কর্মীদের ত্রুটিতেই ক্রেন উল্টে স্তব্ধ ট্রেন

যান্ত্রিক বিভ্রাট নয়। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মোগলসরাই ও ইলাহাবাদের মধ্যে ক্রেন উল্টে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে ট্রেনের জট পাকিয়ে যাওয়ার জন্য রেলকর্মীদের ভুলত্রুটিই দায়ী বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে করছেন রেলকর্তারা। ওই ত্রুটি কেন, কেনই বা আগেভাগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি— তা খতিয়ে দেখতে বিশেষ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রেল বোর্ড।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৬ ০৮:৫৯
Share:

যান্ত্রিক বিভ্রাট নয়। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মোগলসরাই ও ইলাহাবাদের মধ্যে ক্রেন উল্টে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে ট্রেনের জট পাকিয়ে যাওয়ার জন্য রেলকর্মীদের ভুলত্রুটিই দায়ী বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে করছেন রেলকর্তারা। ওই ত্রুটি কেন, কেনই বা আগেভাগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি— তা খতিয়ে দেখতে বিশেষ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রেল বোর্ড। উত্তর-মধ্য রেলের কর্তারা তদন্ত শুরুও করে দিয়েছেন।

Advertisement

ঠিক কী ঘটেছিল ওই দিন?

রেল সূত্রের খবর, মোগলসরাই থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে মির্জাপুরের বিন্ধ্যাচল এলাকায় জিগনা ও গাইপুর স্টেশনের মাঝখানে একটি রেল ওভারব্রিজের কাজ চলছিল। সেই কাজের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বড় বড় ক্রেন। কিন্তু উড়ালপুলের কংক্রিটের স্ল্যাবের যে-ওজন, তার চেয়ে ক্রেনের ক্ষমতা ছিল কম। স্ল্যাবের ওজন আগেভাগে যাচাই না-করেই ওই ক্রেনে লাগিয়ে দেওয়া হয়। তাই স্ল্যাব তুলতে গিয়ে মাঝপথে ক্রেনটিই লাইন থেকে এক দিকে উল্টে যায়। ক্রেনের সামনে থাকা লম্বা শুঁড়টি লাইনের ওভারহেডে লেগে মোগলসরাই-নয়াদিল্লি মেন লাইনের একটি বিরাট অংশের তারও যায় ছিঁড়ে। বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্ন স্টেশনে পরপর দাঁড়িয়ে যায় ট্রেন।

Advertisement

সেই দুর্ঘটনার জেরে ওই দিন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দিল্লির ট্রেন যোগাযোগ পাঁচ ঘণ্টারও বেশি বন্ধ ছিল। দীর্ঘ ক্ষণ মাঝপথে আটকে থেকে চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়েন পূর্ব রেল, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল এবং পূর্ব-মধ্য রেলের যাত্রীরা। এমনিতেই মোগলসরাই থেকে ইলাহাবাদ পর্যন্ত লাইনে নিত্যদিনই ট্রেনের জট লেগে থাকে। তার উপরে ওই দুর্ঘটনায় ট্রেনের জট ব্যাপক আকার নেওয়ায় হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে ছাড়া দিল্লিমুখী দু’টি রাজধানী এক্সপ্রেস-সহ অসংখ্য ট্রেনকে মাঝপথে আটকে দিতে হয়। বিপাকে পড়েন কলকাতা-সহ বাংলার অসংখ্য যাত্রীও।

মেরামতির পরে ওই লাইনে ফের ট্রেন চলাচল শুরু হলেও দুর্ঘটনা নিয়ে রেলের অন্দরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। রেলকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, ওই কাজে রেলকর্মীদের সঙ্গে রেলের ইঞ্জিনিয়ারেরাও তো ছিলেন। তবু কী ভাবে কম ক্ষমতার ক্রেন দিয়ে বিপুল ওজনের স্ল্যাব তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, বোঝা যাচ্ছে না। সমস্যার দায় এড়াতে পারেন না ইঞ্জিনিয়ারেরাও।

রেলের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পেশাগত দক্ষতা সব সময়েই প্রশংসা পেয়ে থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা রেলের ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বছর দেড়েক আগে গাজিয়াবাদের কাছে রেললাইনের পাশে কাজ চলার সময় একটি ক্রেন আচমকা ঘোরানোর চেষ্টা হয়। সেটি একটি ছুটন্ত এক্সপ্রেস ট্রেনের গায়ে লাগে। বেশ কয়েক জন যাত্রীর মৃত্যু হয়। সেই সময়েও ঘটনাস্থলে থাকা রেলকর্মীদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন