষারঝড়ে আটকে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে যাঁরা খুঁজছিলেন আশ্রয়। কাঁদছিলেন আতঙ্কে। আর তখনই কিছুটা দূরের ছাউনি থেকে এসে পড়েছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক ঝাঁক জওয়ান-অফিসার। তার পরের দৃশ্যগুলোর বর্ণনা পর্যটকেরা যেমন দিয়েছেন, তেমনই লিখে দেওয়া হল প্রথমে।

সিকিম পর্যটন দফতর সূত্র জানাচ্ছে, শুক্রবার সকাল থেকে ১২টা পর্যন্ত অন্তত সাড়ে পাঁচশো গাড়ি পর্যটকদের নিয়ে নাথু লার দিকে গিয়েছিল। তার একটু পরেই বরফ পড়তে শুরু করে। বহরমপুরের পর্যটক সন্দীপ পালের কথায়, ‘‘গাড়িচালক বলেছিলেন, নাথু লা থেকে তখনই বেরিয়ে না-এলে আটকে পড়ব। ছাঙ্গু পর্যন্ত এসে সত্যিই আটকে গেলাম। তত ক্ষণে জোরে বরফ পড়ছে। হাওয়া দিচ্ছে। কাঁপছি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ঝুপ করে চার দিক অন্ধকার। গাড়ির ছাদ, বনেট সব সাদা। কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। পিছনে শ’দুয়েক গাড়ির লাইন। চেঁচামেচি। শ্বাসকষ্টও হচ্ছিল। সে সময়েই দেখলাম, সেনা জওয়ানেরা এক-একটি গাড়ির কাছে এসে পর্যটকদের আশ্বস্ত করছেন।’’

পর্যটকদের প্রথমেই কাছের তাঁবুতে নিয়ে যান জওয়ানেরা। তার পর বিশেষ গাড়িতে রাস্তার বরফ কেটে কয়েকশো ফুট নীচের দু’টি ব্যারাকে। সেনার ব্রিগেডিয়ার কে এস ধাদোয়াল বলেন, ‘‘আড়াই হাজারেরও বেশি পর্যটককে কয়েক দফায় ১৭ মাইলের ছাউনিতে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।’’ বাকিদের ১৩ মাইলের কাছে অন্য একটি সেনা ব্যারাকে। পর্যটকেরা পৌঁছতেই ব্যবস্থা হয় শীতবস্ত্র, গরম পানীয় আর খাবারের। প্রায় নব্বই জন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়। দিতে হয় অক্সিজেনও। পারদ তখন নেমে যাচ্ছে শূন্যেরও চার ডিগ্রি নীচে।

শনিবার সকালে ফের রাস্তার বরফ সরিয়ে দফায় দফায় গ্যাংটকে রওনা করে দেওয়া হয় পর্যটকদের। যাঁরা তখন জানেন, বিপদ যদি আসেও, এগিয়ে আসবে ওই হাতগুলোই!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement