ছেলে বদল! দুই মা কোলছাড়া করছেন না

ইতিমধ্যে দু’বছর সাত মাস বয়স হয়েছে দুই সন্তানের। সন্দেহ সত্যি হওয়ার পরে সন্তানস্নেহে বড় করা কোলের ছেলেদের প্রকৃত মায়ের হাতে তুলে দিতেও মন মানছে না সালেমা ও শেফালির।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪০
Share:

বন্ধন: সাহাবুদ্দিনের কোলে শেফালি-অনিলের সন্তান, শেফালির কোলে সাহাবুদ্দিন-সালেমার ছেলে।—নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতাল থেকে নবজাতককে নিয়ে বাড়ি ফেরার হপ্তাখানেক পর থেকেই মা সালেমা পরভিনের সন্দেহ হয়, পেটের সন্তানই হাতে দিয়েছে তো হাসপাতাল? বয়স বাড়তেই বাচ্চার মুখাবয়বে ফুটে উঠতে থাকে উপজাতীয় ছাপ। একই দিনে হাসপাতালে ভর্তি বড়ো মহিলা শেফালি বড়ো ও তাঁর স্বামী অনিল বড়োর মুখাবয়ব উপজাতি ধাঁচের হলেও শিশুকে দেখতে অন্য রকম হওয়ায় তাঁদের মনেও সন্দেহ দানা বেঁধেছিল। শেষ পর্যন্ত ডিএনএ পরীক্ষা। তাতেই জানা গেল, সালেমাদের সন্তানকে মানুষ করছেন বড়োরা আর শেফালির সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ, মাতৃস্নেহে বড় করেছেন সালেমা পরভিন।

Advertisement

ইতিমধ্যে দু’বছর সাত মাস বয়স হয়েছে দুই সন্তানের। সন্দেহ সত্যি হওয়ার পরে সন্তানস্নেহে বড় করা কোলের ছেলেদের প্রকৃত মায়ের হাতে তুলে দিতেও মন মানছে না সালেমা ও শেফালির। প্রথমে দুই পরিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, আদালত যা বলবে সেটাই হবে। কিন্তু এখন আলোচনার পরে দুই মা জানিয়েছেন, হঠাৎ করে পরিবেশ বদল হলে শিশুদের মনে প্রভাব পড়বে। তাই সালেমার সন্তান শেফালির কোলে, শেফালির ছেলে সালেমার ঘরেই বড় হবে। সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ক্ষত নিয়ে ঘর করা বড়োভূমিতে এ এক অনন্য সম্প্রীতির বন্ধন!

২০১৩ সালে মঙ্গলদৈ সিভিল হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত নিয়ে এড্‌সে আক্রান্ত হয়েছিলেন অনেকে। এ বার ওই হাসপাতালেই বাচ্চা বদলে দিলেন নার্সরা।

Advertisement

কী করে বদলে গেল নবজাতক?

আরও পড়ুন: দিল্লির ভাষায় কথা বলছেন ট্রাম্প: তোপ ক্ষিপ্ত পাকিস্তানের

দরং জেলার শ্যামপুর বদলিচরের বাসিন্দা সাহাবুদ্দিন জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের ১১ মার্চ তাঁর স্ত্রী সালেমা ও মেনাপাড়া বেজরপাড়ার বাসিন্দা অনিল বড়োর স্ত্রী শেফালিদেবীকে একই সঙ্গে প্রসূতিকক্ষে নেওয়া হয়। এক সপ্তাহ পরে স্ত্রী-নবজাতককে নিয়ে যে যাঁর বাড়ি ফিরে যান। একদিন বাড়ি ফিরে সাহাবুদ্দিন দেখেন স্ত্রী কাঁদছেন। সন্দেহ, বাচ্চা বদলাবদলি হয়েছে। পরিবারের কাউকে এ কথা বলতে বারণ করেন সাহাবুদ্দিন। কিন্তু স্ত্রীর সন্দেহ দূর হয়নি। সাহাবুদ্দিন বোঝান, শিশুকে নিয়ে এমন সন্দেহ করলে আল্লা পাপ দেবেন। বাচ্চার দু’বছর বয়স হলে দেখা যায় তার চেহারায় মঙ্গোলীয় ধাঁচ স্পষ্ট। আড়াই বছর বয়স হলে তাঁরা পুলিশের দ্বারস্থ হন। পুলিশ খোঁজখবর নিয়ে অনিল বড়োর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বাবা-মা ও শিশুদের ডিএনএ-র নমুনা হায়দরাবাদে পাঠানো হয়। দেখা যায় সন্দেহই সত্যি। শেফালিদেবী বলেন, ‘‘নার্সরা আমার হাতে যে বাচ্চা দিয়েছে তাকেই নিয়েছি। টিপছাপ দিয়ে ফর্ম ফিল আপ করিয়ে নিয়েছিল ওরা।’’

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছেও অভিযোগ দায়ের করেছে দুই পরিবার। পুলিশও ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি ও ৪২০ ধারায় মামলা রুজু করেছে। জেলাশাসক অশোককুমার বর্মণ জানিয়েছেন, এ নিয়ে আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। যদি আদালত প্রকৃত মায়ের কাছে শিশু দু’টিকে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়, এবং মায়েরা সন্তানদের ছাড়তে রাজি না হন, তখন দত্তক নেওয়ার আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন