ভাঙন গুড়গাঁওয়ের রাস্তায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় একেই ‘খট্টর ফল্স’ বলছেন কেউ কেউ।
দু’দিন ধরে প্রবল বৃষ্টি। তার জেরে প্রবল যানজট। অবস্থা সামলাতে জারি করতে হয়েছে ১৪৪ ধারা। আর সেই পরিস্থিতি নিয়ে পরিচিত ঢঙে চাপানউতোর শুরু করেছেন রাজনীতিকরা।
এমন চিত্রই দেখল দিল্লির লাগোয়া শহর গুড়গাঁও।
গত কাল থেকেই বৃষ্টির জেরে কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে ৮ নম্বর জাতীয় সড়ক। দিল্লি-জয়পুরের সংযোগকারী এই সড়কের দু’পাশেই দেশের অন্যতম শিল্প হাব হিসেবে পরিচিত গুড়গাঁও। সড়কে প্রায় ছিল হাঁটুজল। গাড়ি ছেড়়ে হেঁটে ফিরেছেন অনেকে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে হিরো হন্ডা চক এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়েছিল প্রশাসনকে। সাধারণত গোলমাল ঠেকাতেই বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ করার এই ধারা ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রে যানজটের ঠেলা কমাতে ধারাটিকে কাজে লাগিয়েছিল প্রশাসন। আজ সন্ধ্যা থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। তুলে নেওয়া হয়েছে ১৪৪ ধারাও।
গুড়গাঁওয়ের অফিসে এক দিন ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিল অনেক বহুজাতিক সংস্থা। কারণ সংস্থার যে সব গাড়ি কর্মীদের নিয়ে আসে ও পৌঁছে দেয় সেগুলিও যানজটে আটকে ছিল। বন্ধ ছিল স্কুল।
আজ সকালেই এ নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর। পরে হেলিকপ্টারে পরিস্থিতি দেখতে চাইলেও খারাপ আবহাওয়ার জন্য সেই পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়।
কিন্তু কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হলো?
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, বৃষ্টি হলে গুড়গাঁওয়ের রাস্তায় যানজটে ভোগান্তি নতুন কিছু নয়। কিন্তু এ বার অবস্থা একেবারে হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ আর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে জেরবার হয়েছেন খট্টর। কেউ বলছেন আমস্টারডামে শহরের মধ্যে নৌকো চাপা যায়। এখানেও এখন বিনা খরচে সেই অ্যাডভেঞ্চার করা যাচ্ছে।
আবার কেউ ভাঙা রাস্তার এক জায়গায় হুড়হুড় করে জল পড়ার ছবি দিয়ে তার নাম দিয়েছেন ‘খট্টর ফলস’।
খট্টর অবশ্য পরিস্থিতির জন্য দুষছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালকে। তাঁর সরকারের একটি সমালোচনাকে রি-টুইট করে তিনি লিখেছেন, ‘‘এই প্রশ্নটা অরবিন্দ কেজরীবালজিকে করলে ভাল হয়। কারণ, দিল্লি সরকারের সহযোগিতা না পাওয়াতেই এই অবস্থা।’’
খট্টরের দাবি, নজফগড় নালার মাধ্যমে গুড়গাঁও এলাকার বিপুল পরিমাণ জল দিল্লি হয়ে যমুনায় বেরিয়ে যায়। কিন্তু কেজরীবাল সরকার সেই নালা আংশিক ভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে জলে ভেসে গিয়েছিল গুড়গাঁও।
খট্টরের কথার সরাসরি জবাব দেননি কেজরীবাল। তবে টুইটারে হুল ফুটিয়ে লিখেছেন, ‘‘এটাই বিজেপির সুশাসনের চিত্র।’’ দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়ার খোঁচা, ‘‘গুড়গাঁওয়ের নাম গুরুগ্রাম দিলেই উন্নয়ন হয় না।’’
কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর বক্তব্য, ‘‘বিজেপি গুড়গাঁও নিয়ে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাইছে। এ দিকে যানজটে হয়তো অ্যাম্বুল্যান্স পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রয়েছে।’’
মোক্ষম রসিকতাটা করেছেন করেছেন আর এক জন। টুইটারে ব্যঙ্গ করে জানিয়েছেন, নরেন্দ্র মোদী সরকারের হাতে খুন হওয়ার ভয় পাচ্ছিলেন কেজরীবাল। আপাতত সে ভয় নেই। কারণ, মোদীর শার্পশুটাররা সব গুড়গাঁওয়ের যানজটে আটকে গিয়েছে।
বেহাল বেঙ্গালুরু
প্রবল বৃষ্টিতে বেহাল অবস্থা বেঙ্গালুরুর। ভেসে গিয়েছে কোদিচিক্কানাহাল্লি ও বিলেকাহাল্লির মতো নীচু এলাকা। উদ্ধারের জন্য নৌকো নামিয়েছে দমকল। ইলেকট্রনিক্স সিটি, আইটি হাবে যাওয়ার পথ-সহ বিভিন্ন রাস্তায় লম্বা গাড়ির লাইন। সকাল থেকেই সাহায্য চেয়ে নাগরিকদের ফোন সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন বেঙ্গালুরু পুরসভার কর্মীরা। পরিকাঠামোর অভাবে সমস্যা বেড়েছে বলে মেনে নিয়েছেন কর্নাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বর। তবে প্রশাসন পরিস্থিতির সামলা দিতে সব রকমের ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।