সীমান্ত হাটে বিকোচ্ছে শুঁটকি। বৃহস্পতিবার ত্রিপুরা-বাংলাদেশ সীমান্তের সীমান্ত হাটে।—নিজস্ব চিত্র।
সকাল থেকে মুশলধারে বৃষ্টি। পাতে খিচুড়ির সঙ্গে ইলিশ না হলে হয়! এ দিকে এ পার বাংলার মতো ত্রিপুরাতেও যে পদ্মার রুপোলি শস্যের হাহাকার। শেষে খবর এল হঠাৎই— নোনা ইলিশ উঠেছে! কমলাসাগর সীমান্তের হাটে।
ইলিশ না হোক, ইলিশের শুঁটকি বা কম কী! অনেকে একে নোনা ইলিশও বলেন। নুন দিয়ে মাছ শোকানো হয়, তাই। খবরটা প্রায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল আশপাশে। ব্যস! ভিড় আর দেখে কে।
আগরতলা থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে কমলাসাগর সীমান্ত। ও পারে বাংলাদেশ। আজই প্রথম হাট বসেছে সেখানে। বিক্রেতাদের মধ্যে দু’পারের মানুষই রয়েছেন। বাজারের শুভারম্ভ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা ছিলই। উৎসাহে বাড়তি ইন্ধন দিল নোনা ইলিশ।
স্কুল ছুটি হয়েছে কি হয়নি, দে দৌড়। বৃষ্টির মধ্যেই কোনও মতে ব্যাগ দিয়ে মাথা আড়াল করে হাটে ভিড় করল কচিকাঁচারা। সীমান্তের ও পারের খুদেদেরও দেখা গেল হইচই করে কাঁটাতারের কাছে ভিড় জমাতে। হাট দেখতে এসেছিল তারাও। সে সঙ্গে যদি এক ফাঁকে হাটে ঢোকা যায়, সে চেষ্টাও করছিল অনেকে।
বিক্রেতারাও মজা করে বেচা-কেনা করলেন। বাংলাদেশ থেকে দোকানিরা এসেছিলেন ফল, সবজি, কেক-বিস্কুট, প্লাস্টিকের জিনিস নিয়ে। আর তাঁরা এনেছিলেন শুকনো মাছ।
বাংলাদেশ থেকে বেচাকেনা করতে এসেছিলেন মুস্তাফা হারুন নামে এক ব্যবসায়ী। খুব অল্প দামে সরকারকে নিজের জমি দিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। হাটের জমিতে তাই তাঁরও কিছু অংশীদারি আছে। মুস্তাফা বললেন, ‘‘ব্যবসাটাই বড় কথা নয়। দু’দেশের মানুষ যে এক সঙ্গে বৈধ ভাবে বিকিকিনি করতে পারবেন, সীমান্তের এই এলাকায় যে দেখা করতে পারবেন, সেটাই বড় কথা। দেখবেন, পরবর্তী কালে এই হাটটা একটি মিলন মেলায় পরিণত হবে।’’ মুস্তাফার আশা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের পর এ বার বহু অমীমাংসিত সমস্যাই সমাধান হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের আর এক বিক্রেতা মহম্মদ জসিমউদ্দিন মনে করেন, দু’দেশের সীমান্ত এলাকার মানুষেরই ভাল হবে এই হাটে। চোরাচালানও কমবে। সত্যিই তো তাই। বেআইনি পথে ছাড়া ত্রিপুরায় আর ইলিশ ঢোকে কই! আর সেটা কেনারই বা সাধ্য রয়েছে ক’জনের।
তাই সুপারহিট নোনা ইলিশ। দামও ছুঁল সে প্রায় ৬০০ টাকা কেজি।