রুজির দাবিতে রুদ্ধ ট্রেন

ক্ষতিগ্রস্তদের আওয়াজ ক্রমশ চড়ছে কৃষ্ণনগর এলাকায়। বাড়ছে ক্ষোভ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

অমৃতসর শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৪১
Share:

প্রতিবাদ: উপযুক্ত চিকিৎসার দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন রেল দুর্ঘটনায় আহতদের পরিজনেরা। ছবি: পিটিআই।

সময় যত গড়াচ্ছে তত ক্ষোভ বাড়ছে অমৃতসরে।

Advertisement

দশেরায় দুর্ঘটনার পরে গত কাল এই সেকশনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখেছিল রেল। আর আজ ট্রেন চলাচল রুখে দিতে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে লাইনে বসে পড়েন স্থানীয় মানুষেরা। যে ভিড়ে উপস্থিত ছিলেন স্বর্ণকুমারী দেবী। দশেরায় রাবণ সাজা, মৃত দলবীরের মা। গত কালই সরকারি চাকরির আর্তি জানাচ্ছিলেন জনে-জনে। আজ আর আর্তি নয়। পরিবারের এক জনের জন্য সরকারি চাকরির দাবিতে রীতিমতো সরব তিনি। বললেন, ‘‘চাকরি না দিলে দলবীরের বাচ্চাটিকে মানুষ করব কী করে। দলবীরই তো পরিবারের মূল রোজগেরে ছিল।’’

শুধু তিনিই নন। ক্ষতিগ্রস্তদের আওয়াজ ক্রমশ চড়ছে কৃষ্ণনগর এলাকায়। বাড়ছে ক্ষোভ। অনাগত ভবিষ্যতের চিন্তা গ্রাস করছে পরিবারগুলিকে। আর তাই দুর্ঘটনায় মৃত পরিবারের এক জনকে সরকারি চাকরি দেওয়া ও ক্ষতিপূরণের অঙ্ক বাড়ানোর দাবিতে একজোট হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয়েরাও। কৃষ্ণনগরের জোড়া ফটক এলাকায় এক প্রান্তে পঞ্জাবি সমাজের ঘর। তাদের দোতলা পাকা বাড়ি,
ডিশ অ্যান্টেনা, মোটরসাইকেলের উপস্থিতি সম্পন্নতার ছবি তুলে ধরছে। লাইনের গা-ঘেঁষে বাড়ি হলেও, ছাদ থেকে রাবণ পোড়ানো দেখায় তুলনামূলক ভাবে ওই এলাকার ঘরগুলিতে ক্ষয়ক্ষতি নেই বললেই চলে। কিন্তু গুরুদ্বারের সীমানা পার হয়ে জোড়া ফটক এলাকা শুরু হতেই বৈপরীত্য স্পষ্ট। এক কামরার ঘুপচি ঘর, ঘিঞ্জি গলি, নোংরার ঢিবির মধ্যেই সহাবস্থান ভিন্ রাজ্য থেকে আসা মানুষগুলির। মূলত, উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে বাড়ি এঁদের। পেশা মজদুরি। কেউ একা থাকেন। কেউ আবার পরিবার নিয়ে। এখানেই পাশাপাশি দুই বাড়ি থেকে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন সুরজ ও বিনোদ। দু’জনের বাড়ি উত্তরপ্রদেশে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে পঞ্জাবেই আছে দুই পরিবার। দু’টি পরিবারই এক ঝটকায় হারিয়েছে পরিবারের একমাত্র রোজগেরেকে। বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাবেন জানেন না দুই গৃহবধূ। প্রতিবেশী নীলমণির কথায়, ‘‘সরকারি চাকরি দিতে হবে। না হলে পরিবারগুলি ভেসে যাবে।’’ নীলমণির সুরেই এখন জোট বাঁধছে সব হারানো পরিবারগুলি।

Advertisement

কিন্তু নতুন দাবি-দাওয়া নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে পঞ্জাব সরকার। ক্ষুব্ধ জনতা আজ তাই সকালে হামলা চালায় লাইনের ওপারে থাকা দশেরা অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা সৌরভ মিঠ্‌ঠুর বাড়িতে। ঘটনার পর থেকেই বাড়ি তালাবন্ধ। উধাও পরিবার। তাই আজকের হামলায় মিঠ্‌ঠু পরিবারের কারও চোট না লাগালেও ভাঙচুর হয় মিঠ্‌ঠুর বাড়ি। হামলার মুখে পড়ে পুলিশ। উত্তেজিত জনতার পাথর বৃষ্টির মুখে প্রথমে পুলিশ বাহিনী পিছু হটলেও, পরে বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে এসে উত্তেজিত জনতাকে লাইন থেকে সরিয়ে দেয়।

রেল চাইছে সোমবার থেকে রুটিন মেনে ট্রেন পরিষেবা চালু করে দিতে। সেই মতো পুলিশের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। অন্য দিকে একজোট ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবার তথা স্থানীয়রা। তাঁদের সাফ কথা, সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি না পেলে ট্রেন চলতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে অনির্দিষ্টকাল। এখন সেটাই পাখির চোখ করেছেন সব হারানো পরিবারগুলি।

রাবণ দহন বন্ধের আর্জি শঙ্করাচার্যের

দশেরায় রেল দুর্ঘটনার দায় নিয়ে চূড়ান্ত ঠেলাঠেলির মধ্যে রাবণ দহনের বিরুদ্ধেই তোপ দাগলেন পুরীর পীঠাধীশ্বর শঙ্করাচার্য স্বামী অধোক্ষজানন্দ দেবতীর্থ। মথুরায় রবিবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের প্রতি আমার আর্জি, দশেরার অঙ্গ হিসেবে রাবণের কুশপুতুল পোড়ানোর চল বন্ধ করতে আদেশ জারি করুন।’’ অধোক্ষজানন্দের যুক্তি, হিন্দু মতে মৃতের শেষকৃত্য এক বারই হয়। পুরাণ বলে, রামের উপস্থিতিতে রাবণের শেষকৃত্য করেছিলেন বিভীষণ। এর পরেও রাবণ দাহ করাটা মূল হিন্দু সংস্কৃতির বিরোধী। তা ছাড়া, এতে দূষণ ছড়ায়। এমনকি অমৃতসরের জোড়া ফটকের মতো দুঃখজনক ঘটনাও ঘটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন