শিশুখাদক গুজবে মণিপুরের সাইকুল গ্রামে মার খাওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন দুই যুবক। নিজস্ব চিত্র
এ বার আর ছেলেধরা নয়, ছেলে খাওয়া! মণিপুরের সেনাপতি জেলায় সাইকুল গ্রামের বাসিন্দারা অসমের দুই যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে ধরে। গ্রামবাসীদের দাবি, শিশুদের অপহরণ করে খেয়ে ফেলত ওই দু'জন! বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁদের। পরে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে। দুই যুবকই মানসিক ভারসাম্যহীন বলে পুলিশ জানায়।
মণিপুরের বিভিন্ন জেলায় ছেলেধরার গুজব ব্যাপক ছড়িয়েছে। পুলিশ জানায়, সাইকুল ও সাগোলবাঁধে দুই অজ্ঞাতপরিচয় যুবককে গ্রামবাসীরা আটক করেন। মূলত ভাষার ফারাকে ওই দুজনের কথা বোঝা যায়নি। গ্রামবাসীদের দাবি ছিল, ওই দুই যুবক স্বীকার করেছে তারা ইতিমধ্যে ছ'টি শিশু অপহরণ করেছে। তাদের মেরে খেয়েও ফেলেছে।
ওই দলে আরও চার জন আছে। কাংপোকপির এসপি হেমন্ত পাণ্ডে জানান, ওই দুই যুবক স্থানীয় ভাষা জানেন না। তাঁদের মানসিক ভারসাম্যহীন। জটা-দাড়ির জন্য চেহারাও স্থানীয়দের তুলনায় ভিন্ন ধরনের ছিল। পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা চালাচ্ছে। আগামী কাল মনোবিদের সাহায্য নিয়ে তাঁদের কথা বোঝার চেষ্টা করা হবে।
পাণ্ডে বলেন, "ছেলেধরা গুজব থামাতে স্থানীয় সংগঠনগুলির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। শিশু খাওয়ার অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন।" অন্য দিকে, অসমের কার্বি আংলং জেলার ডকমকায় জলপ্রপাত দেখে ফেরার পথে ছেলেধরা সন্দেহে আটক করা গুয়াহাটির যুবক নীলোৎপল দাস ও অভিজিৎ নাথকে হত্যা করতে ব্যবহার করা হয়েছিল বাঁশ, রড, দা, টাঙি-সহ ১৩৭ রকম সামগ্রী। ২০০ থেকে আড়াইশো মানুষ মিলে মারধর করেছিলেন তাঁদের। অধিকাংশই ছিলেন মদ্যপ।
নীলোৎপল ও অভিজিৎকে ওই ঘটনার তদন্ত চালিয়ে রাজ্য সরকার আদালতে যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সেখানেই ওই তথ্য উঠে এসেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ৮ জুন রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ মারধর শুরু হয়। পুলিশের ১৫ জনের দল সাড়ে ৯টা নাগাদ এলাকায় পৌঁছালে তীব্র বাধার মুখে পড়ে। পাথর ছোঁড়া হয়। অভিজিতের গাড়িতে আগুন লাগানো হয়। স্থানীয় মানুষ পুলিশকে বিপথে পরিচালিত করতে জানায়, গাড়িতে চার-পাঁচজন ছিল। দু'জনকে ধরলেও বাকিরা পালিয়েছে। তাদের সন্ধান করতেও সময় নষ্ট হয়।