দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হচ্ছে বঙ্গ থেকে আসা তৃণমূল নেতাদের

নেহাত মন্দ বলেননি রসিক তরুণ! বাংলা থেকে এক ডজনেরও বেশি নেতা-মন্ত্রী যে ত্রিপুরায় তৃণমূলের ভোট-প্রচারে এসেছেন, তাঁদের দেখা পাওয়াই ভার। কোথায় যাচ্ছেন?

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

বক্সানগর শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:১৭
Share:

ত্রিপুরায় তৃণমূলের হোর্ডিং। নিজস্ব চিত্র।

মস্করা করছিলেন বক্সানগরের এক পুলিশকর্মী। ‘‘এখানে বিজেপি স্লোগান দিয়েছে, চলো পাল্টাই। আপনাদের তৃণমূলের স্লোগানটা মনে হচ্ছে, চলো পালাই!’’

Advertisement

নেহাত মন্দ বলেননি রসিক তরুণ! বাংলা থেকে এক ডজনেরও বেশি নেতা-মন্ত্রী যে ত্রিপুরায় তৃণমূলের ভোট-প্রচারে এসেছেন, তাঁদের দেখা পাওয়াই ভার। কোথায় যাচ্ছেন? কারও উত্তর, এই তো ধর্মনগর। কেউ ‘আমি তো কৈলাশহর’। আর বেশির ভাগের মুখে মাতাবাড়ি। বিজেপি-র ঝাঁপিয়ে পড়ার কল্যাণে ত্রিপুরার ভোট এ বার গোটা দেশের সংবাদমাধ্যমের নজরবন্দি। সেই সময়ে তৃণমূলের নেতারা প্রচারসূচি বেছে নিয়েছেন রাজধানী শহর থেকে দূরে দূরে! ত্রিপুরায় তৃণমূলের জন্য অন্তত যে ভোট-পূর্বাভাস, তাতে অদ্দূর ধাওয়া করে নেতাদের সভার চেহারা দেখতে তেমন কেউ হাজির হবে না। কে বলবে, বাংলায় এই দলের নেত্রীরই প্রশাসনিক বা দলের কোর কমিটির বৈঠক হয় সংবাদমাধ্যমে টাটকা দেখিয়ে!

ধরা যাক, সাংসদ মানস ভুঁইয়া। প্রচার সেরে ফিরলেন রাত ১টা ২০! কোথায় ছিলেন? মানসবাবুর জবাব, ‘‘কমলাসাগর আর মাতাবাড়িতে প্রচারে।’’ মধ্যরাতে তৃণমূলের জন্য ত্রিপুরাবাসীর অতন্দ্র জাগরণের কথা জানাই যেত না মানসবাবু, অজয় ঘোষেরা না থাকলে! ধরা যাক, মন্ত্রী শশী পাঁজা। কোথায় যাবেন? তিনি জানালেন, একটু মন্দির ঘুরে তার পর দলের কাজে। ঘটনা হল, উদয়পুরের ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির উত্তর-পূর্বের জাগ্রত পীঠস্থান। সেখানে পুজো দিতে গিয়ে সঙ্গে প্রচার কর্মসূচি নিয়ে নিলে রথ দেখা, কলা বেচা দুই-ই হয়। মাতাবাড়ির তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী তাই সব চেয়ে বেশি ‘ভিআইপি’ সহায়তা পাচ্ছেন!

Advertisement

মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ সৌগত রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সুখেন্দুশেখর রায়, শতাব্দী রায়, বিধায়ক সমীর চক্রবর্তী, প্রবীর ঘোষাল, তারকা দেব ও সোহম— প্রচারে আসা নেতাদের তালিকা লম্বা। সকলেই ছড়িয়ে গিয়েছেন জনারণ্যে! হোটেলগুলোয় প্রাতরাশের টেবিল যখন মিলনমেলা, তৃণমূলের নেতারা তখন দুয়ার এঁটে। তাঁরা গভীর রাতে শেষ করেন, প্রচার শুরুও হয় দেরিতে।

বিলোনিয়ার তৃণমূল প্রার্থী প্রশান্ত সেন বলছিলেন, ‘‘নেত্রী বলেছেন, আমাদের গরিব দল। কষ্ট করে লড়ছি।’’ রাজ্য নেতা দুলাল দাসের বক্তব্য, ‘‘এখানে তো তৃণমূলের নতুন কমিটি হয়নি। সব্যসাচী দত্তই যা দেখার, দেখছেন।’’ বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচীকে আবার কে দেখে, ঠিক নেই! বিধাননগরে টাকা তোলার অভিযোগের রেশ ত্রিপুরা পর্যন্ত পৌঁছেছে। তার উপরে প্রার্থীদের খরচ জোগানোর নানা ঝক্কি। সব্যসাচী অবশ্য বলছেন, ‘‘আমাদের ২৪ এবং আইএনপিটি-এনসিটি’র আসন ধরে ৪৩টা কেন্দ্রেই আমরা ভাগাভাগি করে প্রচার করছি।’’ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী আবার সব্যসাচীকে জানিয়েছেন, শরীরটা খারাপ তাই আসছেন না।

প্রচারে তৃণমূল নেতারা বাংলায় ৩৪ বছরের বাম জমানার পতন ঘটিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কাহিনি বলছেন। অঙ্কটা হল, বাম-বিরোধী ভোটে তৃণমূল যতটুকুই ভাগ বসাবে, বিজেপি-র রাস্তায় তত কাঁটা পড়বে। যে কারণে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ তাদের কটাক্ষ করেছেন ‘ভোট-কাটুয়া পার্টি’ বলে!

আর আছেন মুকুল রায়। তাঁর হাতে গড়া তৃণমূলের সংগঠন মুকুলেই বিনাশের পরে বিজেপি নেতা এখন দিন গুনছেন নব্য তৃণমূলের জামানত খোয়ানোর!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন